শৈশবের স্থূলতা কমাতে 16টি স্বাস্থ্যকর খাবারের টিপস

ভারতীয় বাবা-মায়েরা প্রায়ই তাদের সন্তানদের পুষ্টি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যেহেতু শিশুরা খাবার খাওয়ার সময় যথেষ্ট বায়ানাক্কা করে, তাই তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করা এবং বাড়িতে তৈরি খাবার বেশি খাওয়ানোটা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উপরন্তু, জাঙ্ক ফুড এবং মিষ্টিজাতীয় পানীয়ের সহজ প্রাপ্যতা আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় ক্যালোরি এবং শরীরে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। সুতরাং, এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে শৈশবকালীন স্থূলতা পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে শিশুর প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। মেদবহুলতার সমস্যাটি হল, যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে এটি আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং এমনকি দুর্বল আত্মসম্মানের মতো জীবনযাত্রার রোগগুলির দিকে পরিচালিত করতে পারে।

তাই শিশুর BMI বা শরীরের মেদ মাপা জরুরি। এটি ওজনকে উচ্চতার বর্গ দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়। এবং বডি ফ্যাট পার্সেন্টাইল আপনার বাচ্চার বডি ফ্যাটকে সমবয়সী এবং লিঙ্গের অন্যান্যদের সাথে তুলনা করতে সাহায্য করে। তাই আপনার শিশুর BMI যদি 85তম পার্সেন্টাইল বা তার বেশি হয়, তাহলে তার অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আপনার শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করুন, তাকে সক্রিয় থাকতে উ্তসাহিত করুন এবং এই টিপসগুলি মেনে চলুনঃ

1. আপনার বাচ্চাকে সঠিক পরিমাণের খাবার খাওয়া সম্পর্কে শেখান এবং ওদের বার্গার, ফ্রাই এবং পিজ্জার মতো জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা সীমিত করতে বলুন।
2. পুষ্টিকর খাবার হিসাবে নুডলস রান্না করার সময় তাতে প্রচুর পরিমাণে টাটকা সবজি মেশান। রিফাইন্ড ময়দা থেকে তৈরি পাস্তার বদলে গোটা গমের পাস্তা র খাবার খাওয়ানো চেষ্টা করুন।
3. শিশু যেন পর্যাপ্ত জল পান করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এর ফলে বাচ্চার পেট ভরে যাবে, এবং এইভাবে একটি শর্করাযুক্ত, চর্বিযুক্ত স্ন্যাক্সের প্রতি ওদের আগ্রহ কমে যাবে।
4. আইসক্রিম বা চিপসের পরিবর্তে বাচ্চাদের স্ন্যাক্স হিসেবে তাদের একটি ফল বা সবজি খেতে দিন। বাদামের মাখন বা গ্রীক দইয়ের সঙ্গে আপেল স্লাইসগুলি প্যাকেটজাত স্ন্যাক্সের স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প।
5. বাচ্চার খেলার সময়কে (অন্তত এক ঘণ্টা) বিশেষ অগ্রাধিকার দিন। এটি বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক উভয় বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের একই কাজ করতে করতে একঘেয়েমি লেগে যায়। তাই নাচ, স্কিপিং ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক কার্যক্রমের মধ্যে ওদের মনোনিবেশ করান।
6. বাচ্চাদের প্রতিদিন স্ক্রিন টাইম হিসাবে 30 থেকে 60 মিনিট সময় দিন। সারাদিন ঘরে বসে টিভি না দেখে সন্তানদের বাইরে গিয়ে খেলতে উৎসাহিত করুন।
7. বাচ্চার ওজন কমানোর চেয়ে ওদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রতি নজর দিন। বাচ্চার সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। এতে ওদের ওজন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।
8. বাচ্চারা যেমন তাদের আশেপাশের বড়দের অনুকরণ করে শেখে, তাই বাচ্চাদের ভাল খাওয়ার অভ্যাস এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে উৎসাহিত করার জন্য আপনার গোটা পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করুন।
9. পরিবার হিসাবে একসাথে খাবার খান এবং স্ন্যাকস খান এবং খাবারের সময় টিভি দেখা বন্ধ করুন, কারণ এমনটা করলে বাচ্চাদের খাবারের স্বাদ, গন্ধ, রঙ এবং গঠনের উপর মনোযোগ করতে সহায়তা করবে।
10. টিভি দেখার সময় বাচ্চাদের স্ন্যাক্স বা খাবার খেতে দেবেন না কারণ এটি ওদের খাবার থেকে প্রাপ্ত তৃপ্তি বোধ থেকে বিরত রাখতে পারে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেবে।
11. বাচ্চাদের ফ্যাটি এবং মিষ্টিযুক্ত খাবার থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করবেন, কেননা এরফলে ওদের মনে সেই সব খাবারের প্রতি লালসা বাড়াবে। মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের যেকোন উপহার দিতে ভুলবেন না। ওরা যেন সব ধরনের খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে পারে।
12. খাবারের পরিকল্পনা, রান্না করা এবং কেনাকাটায় শিশুদের যুক্ত করুন। এরফলে আপনি বাচ্চাদের পছন্দ-অপছন্ন্দের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং ওদের পুষ্টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে পারবেন।
13. বাচ্চাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ফলের রস খেতে দেবেন না, কারণ ফলের রসে অধিক মাত্রায় শর্করা এবং ক্যালোরি থাকে। তার পরিবর্তে, ওদের গোটা ফল দিন কারণ ফলে যথেষ্ট ফাইবার থাকে।
14. বাচ্চাদের খাবার ধীরে ধীরে সঠিকভাবে চিবিয়ে খেতে উৎসাহিত করুন, ফলে খাবার খেতে ওরা তৃপ্তি বোধ করবে।
15. যদি আপনার বাচ্চা যখন উদাস, দুঃখী বা একাকী থাকে তখন খায়, তাকে তার ধরণ বুঝতে সাহায্য করুন। তাদের সত্যিকারের বুঝতে শিখুন।
16. খাবারকে পুরস্কার বা শাস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। এতে খাবারের সঙ্গে বাচ্চাদের মনে এক অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

প্রতিটি শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের গঠনও আলাদা হয়। তাই সহজভাবে ধরে নেওয়া যে ওর স্থূলতা কেবল ডায়েটে পরিবর্তন করার একমাত্র কারণ হওয়া উচিত নয়। বাচ্চাদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ডায়েট দেওয়া ঠিক নয় কারণ ওদের এখন বাড়ন্ত বয়স, এবং সীমাবদ্ধ খাদ্য এই প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শিশুর উচ্চতা এবং ওজন নির্ণয় করার জন্য সর্বদা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাহায্য নিন এবং তাদের বৃদ্ধির ইতিহাসও বিবেচনা করুন। 

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান