প্রতিটি মায়ের স্বপ্ন যে তার সন্তান যেন সুখী ও সুস্থ থাকে। আপনার ছোটটি যাতে খুব সুস্থ অনুভব করে এবং সব সময় চনমনে থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষ্ঠুভাবে কাজ করা পরিপাকতন্ত্র এক মস্ত বড় ভূমিকা পালন করে। তাই সঠিক খাদ্য সরবরাহ করা, মলত্যাগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং সাধারণ হজমের সমস্যাগুলি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধটিতে আপনার জানা দারকার
এমন সব খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা আপনার শিশুর হজমশক্তি বাড়াবে এবং আপনার উভয়ের জন্য দৈনন্দিন জীবনকে ঝামেলামুক্ত করে তুলবে।
শিশুদের হজমের সমস্যাগুলি
2 থেকে 5 বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে হওয়া খুব সাধারণ রকটা ব্যাপার। কিছু সাধারণ হজমের সমস্যার মধ্যে রয়েছে পেট খারাপ, অম্বল, বমি বমি ভাব, গ্যাস, ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া। শিশুদের হজমের সমস্যা বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এটা বিশেষ কোনও ওষুধ, কোনো খাবারে অসহিষ্ণুতা বা অনুপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের ফলে হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের ঘন ঘন হজমের সমস্যার জন্য দায়ী। তাই সুস্থ হজমশক্তির জন্য প্রয়োজন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানীয় ও ব্যায়াম।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
ডায়েটিশিয়ান এবং স্বনামধন্য স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রতি 1,000 কিলোক্যালরিতে গড়ে 20 গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। 1 থেকে 3 বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন 19 গ্রাম এবং 4 থেকে 8 বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন প্রায় 25 গ্রাম ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। পেটের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে ফাইবারযুক্ত খাবার সাহায্য করে।
শিশুদের জন্য কিছু ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আপেল এবং নাশপাতি, মটরশুটি (রাজমা, কালো মটরশুটি), উচ্চ আঁশযুক্ত গোটা শস্য, ওটস, পুরো শস্যের রুটি, খোসা ছাড়ানো এবং বেকড আলু এবং মসুর ডাল। পালং শাক, গাজর, মটরশুঁটি, মটরশুঁটিও ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস।
পর্যাপ্ত তরল জাতীয় পানীয়
ফাইবার সহজে পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যাবার শিশুদের প্রচুর পরিমাণে তরল খাওয়াতে হবে। স্বাভানবিক জল খাওয়ানোর সাথে সাথে শিশুকে কিছু ফলের রস যেমন আপেল, নাশপাতি ও কমলালেবু থেকে তৈরি তাজা ফলের রসও খাওয়াতে পারেন। ফলে মিষ্টি উপাদান বেশী থাকায় ফলের রসের চাইতে স্বাভাবিক জলই বাচ্চার জন্য বেশি ভালো। নারকেল জলও একটি স্মার্ট পছন্দ কারণ এটি ফাইবার সরবরাহ করার পাশাপাশি ঘামের দ্বারা শরীর থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোলাইটগুলিকে পুনরায় শরীরে ঢোকায়।
ব্যায়াম
সঠিক খাদ্য ও তরলের পাশাপাশি শিশুদের হজমের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যায়াম করানোটা গুরুত্বপূর্ণ। হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হজম ক্ষমতার উন্নতির জন্য ব্যায়াম খুবই উপকারী। আপনার শিশুর ভালো পরিপাক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ওকে প্রচুর শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে উদ্দীপিত করবে এবং খাবারের ভাল হজম করতে সহায়তা করবে।
ঘরোয়া উপায়ে হজমের সমস্যা দূর করবেন কীভাবে?
আপনার শিশুটিকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে আপনি বাচ্চার হজমের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেনঃ
- দ্রুত উপশমের লাভের জন্য, আপনার বাচ্চাকে কিছু পুদিনা চা দেওয়ার চেষ্টা করুন, অথবা আপনি তাকে ধীরে হাঁটার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে পারেন।
- আপনার শিশুকে ধীরে ধীরে খেতে উৎসাহিত করান এবং খাবারের আগে এবং পরে ওকে বিশ্রাম করতে দিন কারণ এটি শরীরকে ধীরে ধীরে খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
- আপনার শিশুকে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি গাঁজানো খাবার যেমন প্রোবায়োটিক দই দিন।
- শিশুর পেটে মৃদুভাবে ঘষতে থাকুন, যাতে কোনো গ্যাস থাকলে তা শরীরের ভেতর দিয়ে মসৃণভাবে চলাচল করতে পারে। এরফলে বাচ্চার পেটের অস্বস্তি ও পেটের ফোলাভাব অনেকাংশেই দূর হয়।
বাচ্চার হজমশক্তি বাড়াতে কী কী খাবার খাওয়াবেন না?
যদি আপনি পরিপাকের সমস্যার সমাধান করতে চান, তাহলে এখানে এমন কিছু খাবারে কথা উল্লেখ করা হলো যা আপনার বাচ্চাকে দেওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত ।
- তার খাবারে অতিরিক্ত মশলা মেশবেন না।
- বাচ্চাকে বেশি ভাজা - পোড়া খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
- এ ছাড়া, ভিনেগার ও সাইট্রাস ফলের মতো উচ্চ অম্লযুক্ত খাবার না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- ফ্রুক্টোজের মতো অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবারও হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
- চিনি, সাদা ভাত, সাদা রুটির মতো পরিশোধিত খাবার খাওয়ার ফলে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যণ হতে পারে।
- পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া কম করুন।।
উপরে উল্লিখিত সমস্ত খাদ্যতালিকাগত সতর্কতা এবং ঘরোয়া প্রতিকার ছাড়াও, নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু শারীরিকভাবে সক্রিয় আছে। এটি সঠিক হজম করতে সাহায্য করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে তোলে।
আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা ও গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow