ওজন নিয়ন্ত্রণে খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজন কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ড্রাই ফ্রুট এবং ডুমুর রয়েছে যেগুলির সঙ্গে আপনি এই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু ফলপ্রসূ যাত্রায় বন্ধুত্ব করতে পারেন, কারণ ওজন কমানোর জন্য ড্রাই ফ্রুট আকর্ষণীয় ইতিবাচক ফলাফল দেখাতে প্রমাণিত হয়েছে!

ভূমিকা

ওজন কমানো শুধু সৌন্দর্যের মানদণ্ড অর্জন করার জন্য একটি ফিটনেস লক্ষ্য নয়; এটি ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্যেও অপরিহার্য। ওজন কমানোর যাত্রায় খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসাবে বিবেচিত হয়, এবং ড্রাই ফ্রুট একটি চমৎকার বিকল্প, যা টাটকা ফলের একটি ঘনীভূত রূপ। ওজন কমানোর জন্য ড্রাই ফ্রুটগুলি যখন স্ন্যাক্স হিসাবে খাওয়া হয় তখন আশাপ্রদ ফলাফল দেখায়, এবং প্রতিদিন তাদের ব্যবহার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে। তাছাড়া ওজন কমানোর জন্য বাজারে অনেক কালো কিসমিস পাওয়া যায় যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুণ বলে মনে করা হয়। 

কীভাবে ড্রাই ফ্রুট ওজন কমাতে সাহায্য করে

  • ড্রাই ফ্রুট ওজন কমাতে সাহায্য করে কারণ এতে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার উদ্ভিজ্জ কোষের সেই অংশ যা আমাদের শরীর হজম করতে পারে না, কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

  • খাবারের পরিকল্পনায় যার জন্য শক্তির সীমাবদ্ধতা বা ক্যালোরির খরচ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়, ড্রাই ফ্রুট খাওয়া উন্নত খাদ্যের গুণমানের সাথে সাথে শরীরের ওজন হ্রাসের সাথে যুক্ত। 
  • ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার সঙ্গে পুষ্টির পরিমাণও বাড়ে।
  • ড্রাই ফ্রুটে সোডিয়াম কম ও পটাশিয়াম বেশি থাকে। ডায়েটারি পটাশিয়াম ওজন কমানোর পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে। বাড়তি উপকারিতা হল, কম সোডিয়াম ও বেশি পটাশিয়ামযুক্ত খাবার রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও, ওজন কমানোর পাশাপাশি, ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো স্বাস্থ্য-উন্নয়নকারী উদ্ভিজ্জ উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। 

ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস

ওজন কমানোর জন্য ড্রাই ফ্রুটের তালিকা নিচে দেওয়া হল:

  1. ডুমুর:  পুষ্টিগুণে ভরপুর ডুমুর হল ফেনোলিক্স, জৈব যৌগ এবং উদ্বায়ী অ্যাসিডের পাশাপাশি ফাইবার, ভিটামিন A ও K, যা সুস্থ জীবনযাপনে অবদান রাখে। এগুলিকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটের মতো খাদ্যের অংশ হিসেবে ডুমুরকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ওজন কমানোর জন্য ডুমুরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে কারণ তারা তৃপ্তি প্রদান করতে পারে এবং আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে পারে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আপনি সুস্বাদু ডুমুর এবং আখের রস আকারে ডুমুর খেতে পারেন। 
  2. কিসমিস:  কিসমিস হলো শুকনো আঙুর, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান রয়েছে। এগুলি স্বাস্থ্য-প্রবর্তক বৈশিষ্ট্যগুলির অধিকারী এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। এটি এগুলিকে স্বাস্থ্যকর জলখাবার বিকল্পে পরিণত করে যা অবিরাম আকাঙ্খা হ্রাস করতে পারে। ওজন কমানোর জন্য কিসমিস উপকারী হতে পারে কারণ এটি রক্তে কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধেও উপকারী হতে পারে। ওজন কমানোর জন্য কালো কিসমিসও সহায়ক কারণ এগুলি অতিরিক্তভাবে ওলিয়ানোলিক অ্যাসিডের অধিকারী, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকলাপ দেখায় এবং আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থগুলির সাথে লড়াই করতে পারে। কিশমিশের এই চকোলেট জ্যামটি ট্রাই করে দেখুন আপনার জন্য কেমন কাজ করে। 
  3. ড্রাই এপ্রিকট: ড্রাই এপ্রিকট ওজন কমানোর জন্য উপকারী কারণ এতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার রয়েছে যা খাওয়া খাবারে প্রয়োজনীয় রুক্ষতা এবং ঘনত্ব সরবরাহ করে। এটি গ্যাস্ট্রিক মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রবণীয় ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে এবং শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  4. খেজুর: গবেষণা পরামর্শ দেয় যে খেজুরগুলি মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ইতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। খেজুর উচ্চ-ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (HDL) বাড়াতেও সাহায্য করে কারণ এগুলিতে উচ্চ পলিফেনলিক কনটেন্ট রয়েছে। এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা পরিমিত পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিরাপদ।ওজন কমানোর ডায়েটে ড্রাই খেজুর কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে পলিফেনলের সর্বোচ্চ ঘনত্ব রয়েছে বলে প্রমাণিত। এগুলিতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। 
  5. ড্রাই পীচ: পীচ ফলটি ফাইটোকেমিক্যালে সমৃদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে, যাতে আছে উপকারী অ্যান্টি-ওবেসিটি বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে ড্রাই আকারে। এটি শরীরের ওজন এবং পেটের ফ্যাট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। এর পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আধার এটিকে পেটের ফ্যাট কমাতে সেরা ড্রাই ফ্রুটগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
  6. ক্র্যানবেরি: এলাজিক অ্যাসিড একটি গুরুত্বপূর্ণ পলিফেনল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা ধারণ করে এবং ডালিম এবং বেরি জাতীয় ফলগুলিতে উপস্থিত থাকে। ড্রাই ক্র্যানবেরিতে পাওয়া এই এলাজিক অ্যাসিডের বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যেটি সাধারণত ডিসলিপিডেমিয়ার মতো অবস্থার বিকাশে একটি অবদানকারী ফ্যাক্টর। ডিসলিপিডেমিয়া রক্তে ফ্যাট অণুর ভারসাম্যহীনতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা স্থূলতার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
  7. প্রুণ: ওজন কমানোর জন্য ড্রাই ফ্রুটগুলিকে ভাল বিবেচনা করার সময়, প্রুনগুলি বিবেচনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প। এগুলি শুকনো প্লাম থেকে পাওয়া যায় এবং খাদ্য বা ওষুধ হিসাবে খাওয়া হয়। এগুলি তাদের পুষ্টিকর, রেচক এবং পাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রুনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে এগুলি একটি অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্য দেখায়, যা রক্তে লিপিডের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। প্রুনে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনলিক ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। ওবেসিটির ক্ষেত্রে এগুলির সেবন উপকারী।

উপসংহার

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রুন থেকে শুরু করে কিসমিস হয়ে ড্রাই এপ্রিকটের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই ব্লগ থেকে শিখলাম। ওজন কমানোর যাত্রায়, আপনি যে ধরনের খাবার গ্রহণ করেন তা ইতিবাচক ফলাফল অর্জনের চাবিকাঠি। যেহেতু ড্রাই ফ্রুট পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, যার ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে, তাই এগুলো সহজেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আসলে ওজন কমানোর জন্য ড্রাই ফ্রুট একটি ভাল স্ন্যাকিং বিকল্প, যা পুষ্টির গুণমান উন্নত করতে পারে। উপরে বর্ণিত তালিকায় পেটের মেদ কমানোর উপযোগী ড্রাই ফ্রুটও রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে এগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।