মানবদেহ এমন এক অনন্য যন্ত্র যার সর্বোত্তমভাবে কজ করার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। এবং ঘুম হল দেহের "আরাম পর্ব" বা "আরামের সময়সীমা"। আপনার সন্তানের বিশেষত শারীরিক ও মানসিকভাবে শাণিত ও সুস্থ থাকার জন্য দিনে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। শিশুদের জন্য ঘুমের উপকারিতা অনেক, স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি, ভাল মনোযোগ এবং মনোরম মেজাজের দিক থেকে। আর এর অভাবে পরবর্তী সময়ে মানসিক অবসাদ, স্থূলতার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপও হতে পারে। তাই, এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কীভাবে ঘুম আপনার সন্তানের বিকাশে প্রভাব ফেলে, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কুফল এবং আপনি আপনার ছোট্ট সন্তানকে নির্বিঘ্নে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কীভাবে উৎসাহিত করতে পারেন।

শিশুর বিকাশে ঘুমের গুরুত্ব

শিশুর বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর মস্তিষ্কের প্রধান কাজটি হল ঘুমানো। ঘুমের দৈর্ঘ্য বা সময়কাল আপনার শিশুর সর্বোত্তম বৃদ্ধির সাপেক্ষে পর্যাপ্ত হওয়া উচিত। ঘুমের গুণগত মানও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ঘুম অপরিহার্য। ঘনঘন ঘুমানোর অভ্যাসও সচেতন থাকার বোধ বাড়াতে সাহায্য করে।

সুতরাং, যদি আপনার শিশু ঘনঘন ঘুমে লিপ্ত হয়, তাহলে যখন আপনি তার ঘুমানোর মোট সময় গণনা করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই এইগুলিকেও হিসাবে ধরতে হবে। অনেক সময় আপনার শিশুর ঘুমের ধরন ভিন্ন হতে পারে - সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে শিশুরা বেশি সময় ঘুমানোর প্রবণতা দেখায়। এ নিয়ে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়, কারণ ব্যাপারটি স্বাভাবিক। কিন্তু, পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি আপনার শিশুটিকে অতিরিক্ত অলস বলে মনে হয়, তাহলে আপনাকে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি হয়ত অন্তর্নিহিত জটিলতার ইঙ্গিতবাহী।

শিশুর ঘুমের উপকারিতা

  • ভাল শারীরিক সক্ষমতা ও বৃদ্ধি
  • কম হাইপারঅ্যাকটিভিটির পাশাপাশি আরও সামাজিক আচরণগত প্যাটার্ন
  • ধৈর্য্যবান হওয়ার দক্ষতা এবং দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ বজায় রাখতে পারা
  • স্নায়ুর উন্নততর বিকাশ
  • প্রচুর জ্ঞানগত ও শেখার ক্ষমতা
  • মস্তিষ্কের আরও ভাল কার্যকরী বিকাশ, যা আরও ভাল বুদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারে
  • ক্লাসরুমে ভালো পারফরমেন্স এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন
  • সঙ্গীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক
  • ক্ষিদে বাড়ার ফলে বর্ধিত এনার্জি গ্রহণ

শিশুর বিকাশে কম ঘুমানোর কুপ্রভাব

মনে রাখবেন, অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার ছোট্ট সন্তানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে হতে পারে:

  • সারাদিন ঘুম পাওয়া বা ক্লান্ত হয়ে থাকা
  • এনার্জির অভাব এবং মাথা ঘোরা
  • গতানুগতিক ক্লান্তি ও অবসাদ
  • মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে ভাব দেখানো
  • ভুলে যাওয়ার সমস্যা
  • একাগ্রতার অভাব
  • শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া

তবে অতিরিক্ত ঘুমও ক্ষতিকর হতে পারে, তাই সঠিক স্লিপ সাইকেল বজায় রাখা জরুরি।

শিশুদের কি ঘুমানোর সময় ওজন বাড়ে?

ঘুম কি শিশুদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে? এই প্রশ্ন অনেক মাকেই বলতে শোনা যায়। নানা ধরনের গবেষণা দুর্বল ঘুমের অভ্যাস এবং শৈশবের স্থূলতার বিকাশের মধ্যে একটি সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। দুর্বল ঘুমের অভ্যাসের মধ্যে থাকতে পারে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানো, সাধারণত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘন ঘন ঘুমানো এবং ঘুম ও জেগে ওঠার নির্দিষ্ট নিয়মে অস্বাভাবিকতা।

দেখা গেছে যে, যেসব শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ঘুমায়, তারা টেলিভিশন দেখে বেশি সময় ব্যয় করে। এবং এর ফলে তারা তাদের বয়সের জন্য যা প্রয়োজন তার চেয়ে কম শারীরিক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হয়, যার ফলে তাদের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং মোটা হয়ে যায়। বাবা-মা নিজে মোটা হলে বা পারিবারিকভাবে স্থূলতার ইতিহাস থাকলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে ঘটে থাকে।

তাই শৈশবের স্থূলতা ও ঘুমের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত, অনুপযুক্ত ঘুমের অভ্যাসের ফলে হওয়া শৈশবের স্থূলতার দরুণ পরিণত বয়সেও স্থূলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, আপনার সন্তানের পর্যাপ্ত ঘুম ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ হলেও, আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সে খুব বেশি মাত্রায় না ঘুমায়। সুতরাং, স্থূলতা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ঘুমের নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

শিশুকে ঘুম পাড়ানোর টিপস

শিশু যাতে ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য আপনি নীচে দেওয়া পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন।

  • ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পর্যাপ্ত ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন এবং একজন বাবা অথবা মা হিসেবে আদর্শ ব্যক্তি হোন, যাতে আপনার সন্তানরা আপনার মেনে চলা অভ্যাস অনুকরণ করতে পারে।
  • রুটিন বানিয়ে দিন: ঘুম থেকে ওঠার সময়, খাওয়ার সময়, ঘুমানোর সময় এবং খেলার সময় নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন।
  • কাজকর্মে উৎসাহ দিন: আপনার সন্তানের আগ্রহ ও সতর্কতাকে উদ্দীপিত ও বজায় রাখার জন্য দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পুষ্টি, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং বিনোদন নিশ্চিত করুন। এভাবে সে রাতে যথেষ্ট ক্লান্ত বোধ করবে, যার ফলে খুব সহজেই ঘুম পাড়ানো সম্ভব হবে।
  • গ্যাজেট নিয়ে সময় কাটানো কমিয়ে দিন: আপনার সন্তানের স্ক্রিন টাইম পর্যবেক্ষণ করুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে অবিলম্বে সমস্ত ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বন্ধ করে দিন।
  • ঘুমানোর উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন: ম্লান আলো, নরম কম্বল, উপযুক্ত ঘরোয়া তাপমাত্রা এবং ভেন্টিলেশন ব্যবহার করে ঘুমের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করুন।
  • উদ্দীপক খাবার-দাবার এড়িয়ে চলুন: আপনার শিশু ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে তাকে কঠিন খাবার এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
  • কাজের সময়সূচি তৈরি করুন: শিশুর হোমওয়ার্ক ও পড়াশোনা করার সময়সূচি ঠিক করুন, যাতে তার ঘুমের সময়ে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে।

সুতরাং, সহজেই বোঝা সম্ভব যে, কীভাবে সঠিক পরিমাণ ঘুম আপনার শিশুর সামগ্রিক কল্যাণ এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ স্লিপ সাইকেল নিশ্চিত করতে উপরের টিপসগুলো মাথায় রাখুন এবং যদি আপনার মনে হয় যে আপনার সন্তান পর্যাপ্ত ঘুম ঘুমাচ্ছে না বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা এবং গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন- https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow