লেবু বা কমলালেবু খেলে আপনার শিশুর স্বাদকোরক উদ্দীপিত ও সতেজ হওয়ার পাশাপাশি সে আরও ভাল ইমিউনিটির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন C পেতে সক্ষম হয়। ভিটামিন C (অ্যাস্কর্বিক অ্যাসিড) এটি একটি জলে দ্রবণীয় নিউট্রিয়েন্ট, যা আমাদের শরীরে সংশ্লেষিত হতে পারে না এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে সুগঠিত করতে মৌখিকভাবে গ্রহণ করতে হয়। শিশুদের জন্য ভিটামিন C শরীরের টিস্যু গঠন ও মেরামত, ক্ষত সারানো, হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎস থেকে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে উপকারী। যদিও, এটি বায়ুমণ্ডলীয় জারণের কারণে ধ্বংস হওয়ার প্রবণতা দেখায়, তাই, কাটা ফল এবং সবজিগুলি দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা ছাড়া রেখে দেওয়া উচিত নয়।

শিশুদের উপযোগী সুপারিশ

বয়স ও লিঙ্গভেদে জীবনের সব পর্যায়ে, বিভিন্ন মাত্রায় ভিটামিন C-এর প্রয়োজন হয়। শিশু ও কিশোরদের জন্য সুপারিশকৃত খাবার খাওয়ার পরিমাণ সাধারণত প্রতিদিন প্রায় 40 মিলিগ্রাম।

ভিটামিন C-র উৎস

আপনি জেনে খুশি হবেন যে, সমস্ত ফল ও সবজি ভিটামিন C-এর প্রাকৃতিক উৎস। নীচে কয়েকটি ফুড গ্রুপের কথা উল্লেখ করা হল:-

  • কমলালেবু, লেবু, আঙুর, পেয়ারা, আম, গুজবেরি, স্ট্রবেরি, রেড ও গ্রিন বেল পেপার, কিউই-র মতো সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C রয়েছে।
  • অন্যান্য ফল এবং সবজি, যেগুলি এই ভিটামিন সরবরাহ করে তার মধ্যে ক্যান্টালুপ, টমেটো এবং ব্রকোলি অন্তর্ভুক্ত।

যেহেতু ভিটামিন C জলে দ্রবণীয়, তাই রান্না এবং দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের কারণে এর উপাদান ও কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এই নিউট্রিয়েন্টটি ফিরিয়ে আনতে রান্নায় স্টিমিং বা মাইক্রোওয়াভিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা ভাল।

শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন C-এর গুরুত্ব

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মধ্যে সংক্রমণের প্রবণতা বেশি থাকে। তাই তাদের নিয়মিত ভিটামিন C খাওয়া জরুরি। ভিটামিন C খাওয়ার উপকারিতাগুলো নীচে তুলে ধরা হল:-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: - শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই ভিটামিনটির প্রয়োজন হয় এবং মূলত ঠান্ডা-জ্বরের মতো আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর: -ভিটামিন C-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণাগুণ, যা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকে গঠিত যৌগ মুক্ত-র‍্যাডিকেলের ক্ষতির বিরুদ্ধে এবং সেইসাথে ধোঁয়া, বায়ুদূষণ ও অতিবেগুনী বিকিরণের মতো ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শে আসার বিরুদ্ধে আপনার শিশুর কোষগুলিকে রক্ষা করে।
  • কোলাজেন তৈরি ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে: - যেহেতু শিশুদের কাটা ও আঘাতের প্রবণতা বেশি থাকে, তাই নিয়মিত ভিটামিন C খাওয়া হাড়, কার্টিলারি, পেশী এবং রক্তনালীতে কোলাজেন গঠন করতে সাহায্য করবে। এটি ছোটখাটো ক্ষতও সারিয়ে তুলতে পারে এবং আপনার শিশুদের মাড়ি ও দাঁতকে রক্ষা করতে পারে।
  • আয়রন শোষণে সাহায্য করে: -ভিটামিন C খাবার থেকে আয়রন শোষণের উন্নতি ঘটায়, যা শিশুদের দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন তৈরিতেও সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।

শিশুদের মধ্যে ভিটামিন C-এর অভাব

ভিটামিন C-র অভাবে স্কার্ভি হতে পারে, যার দরুন ত্বকে বাদামি দাগ দেখা যায়। অন্যান্য লক্ষণগুলি হল ত্বকের রুক্ষতা, মাড়ির পুরুত্ব এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে রক্তক্ষরণ। আপনার শিশু দুর্বলতা বা অস্বস্তি, আবেগগত পরিবর্তন, দুর্বল ক্ষত নিরাময়, হাড়ের ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া, শুষ্ক এবং খসখসে ত্বক, মাড়ির প্রদাহ এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের মতো সমস্যাতেও ভুগতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে স্কার্ভির কারণে জন্ডিস, স্নায়বিক সমস্যা এবং খিঁচুনির মতো সমস্যা হতে পারে।

উপসংহার

ভিটামিন C একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট, যা শরীরের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। সংক্রমণ শিশু ও সদ্যোজাত উভয়েরই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই ভিটামিন C খাওয়া জরুরি। এটি আপনার শিশুকে সর্দি, ফ্লু, জ্বর ও র‍্যাশের মতো সাধারণ রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনার এটাও জানা উচিত যে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভিটামিন C-র অভাব আরও বেশি ঘটে থাকে, যা অপুষ্টি, দুর্বল খাদ্যাভ্যাস এবং তীব্র ইন্টেস্টাইনাল ম্যালঅ্যাবজর্বশনের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও, শিশুদের মধ্যে বেছেবুছে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং তাই, আপনি যতটা সম্ভব তাদের খাদ্যতালিকায় টকজাতীয় ফল এবং সবজি অন্তর্ভুক্ত করবেন।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ ভিজিট করুন।