আপনার শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্ত্রের উত্তম স্বাস্থ্য একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। কারণ গ্যাস, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মতো সমস্যা তাকে এনার্জি নিঃসরণের পাশাপাশি সত্যিই অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে। আর এখানেই প্রোবায়োটিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে প্রোবায়োটিক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর একাধিক উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আবার প্রোবায়োটিক সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্ত্বেও সব মা হয়ত প্রিবায়োটিক এর গুরুত্ব বোঝেন না। যখন আপনার ছোট শিশুর অন্ত্রের সমস্যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে, তখন এই নিবন্ধটির সাহায্যে আপনি সন্দেহ দূর করতে এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

প্রিবায়োটিক কী?

প্রিবায়োটিক হল হজম না হওয়া খাদ্য উপাদান, যা অন্ত্রে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এগুলি ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীবদের টিকে থাকার এবং সিস্টেমে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। শিশুদের জন্য প্রিবায়োটিকগুলির কিছু ভাল উৎস নিম্নরূপ:

  • ফাইবার-সমৃদ্ধ সবজি।
  • দইয়ের মতো গাঁজানো খাবার।
  • রসুন স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার গুণবৃদ্ধি রোধ করে।
  • পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণাগুণও রয়েছে।
  • বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন B ও C এবং এগুলি প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক সমৃদ্ধ।
  • লিকসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
  • মসুর ডাল প্রিবায়োটিক-সমৃদ্ধ এবং হজমে সহায়তা করে।
  • কিডনি বিন ও সয়াবিনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং পটাশিয়াম।
  • চিকেনের মধ্যে রয়েছে প্রিবায়োটিক, আয়রন এবং B ভিটামিন।
  • কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সাহায্য করে। এগুলো পেটফাপার সমস্যাও কমায়।
  • তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি হাইড্রেশনের পক্ষে ভালো। এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়ার একটি ভাল খাদ্য উৎস।
  • ব্র্যান, বার্লি এবং ওটসের মতো খাদ্যশস্য প্রিবায়োটিকগুলির জন্য দারুণ বিকল্প।
  • আমন্ড, পেস্তা বাদাম, ফ্ল্যাক্সসিডের মতো বাদাম ও বীজও খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে।

হজম না হওয়া প্রিবায়োটিক সিস্টেম থেকে নিঃসৃত হয়ে যায়। বাদাম ও বীজসহ হাই-ফাইবার ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বা হোল-গ্রেইন ব্রেড বা খোসা সহ গোটা ফল বা স্যুপ এবং শুঁটি সমৃদ্ধ স্যালাড খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রিবায়োটিকের পরিমাণ শিশুদের খাদ্যে বাড়ানো যেতে পারে।

প্রোবায়োটিক কী?

প্রোবায়োটিক হল উন্নত খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট যাতে থাকে জীবন্ত অণুজীব, যা পরিপাকতন্ত্রে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধি করার জন্য খাওয়া হয়। যেমন, দইতে রয়েছে ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামে এক ধরনের স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রে থাকা ফ্লোরাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকের অন্যান্য উৎস হল বিট, বাঁধাকপি এবং সয়া। ক্যাপসুল, ট্যাবলেট, পাউডার, লিকুইডস বা লিকুইড ড্রপের আকারে প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও নেওয়া যেতে পারে।

আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিকগুলির গুরুত্ব

পাকস্থলীতে প্রায় 300 থেকে 500 ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। ভাইরাস এবং ছত্রাকের মতো রোগজীবাণুর সাথে মিলিত হয়ে তারা তাদের নিজস্ব ক্ষেত্র গঠন করে, যাকে মাইক্রোবায়োটা বা মাইক্রোবায়োম বলা হয়। প্রতিটি মাইক্রোবায়োটা একটি নির্দিষ্ট শিশুর সাপেক্ষে অনন্য এবং মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ও জন্মের পরে এক্সপোজারের মাধ্যমে বিকশিত হয়। এটি শিশুর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ওপরও নির্ভর করে।

অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া শিশুর সার্বিক সুস্থতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এগুলো বিপাক ক্রিয়া, মেজাজ এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োমের কারণে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ হতে পারে। এবং বিকাশের মূল পর্যায়ে সংক্রমণগুলি বৃদ্ধি এবং বিকাশকে প্রভাবিত করে বলে জানা যায়।

পেটের ব্যাকটেরিয়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, বিষণ্ণতা এবং কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনার সাথেও সম্পর্কিত। বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বেশি বা কম হলে তা অসুস্থতার কারণ হতে পারে। কিছু ব্যাকটেরিয়া ঝুঁকি কমায়, আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া তা বাড়িয়ে দেয় বলে জানা যায়। পেটের ব্যাক্টেরিয়া আপনার বাচ্চার খাদ্য থেকে ক্যালোরি এবং শুষে নেওয়া নিউট্রিয়েন্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুদের প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক গ্রহণের উপকারিতা

  • প্রোবায়োটিক শিশুদের জন্য উপকারী, কারণ এটি মাইক্রোবায়োমকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এগুলো স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক উভয়েরই ভাইরাল ডায়রিয়ার চিকিৎসা এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
  • যে সব শিশুরা প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খুব তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করে, তাদের তীব্র ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিসের কারণে হওয়া ডায়রিয়ায় অসুস্থ থাকার মেয়াদ কম হয়।
  • রোটাভাইরাস-সংক্রান্ত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় প্রোবায়োটিকগুলির প্রমাণিত উপকারিতা রয়েছে। এগুলো শিশুদের সংক্রমণের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনে।
  • প্রিবায়োটিক অ্যাটোপিক একজিমাও কমাতে পারে।
  • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রোবায়োটিকগুলি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করতে পারে।

সব মিলিয়ে প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক আপনার শিশুর পরিপাক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক বিকাশকে বিভিন্নভাবে উপকৃত করতে পারে। কিন্তু, এইগুলি সেইসব শিশুদের দেওয়া উচিত নয়, যারা গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছে বা যাদের আপোসমূলক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার শিশুর খাদ্যে প্রোবায়োটিক বা প্রিবায়োটিক চালু করার আগে সবসময় শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা এবং গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow -এ ভিজিট করুন