যখন আপনার সন্তান প্রথমবারের মতো চোখ খুলে আপনার দিকে তাকিয়েছিল, সেই মুহূর্তটি নিশ্চয়ই আপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পেশ্যাল ছিল! এই মূল্যবান অঙ্গগুলো তাকে জগতকে ভালবাসতে, ছোটখাটো জিনিসকে চিনতে এবং রং, আকৃতি, গঠন ও আরও অনেক কিছুর প্রশংসা করতে সাহায্য করে। চোখের সাহায্যে আপনার সন্তান স্পষ্টভাবে তার জীবন উপভোগ করতে পারে। তাই তার খাদ্যতালিকায় সঠিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করে চোখের ভাল যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আজকাল ছোট শিশুরা টিভি স্ক্রিন বা ট্যাবলেট দেখে অধিকাংশ সময় কাটায়, যা তাদের দৃষ্টিশক্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এমন খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এমন খাবার:

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, লুটিন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন C ও E দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রধান নিউট্রিয়েন্ট। তাই আপনার শিশু যদি নিম্নোক্ত খাবারগুলি গ্রহণ করে, তাহলে চোখের অনেক সাধারণ সমস্যার ঝুঁকি কমতে পারে:

  1. মাছের আঁশ ও দেহের টিস্যুতে তেল থাকে এমন তৈলাক্ত মাছ, যেমন আহি, রাওয়া, রুই, পমফ্রেট, ইলিশ খেতে দিন। বিশেষত ড্রাই আইয়ের সমস্যায় এগুলো খুবই উপকারী।
  2. আখরোট, ব্রাজিল নাট, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম ও মসুর ডালের মতো বাদাম ও কলাইয়ের মধ্যে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন E রয়েছে, যা বয়সজনিত কারণে হওয়া চোখের যেকোনও ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
  3. এমনকি চিয়া, ফ্ল্যাক্স ও হেম্পের মতো বীজ এইসব নিউট্রিয়েন্টে সমৃদ্ধ এবং আপনার শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করা উচিত। এগুলো স্মুদি বা ইয়োগার্টের ওপর ছড়িয়ে দিতে পারেন।
  4. লেবু, অরেঞ্জ, আঙুর ও স্ট্রবেরির মতো টকজাতীয় ফল ভিটামিন C সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, তাই বয়সজনিত কারণে হওয়া চোখের সমস্যা দূর করে। সুতরাং, আপনার সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলি সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
  5. পালং শাকের মতো সবুজ পাতায় লিউটিন, জিঅক্স্যান্থিন এবং ভিটামিন C রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট।
  6. গাজরে ভিটামিন A এবং ক্যারোটিনয়েড উভয়ই থাকে (ক্যারোটিনয়েডের কারণে গাজর কমলা রঙের হয়)। ভিটামিন A রডোপসিন নামক প্রোটিনের একটি অপরিহার্য অংশ, যা আলোর শোষণের সাহায্যে রেটিনাকে সাহায্য করে। তাই দ্রুত দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গাজর অন্যতম প্রধান খাবার।
  7. মিষ্টি আলুতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন E। রেটিনা এবং রেটিনাকে ঘিরে থাকা ভ্যাসকুলার টিস্যুতে জিঙ্ক থাকে। ফলে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি দূর করতে ডায়েটে জিঙ্ক থাকা জরুরি।
  8. ডিম চোখের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন, জিঅ্যাক্স্যান্থিন, ভিটামিন C, E ও জিঙ্ক রয়েছে।
  9. হাইড্রেশনও জরুরি, কেন না এটি ড্রাই আই হওয়ায় বাধা দেয়। তাই মনে রাখবেন, যখনই আপনি আপনার সন্তানকে লুটিন ও জিঅ্যাক্স্যান্থিন সমৃদ্ধ খাবার দেবেন, তখনই তার ডায়েটে অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডোর মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ করতে হবে। এভাবে তার শরীর সহজেই ফ্যাট শোষণ করতে পারবে।

যদি আপনার বাচ্চা নিয়মিত খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পায়, তাহলে আই হেলথ সাপ্লিমেন্টের ব্যাপারে চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

শিশুদের চোখের ক্ষতি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করাও জরুরি। এগুলির মধ্যে কয়েকটি হল:

  1. আপনি যদি আপনার বাচ্চাদের বাড়ির বাইরে বের করেন, তাহলে খেয়াল রাখবেন তারা যেন সঠিক সানগ্লাস পরে, যা তাদের চোখকে অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এসব রশ্মির অতিরিক্ত সংস্পর্শে এলে ভবিষ্যতে তাদের চোখের ছানি ও দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  2. আপনার সন্তানরা যদি হকির মতো খেলায় অংশ নেয়, তাহলে তাদের চোখে আঘাত লাগার আশঙ্কা থাকে। তাই তাদের ফুল ফেস কভারেজের সঙ্গে হেলমেটের মতো প্রোটেকশন অ্যাকসেসরিজ পরিয়ে দিন।
  3. দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার, টেলিভিশন বা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ঝাপসা ভাব, চোখের টান, ড্রাই আই, মাথাব্যথা এবং শরীরের উপরের অংশেও ব্যথা হতে পারে। তাই বাচ্চাদের জন্য স্ক্রিন টাইম ব্যবহার সীমিত রাখুন।
  4. আপনার শিশুকে নিয়মিত আই টেস্ট করানো নিতান্তই প্রয়োজনীয়, যাতে সমস্যাগুলি শুরু থেকেই শনাক্ত এবং সমাধান করা যায়। গ্লুকোমার মতো কিছু নির্দিষ্ট সমস্যায় কোনও উপসর্গ দেখা যায় না এবং কেবল চোখের পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা সম্ভব।

আপনার শিশুর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা তার চোখের পাশাপাশি সামগ্রিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্যও উপকারী। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন।