পরিপাকতন্ত্রের অনিয়মিত আচরণই শিশুদের পক্ষে সবথেকে অসহনীয় একটি সমস্যা। বাচ্চাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য বিশেষত এমন এক সাধারণ সমস্যা, যা তাদের খিটখিটে, বদমেজাজী করে তোলে এবং এমনকি ক্ষিদেও কমিয়ে দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম উপায় হল আপনার বাচ্চাদের ডায়েটে ফাইবার যোগ করা। বাধাহীন বাওয়েল মুভমেন্ট এবং কম ব্যথা ও চাপের জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রেশনও প্রয়োজনীয়। সুতরাং, বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কীভাবে এটি শনাক্ত ও চিকিৎসা করা যায় সে সম্পর্কে আরও বুঝতে হলে পড়ুন:

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের 5টি লক্ষণ:

  1. শক্ত পাথরের মতো মল

    যেসব বাচ্চারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগে, তাদের মাঝেমধ্যেই খুব শক্ত মল বের হয়। এদের মলগুলি সাধারণত পাথরের মতো শক্ত হয়।

  2. মলত্যাগের সময় ব্যথা করে

    বাচ্চারা মল বের করার সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে কারণ তাদের মল খুব শক্ত এবং মলদ্বারের পেশী নরম হয়। .

  3. কম ঘন ঘন পায়খানা পায়

    কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগা শিশুদের পায়খানায় যাওয়ার পরিমাণও খুব কম হয়ে যায়। যদিও কিছু বাচ্চা দিনে 2-3 বার মলত্যাগ করতে পারে, তবে কেউ কেউ সপ্তাহে দুই বা তিনবার মাত্র মলত্যাগ করে। তাই, অনুগ্রহ করে আপনার সন্তানের মল করার ফ্রিকোয়েন্সি নোট করুন, এবং যদি সে তার টয়লেটের অভ্যাসের সাথে সঙ্গতি রেখে মল নির্গমন না করে, তবে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

  4. ঘন ঘন, ছোট এবং একনাগাড়ে মল নির্গমন

    কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে শিশুরা অজান্তেই একনাগাড়ে মল নির্গমন করে থাকে। যেহেতু মল প্রচুর পরিমাণে অন্ত্রে জমা হয়, তাই এটি দুর্ঘটনাক্রমে বেরিয়ে যেতে পারে।

  5. সন্তানের আচরণে হওয়া পরিবর্তন

    আপনার শিশু যদি খিটখিটে হয়ে যায়, কিছু খেতে অস্বীকার করে বা পেটে ব্যথার অভিযোগ করে, তাহলে এগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ হতে পারে।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার 7টি সম্ভাব্য কারণ:

  1. দৈহিক পরিশ্রমের অভাব

    দৈহিক পরিশ্রমের অভাবের ফলে খাদ্য অনুপযুক্তভাবে হজম হতে পারে, কারণ আজকাল বেশিরভাগ বাচ্চারা টেলিভিশন দেখে বা ট্যাবলেটে গেম খেলে। এটি বিপাকীয় হার কমাতে পারে এবং এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

  2. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

    প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য বেশি থাকা এবং স্বাভাবিক খাবার কম থাকা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেও মাঝেমধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

  3. অতিরিক্ত দুধ খাওয়া

    বাচ্চা বড় হতে শুরু করলে তার পুষ্টির চাহিদা বদলাতে থাকে। তার ফাইবার সমৃদ্ধ আরও শক্ত খাবার খাওয়া দরকার। তাই আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে খুব বেশি গরুর দুধ এবং কম কঠিন পদার্থ খাওয়ান, তাহলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

  4. অনেকক্ষণ মল চেপে রাখা

    অস্বস্তি, বিব্রত বা ব্যথার অনুভূতি কি আপনার শিশুকে মল ত্যাগ করা থেকে আটকে রাখে? তাহলে এর কারণেও কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এটাও হতে পারে যদি সে খুব বেশি খেলতে ব্যস্ত থাকে এবং টয়লেট ব্রেক নিতে চায় না।

  5. কয়েকটি খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা

    মাঝেমধ্যে নির্দিষ্ট ফুড গ্রুপের প্রতি অসহিষ্ণুতা শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। গম, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক খাবার এবং বিশেষত নুন বা চিনিযুক্ত জাঙ্ক ফুড এই সমস্যার কারণ হতে পারে।

  6. মাইক্রোফ্লোরার অযৌক্তিক ভারসাম্য

    যদি আপনার শিশুর অন্ত্রে মাইক্রোফ্লোরার ভারসাম্যের অভাব থাকে, তাহলে সে ঘনঘন মলত্যাগ নাও করতে পারে। দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খাবার এইসব ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

  7. অস্বাস্থ্যকর তরল খাবার খাওয়া

    শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য তরল খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশু যদি পর্যাপ্ত জল বা তরল খাবার গ্রহণ না করে তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কয়েকটি টিপস:

  1. স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস

    শিশুদের বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের খাদ্যতালিকায় হোল গ্রেইন, তাজা ফল ও সবজি অবশ্যই রাখতে হবে। তাদের প্রসেসড খাবার বা সুগারে সমৃদ্ধ খাবার কম দেওয়ার চেষ্টা করুন।

  2. নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম

    প্রতিদিনের দৈহিক পরিশ্রম মেটাবলিজমকে ভালো রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। তাই, বাইরের খেলার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন এবং মোবাইল বা টিভির সামনে বসে সময় কাটানোর সময় সংক্ষেপিত করুন।

  3. টয়লেট প্রশিক্ষণ

    আপনার বাচ্চাকে 2 বছর বয়স থেকে টয়লেটে বসে মল ত্যাগ করায় উৎসাহ দিন। দিনে প্রত্যেকবার খাওয়ার পর সর্বোচ্চ তিনবার মল ত্যাগ করা যেতে পারে।

  4. পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করা

    আপনার শিশু প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও তরল খাবার গ্রহণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। খাওয়ার জল ছাড়াও তাজা ফলের রস বা মিষ্টিহীন লস্যি দেওয়া যেতে পারে। ডাবের জলও ভাল বিকল্প।

  5. ওরাল সাপ্লিমেন্ট খাওয়ানো

    যদি কোষ্ঠকাঠিন্য এখনও থাকে, তবে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে তাদের ওরাল সাপ্লিমেন্ট খেতে দিতে পারেন।

উপরের টিপসগুলি আপনাকে সহজেই শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে। যাইহোক, যদি উপসর্গগুলি অব্যাহত থাকে এবং আপনার শিশু অন্যান্য জটিলতার অভিযোগ করে যেমন মলের মধ্যে রক্ত পড়া ​​বা জ্বর হওয়া, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।