কোষ্ঠকাঠিন্য হল শিশুদের মধ্যে দেখতে পাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, এবং অনিয়মিত মলত্যাগ কিংবা শক্ত, শুকনো মল হলে এটি বোঝা যায়। এটির সবথেকে প্রচলিত কারণ হল তাড়াতাড়ি প্রস্রাব করার অভ্যেস করানো কিংবা খাদ্যাভ্যাসে পরিবির্তন করা এবং বেশিরভাগক্ষেত্রেই, এটি একটি সাময়িক পর্যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যেের সঙ্গে মোকাবিলা করার সবথেকে গোড়ার পদ্ধতিটি হল আপনার শিশুকে বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে এবং বেশি পরিমাণে জল খেতে উৎসাহিত করা। পরবর্তীকালে, যদি আপনার শিশুটির ডাক্তার অনুমোদন করেন, তবে তাকে জোলাপ দেওয়া যেতে পারে।

শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ নিম্নরূপ:

  1. অনিয়মিত মলত্যাগ
  2. শক্ত, শুষ্ক, এবং কষ্টদায়ক মলত্যাগ
  3. মলত্যাগ করার সময়ে যন্ত্রণা
  4. পেটের ব্যথা
  5. আপনার শিশুটির নিচের পোশাকে তরলের সামান্য চিহ্ন কিংবা আঠালো মল তার মলদ্বারে জমে থাকা মলের চিহ্নস্বরূপ।
  6. একটি শক্ত মলে রক্তের দাগ দেখা যাওয়া।

যদি আপনার শিশুটি মলত্যগের সময়ে হওয়া যন্ত্রণার কারণে ভয় পেয়ে যায়, তবে সে এটি এড়িয়ে চলতে চাইবে। যদি আপনি দেখেন যে মলকে ধরে রাখার জন্য আপনার শিশুটি তার পাগুলি একে ওপরের ওপর তুলে দিচ্ছে, নিতম্ব আঁকড়ে ধরছে, শরীরকে বেঁকিয়ে ফেলছে কিংবা মুখভঙ্গী করছে, তবে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যকে নির্দেশ করে।

নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য গুরুতর হয়ে উঠতে পারে কিংবা কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থার সংকেত হতে পারে। যদি আপনার শিশুটি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে, জ্বর হয়, ক্ষিদের অনুভূতি না থাকে, মলে রক্তের উপস্থিতি থাকে, তলপেট ফুলে ওঠে, ওজন কমে যায়, মলত্যাগের সময়ে যন্ত্রণা হয়, কিংবা মলদ্বার রুদ্ধ হয়ে যায় (যেখানে অন্ত্রের কিছু অংশ মলদ্বারে এসে যায়), তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কোষ্ঠকাঠিন্য তখনই হয় যখন পাকস্থলী দিয়ে মল খুব ধীরগতিতে এগোতে থাকে, যার কারণে এটি শক্ত ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে:

  • যদি আপনার শিশুটি অস্বস্তিবোধের কারণে কিংবা খেলা থেকে বিরতি না নেওয়ার জন্য মলত্যাগ চেপে রাখে।
  • যদি তারা যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না খায় এবং অনিয়মিত খাবার খায়
  • যদি আপনি তাদের প্রস্রাবের শিক্ষাকে খুব তাড়াতাড়ি শুরু করে দেরেন এবং আপনার শিশুটি বিরোধিতা করে।
  • যখন যে তরল খাবার থেকে শক্ত খাবারের দিকে পরিবর্তিত হচ্ছে।
  • যদি ভ্রমণের সময়ে আপনার শিশুটির রুটিনে কোনো পরিবর্তন আসে।
  • যদি তারা কোনো চিকিৎসার মধ্যে থাকে।
  • যদি তাদের গরুর দুধে তাদের অ্যালার্জি থাকা সত্ত্বেও তারা প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধজাত দ্রব্য খায়।
  • যদি বংশপরম্পরায় কোষ্ঠকাঠিন্যের ইতিহাস থাকে।

বাচ্চাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য তিনটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হল শরীরচর্চা, ফাইবার সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া। এই সবকিছু করা সত্ত্বেও, যদি আপনার শিশুটি কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করে, তবে কিছু বিশেষ খাবার আছে যা তাকে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন যে মলের মধ্যে ফাইবার, যা প্রচুর পরিমাণে যোগ করা হয়, এবং জল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

  1. নাশপাতি: নাশপাতি হল ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং জলের ভাণ্ডার যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরাম দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া, একটি নাশপাতি কেবল 60 কিলোক্যালোরি প্রদান করে।
  2. পপকর্ন: এক প্যাকেট চিপস খাওয়ার থেকে, আপনার শিশুর জন্য পপকর্ন একটি স্বাস্থ্য়‌কর বিকল্প হতে পারে, যতক্ষণ না এটি নুন এবং মাখন দিয়ে ভর্তি করা হয়। এর কারণ পপকর্ন খাদ্যোপযোগী ফাইবার সমৃদ্ধ।
  3. তরমুজ: এই ফলটির 92% জল, যা ভালোভাবে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে। এটি নিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এ, বি, সি এর মতো ভিটামিন ও লাইসোপেন সমৃদ্ধও বটে।
  4. ওটস: ওটমিল হচ্ছে ব্রেকফাস্টের জন্য আদর্শ বিকল্প যেহেতু এটি আপনার শিশুকে তৃপ্তি প্রদান করবে। এটিতে প্রচুর ফাইবার আছে এবং এটি জলও শোষণ করতে পারে, এইভাবে এটি হজমে সাহায্য করে।
  5. আমন্ড: আমন্ড যেভাবে থাকে সেইভাবেই খাওয়া যেতে পারে, ওথবা ডেজার্টের ওপর ছড়িয়ে কিংবা মিল্কশেকে গুলে খাওয়া যায়। আপনি সেগুলিকে দইকিংবা চিজের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন, অথবা আপনার পাই কিংবা পেস্ট্রিতে ভর্তি করার জন্য সেগুলিকে পেষাই করেও নিতে পারেন।
  6. আলু: সেদ্ধ এবং ঠান্ডা করা আলুতে ফাইবার এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ থেকে যা হজমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং উপকারী ব্যাক্টেরিয়া তৈরির উদ্দেশ্যে বৃহদান্ত্রে থেকে যায়।
  7. মসুর ডাল: মসুর ডাল সহকারী খাবার হিসেবে সহজেই খাওয়া যেতে পারে কিংবা আপনার স্যালাডে যোগ করা যেতে পারে। এগুলির মধ্যে প্রচুর প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে। আপনি মসুর ডালের পরোটা কিংবা মসুর ডালের স্যুপও বানাতে পারেন
  8. দই: দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া আপনার অন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। লাইভ কালচার কিংবা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে আরাম পেতে সাহায্য করে।
  9. আপেল: একটি আপেল প্রায় 3.5 গ্রাম ফাইবার প্রদান করতে পারে। এর ওপর পিনাট বাটার যোগ করলে এটির ফাইবারের পরিমাণই কেবল বাড়ে না, বরং এটি বাচ্চাদের জন্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
  10. গাজর: দারুচিনি দিয়ে গাজর রান্না করে দিলে কিংবা আপনার বাচ্চাকে সেটি সবজি হিসেবে সসের সঙ্গে দিলে তাতে শুধুমাত্র সুস্বাদু স্ন্যাকই তৈরি হয় তা নয়, বরং আপনার বাচ্চার খাবারে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
  11. কলা: কলার প্রতিটি ফলে 3.1 গ্রাম ফাইবার থাকে এবং এক্ষেত্রে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত কমাতে আকটি দুর্দান্ত স্ন্যাক।
  12. গোটা শস্যের রুটি: একটি পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ কিংবা সবজি দিয়ে বানানো স্যান্ডউইচ সপ্তাহ শেষে আপনার শিশুর জন্য লাঞ্চের একটি যথাযথ বিকল্প এবং তাদের প্রতিদিনের খাবারে ফাইবারও যোগ করে।
  13. গোটা শস্যের পাস্তা: গোটা শস্যের পাস্তায় প্রতি কাপে 2 গ্রাম ফাইবার থাকে।
  14. মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু সুস্বাদু এবং শুধুমাত্র সেদ্ধ করেই স্ন্যাক্স হিসেবে পরিবেশন করা যায়, যেহেতু প্রতিটির মধ্যে 3.8 গ্রাম ফাইবার থাকে।

ফাইবারের গুরুত্ব

ফাইবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে এটি মসৃণভাবে হজমকেও নিশ্চিত করে। যথেষ্ট জল সহযোগে খাওয়া হলে, ফাইবার মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এটি আপনার বাচ্চাকে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে কিংবা সামলাতে সাহায্য করে। 1 থেকে 18 বছরের শিশুদের প্রতিদিন 14 থেকে 18 গ্রাম ফাইবার দেওয়া উচিৎ। যদিও, মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত ফাইবার পেটের যন্ত্রণা এবং ডায়েরিয়ার কারণ হতে পারে। একটি সাম্যতা বজায় রাখতে হবে।

এছাড়াও, ব্রেকফাস্ট হচ্ছে দিনের সবথে গুরুত্বপূর্ণ আহার যেহেতু অন্ত্রের সংকোচনমূলক কাজকর্ম সকালেই সবথেকে বেশি হয়। সুতরাং, ফাইবার সম্ম্রিদ্ধ খাবার খায়ার ফলে আপনার বাচ্চাটির টয়েলেট যাওয়ার ব্যাপারে স্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হবে। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, আপনার শিশুর জন্য টয়েলেটের একটি স্বাস্থ্যকর রুটিন তৈরি করুন। তাদের টয়েলেট ব্যবহার করানোর জন্য তাদের পাশে একটি বিশেষ সময়ে বসুন। যদি আপনার শিশুটির কোনো খাবার সহ্য না হয়, সেগুলি তাদের প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন। খেলার সময়ে আপনার শিশুকে তার প্রাকৃতিক চাহিদার দিকে মনোযোগ দিতে মনে করিয়ে দিন।