আপনার শিশুটি কি কখনো কখনো খাওয়া নিয়ে বায়না করে? খাওয়ানোর সময়ে আপনার শিশুটি কি খাবারের বিরোধিতা করে কিংবা আহারের আগে খাবারের বিষয়ে খামখেয়ালী হয়ে ওঠে? বেশ, এটি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক। এর অর্থ হল একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো নামক একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর, বেড়ে ওঠা শিশুদের তাদের নিজেদের খাবারের চাহিদা বুঝে নেওয়ার একটি সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। এটি একটি অন্তর্নিহিত ব্যবস্থা যা তাদের খাবার এবং এনার্জির গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে, আমাদের কখন খিদে পাচ্ছে এবং কখন আময়াদের পেট ভর্তি, সেটা বলার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। শিশুরাও এটি করতে পারে এবং তারা স্বভাব কিংবা ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনের মাধ্যমে সেটি বোঝায়। চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো হচ্ছে একটি অভ্যাস যার মাধ্যমে এই সূত্রগুলি ধরতে পারা এবং আরম্ভ করা কিংবা খাওয়ানো শেষ করানোর মাধ্যমে এটির যথাযথ প্রত্যুত্তর দেওয়ার ক্ষমতা তৈরী হয়।
চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো কী?
চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো হল একটি দ্বিমুখী আদানপ্রদানমূলক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আহারের সময়ে একটি শিশুর আচরণ এবং ব্যবহার অভিভাবকেরা ব্যাখ্যা করে তাদের চাহিদার প্রত্যুত্তর দেন। ব্যবহারগত সূত্রগুলি ব্যক্ত কিংবা অব্যক্ত হতে পারে। একটি শিশুর কিংবা বাচ্চার অব্যক্ত সূত্র থাকতে পারে যেখানে একটি বাচ্চার থেকে বড়ো একটি শিশু কথার মাধ্যমে উত্তর দিতে পারে। খাবার দেওয়ার সময়ে, খাওয়ানো বন্ধ করানোর সময়ে এবং পছন্দের খাবার দেওয়ার সময়ে শিশুর প্রতিক্রিয়ার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর প্রদান করা এই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। শিশুকে তার খাদ্যাভ্যাসের প্রতি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়ার অনুমতি প্রদানই হল চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানোর মূল চাবিকাঠি।
চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সময়সূচী অনুযায়ী আহারের একটি নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং খাবারকে পর্যাপ্ত অংশে ভাগ করার বিষয়গুলি একজন অভিভাবকের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস কিন্তু এই কর্মসূচী মেনে চলার জন্য কখনো কখনো জোর করলে তা শিশুর স্ব-নিয়ন্ত্রণের সহজাত ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। আহারের সময় মানে কেবল নিউট্রিয়েন্টের গ্রহণ নয়। এটি সেন্সরি ও মোটর স্কিল থেকে শুরু করে জ্ঞান ভিত্তিক ও কার্য সম্পাদনা এবং অবশ্যই স্ব-নিয়ন্ত্রিত দক্ষতাসমূহ - এইরূপ বিভিন্নপ্রকার দক্ষতার বিকাশে অনুমতি প্রদান করে। একজন অভিভাবক হিসেবে, তাদের চাহিদাগুলির প্রতি ইতিবাচকভাব প্রত্যুত্তর শিশুটিকে আরও নিবেশিত হওয়ার ক্ষেত্রে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্ব-নিয়ন্ত্রককে পালন করার অধিকার পাওয়ার এই পদ্ধতিটি শিশুকে কম ওজন কিংবা বেশি ওজন হওয়া থেকে রক্ষা করে। আহারের সময়ে এই স্বাস্থ্যকর কথোপকথনগুলি অনেক উপায়ে সৃজনশীল ও মজাদার করা যেতে পারে এবং অভিভাবক ও শিশুর মধ্যে একটি বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সাফল্যের পরামর্শ
- আহারের সময়টিকে গ্যাজেট, বই কিংবা খেলনার দ্বারা বিক্ষিপ্ত না করে একটি একক কর্মকাণ্ড হিসেবে গড়ে তুলুন। এটি আপনার শিশুটিকে হাতের কাজ - খাওয়া-এর প্রতি মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।
- বকাঝকা করা কিংবা শস্তি দেওয়ার মতো অথবা অনুরোধ করা, জিনিস বা ঘুষ দিয়ে খুশি করার মতো নেতিবাচক ক্ষমতার মধ্যে জড়াবেন না। এই চাপ খাবারের প্রতি নেতিবাচক আচরণ এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটি শিশুকে কম খাওয়া কিংবা বেশি খাওয়ার দিকেও এগিয়ে দিতে পারে।
- আহারের মাঝখানে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার কিংবা দুধ এবং জুসের মতো পানীয় খেতে অনুমতি দেবেন না। এটি সুধুমাত্র দাঁতের ক্ষয়ের দিকেই নয়, বরং স্বাস্থ্যকর আহারের সময়ের দিকেও এগিয়ে দিতে পারে।
- শিশুটি যে শুধুমাত্র একঘেয়েমি কাটানোর জন্য খাবার চাইছে না সেটি নিশ্চিত করতে, আহারের মাঝে শিশুটিকে মজাদার এবং উৎপাদনশীল কার্যকলাপের মধ্যে নিযুক্ত করতে হবে।
- আপনার শিশুর সূত্রগুলি বুঝতে হলে, প্রথমে সামান্য খাবার দিতে হবে এবং তারপর দেখতে হবে যে সে আরও খাবার চাইছে কি না। নতুন জিনিসের ওপর থেকে হার ছেড়ে দেবেন না বরং সেই পরীক্ষায় তাদের সময় নিতে দিন। যদি প্রয়োজন পড়ে, প্রত্যাখ্যান করা খাবারগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুনরায় পরিচিত করিয়ে দেখা যেতে পারে যে শিশুটি তখনও সেটি খেতে চাইছে কি না।
চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানোর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে কারণ শিশুটির জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলীর উপকারিতার ক্ষেত্রে শক্তি এবং সময় মূল্যবান!