আপনি যদি কয়েক দিন ধরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রান্না করেন কিংবা সারা সপ্তাহের জন্য অনেকটা রান্না করেন, তাহলে ফ্রিজে অনেক বেশী অবশিষ্ট খাবার থেকে যাবে। এবং এইগুলি আপনার বাচ্চার জন্য একটি সুস্বাদু খাবার তৈরি করার কাজে আসতে পারে। বেশি সময় কিংবা এনার্জির অপচয় না করেই আপনি পুষ্টিকর, সুষম এবং পরিপূর্ণ প্রধান আহার কিংবা স্ন্যাক্স প্রস্তুত করতে সক্ষম হবেন। শুধুমাত্র খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্মন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিচের পরামর্শগুলি মাথায় রাখুন এবং তালিকাভুক্ত রেসিপিগুলো পরীক্ষা করুন।
অবশিষ্ট খাবার ব্যবহারের সময়ে প্রয়োজনীয় সাবধানতা:
- খাবারটিকে সঠিকভাবে এবং সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করুন। সংক্রমণ হওয়া আটকাতে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করার আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। এই অভ্যাসগুলি অবশিষ্ট খাবারকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
- যখন তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি থেকে 140 ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে, সেই সময়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। সুতরাং, আপনি খাবারগুলিকে সর্বোচ্চ 2 ঘন্টার জন্য এই বিপদজ্জনক তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে পারেন। এবং তাপমাত্রা যদি 90 ডিগ্রির বেশি হয়, তাহলে খাবারকে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাইরে রাখুন। যদি খাবারটি আদর্শ সময়ের থেকে বেশি সময় ধরে এই তাপমাত্রায় থাকে, তবে তা ফেলে দিন।
- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাবারকে ফ্রিজে রেখে দিন। হয় প্রচুর পরিমাণে খাবার রাখুন ঠান্ডা জলের প্রবাহের মধ্যে রাখুন অথবা খাবারগুলোকে ছোটো ছোটো টুকরো করে ঠাণ্ডা করুন কিংবা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন।
- অবশিষ্ট খাবারকে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। অবশিষ্ট খাবারগুলো সিল করে লেবেল দিয়ে দিন যাতে আপনি হারিয়ে না ফেলেন এবং আপনার মনে থাকে যে আপনার ফ্রিজে কী আছে।
- আপনি আপনার অবশিষ্ট খাবারগুলোকে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিন ফ্রিজে রাখতে পারেন, কিন্তু তারপর সেগুলো ফেলে দিতে হবে। পাকস্থলীর সমস্যা কিংবা বিষক্রিয়াকে আটকাতে হলে স্কুলের লাঞ্চের জন্য অনেক দিনের পুরনো অবশিষ্ট খাবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- যদি অবশিষ্ট খাবারগুলো ফ্রিজে রাখতে চান, তাহলে বায়ুনিরোধক কনটেইনারের মধ্যে রাখুন। এইভাবে সেই খাবারটি তিন থেকে চার মাস থাকবে।
- কোনও খাদ্যদ্রব্যকে ঠিকঠাক গরম করার জন্য নিরাপত্তাজনিত নিয়মাবলী মেনে চলুন। তাই, প্রথমে ঠান্ডা জল দিয়ে তা গলিয়ে নিন, তারপর খেতে ইচ্ছা করলে খাবারকে মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিন।
- খাবারটি খাওয়ার যোগ্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলে সেটি ফেলে দিন। এমনকি খাদ্যের চেহারা, গন্ধ বা স্বাদ নষ্ট না হলেও, এর মধ্যে প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
- ফ্রিজের তাপমাত্রা 32 ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে রাখলেও, 40 ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে রাখুন। এটি আপনার খাবারকে হিমায়িত হতে বা বিপজ্জনক তাপমাত্রাজনিত অঞ্চলে থাকা থেকে রক্ষা করবে।। অবশিষ্ট খাবার রাখার জন্য মাঝের তাকগুলি হল সবচেয়ে ভালো জায়গা, এবং ফ্রিজারের তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকতে হবে।
- আপনার ফ্রিজটিকে পরিষ্কার রাখা জরুরি। যদি কোনো খাদ্যদ্রব্যের মেয়াদ চার দিন আগেই পেরিয়ে যায়, অথবা পুরনো কিছু ক্রাম্ব কিংবা স্পিল পড়ে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলুন। অন্যথায়, এটি ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং খাদ্যজনিত বিষক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বাচ্চাদের জন্য অবশিষ্ট খাবার দিয়ে স্বাস্থ্যকর আহার তৈরি করার জন্য কিছু রেসিপি এখানে দেওয়া হল:
ব্রেড উপমা:
টপস, ক্রাস্টসহ ব্রেডের টুকরোগুলো অনেক ছোট ছোট করে কুচিয়ে নিয়ে এগুলো আলাদা করে রেখে দিন। পনিরকে ছোটো ছোটো টুকরো করে কেটে নিন এবং সেগুলোও আলাদা করে রাখুন। একটি প্যানে, সামান্য তেল দিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও কাঁচালঙ্কা কুচি দিন এবং ভালোভাবে ভাজা না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। এরপর আদা রসুন বাটা, টমেটো কুচি দিয়ে সেগুলি নরম হওয়া পর্যন্ত কষতে থাকুন। এবার তাতে লাল লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, নুন, পিজ্জা সস ও কুচানো আমন্ড দিয়ে দিন। এরপর, এই মিশ্রণটি এক মিনিট মতো সাঁতলাতে হবে। এখন পাউরুটি ও পনির দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। সামান্য লেবুর রস ছড়িয়ে, ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
চাপাথি কোয়েসাডিলা:
বেশিরভাগ ভারতীয় পরিবারেই বাসি চাপাতি অতি সাধারণ একটি খাবার। এবং চাপাতি কোয়েসাডিলা স্কুল লাঞ্চের জন্য অবশিষ্ট খাবার হিসেবে ব্যবহার করার একটি সুস্বাদু উপায়। একটি প্যানে সামান্য তেল দিন। তাতে রুটিটি গরম করুন। এবার তার উপরে পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকামের মতো সবজির সঙ্গে ছেঁচে রাখা চিজ যোগ করে দিন। আপনি জলপাই ও জালাপেনোও দিতে পারেন। তারপর তাতে লঙ্কার গুঁড়ো, কিছু হার্ব, কেচাপ, রেড চিলি সস দিয়ে দিন। এবার আরেকটি রুটি দিয়ে এটিকে ঢেকে দিন। রুটির স্যান্ডউইচটি সোনালি-বাদামী ও মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত চেপে চেপে ভাজতে থাকুন। এবার এটিকে চার টুকরো করে কেটে গরম গরম পরিবেশন করুন। এই রেসিপিটি রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ সমৃদ্ধ।
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা ক্ষুদ্রান্ত্রে হজম হয় না, বরং বৃহদন্ত্রে গেঁজে ওঠে। এখানে, এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। যেহেতু এটি ক্ষুদ্রান্ত্রে হজম হয় না, তাই এটি গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না। রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ভালো গ্লাইকেমিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে, হজমে মসৃণতা নিয়ে আসে, তৃপ্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ঠান্ডা করে খাওয়া ভাতে, ঠান্ডা না করা ভাতের তুলনায় রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকে।
চাপথি লাড়ু:
এটি মহারাষ্ট্রের একটি মিষ্টি খাবার, যা অনেক তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলা যায়। অবশিষ্ট চাপাতিগুলি বিভিন্ন আকারে ছিঁড়ে ফেলুন এবং একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে দিন। এর মধ্যে গুড় দিয়ে সবটা মিশিয়ে একটা থকথকে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার তাতে ঘি, কুচানো আমন্ড, এলাচ গুঁড়ো দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা মিশ্রণটি নিয়ে শক্ত করে চেপে চেপে লাড্ডূর আকার দিতে হবে এবং সেটিকে একটি পরিষ্কার, বায়ুনিরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
দই ভাত:
যে কোনও অবশিষ্ট ভাতকে গরম এবং ঠান্ডা করুন, যাতে এটি রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। হাল্কা আঁচে ভাতটা মিশিয়ে নিন। দইটি টাটকা হলে তা দিতে পারেন, অথবা তার বদলে দুধ দিয়ে মেশান। পুরোপুরিভাবে ঠান্ডা করে নিন। এবার এর সঙ্গে নুন দিয়ে আরও একটু দই মেশান। এবার ভাতের মধ্যে কুচানো শসা ও গাজর দিন। ইচ্ছা করলে একটু জিরে, সরষে, লাল লঙ্কা, ছানার ডাল, উরদ ডাল, কাজু, কাঁচালঙ্কা, আদা, এবং কারিপাতা সহযোগেও মশলা দিতে পারেন। আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ডালিমের বীজ দিয়ে দই ভাত সাজিয়ে নিন।
ফ্রাইড রাইস:
অবশিষ্ট ভাত গরম করে দই ভাতের মতো করে ঠান্ডা করে নিন যাতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। একটি প্যানে সামান্য তেল গরম করে তাতে একটি স্টার অ্যানাইস দিয়ে দিন। এবার তার মধ্যে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিন। প্যানে ক্যাপসিকাম, গাজর, মাশরুমের মতো ছোট ছোট সবজির সঙ্গে একটু পেঁয়াজকলি দিয়ে দিন। তারপর, বেশি আঁচে মিশ্রণটি সাঁতলাতে হবে। স্বাদ মতো সয়া সস, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো দিন। চটজলদি ভাতটি দিয়ে সস ও ভিনিগার সহযোগে নাড়তে থাকুন। এবার সবুজ পেঁয়াজকলি দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
উপরে উল্লেখিত পরামর্শ এবং রেসিপিগুলি ব্যবহার করে লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য অবশিষ্ট খাবার দিয়ে দুর্দান্ত সব খাবার তৈরি করতে পারবেন। পুষ্টির সঙ্গে আপোস না করেই এটি আপনার অনেকটা সময় এবং প্রতিদিন খাবারের পরিকল্পনা করার হাত থেকে বাঁচাতে পারে ।