অনেক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কম বয়সে বাদামের অ্যালার্জি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাদামের অ্যালার্জিকে সবচেয়ে গুরুতর ধরণের অ্যালার্জি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কখনও কখনও, অ্যালার্জির তীব্রতা এত তীব্র এবং মারাত্মক হতে পারে যে যার ফলে এমনকি যদি সময়মতো চিকিত্সা পরিচালনা না করা হয়, তাহলে সাংঘাতিক বিপর্যয়ও ঘটে যেতে পারে।
অতএব, কিসের দরুন এই জাতীয় অ্যালার্জি হয়, সেগুলি কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিত্সা করা হয় এবং আপনার সন্তানের সুরক্ষার জন্য কী কী বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা প্রয়োজন সে বিষয়ে বাবা০-মায়েদের সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে, কোনও শিশুর বাদামের প্রতি থাকা অ্যালার্জির লক্ষণগুলি বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন। সুতরাং, আপনার সাবধানতায্র জন্য, বাদামের অ্যালার্জি কী সেই বিষয়ে এখানে নিবিড়ভাবে দেখুন।
বাদামের অ্যালার্জি এবং এর কারণ ও লক্ষণগুলি
যদি কোনও শিশুর বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সেই শিশু বাদাম খেলে বা বাদামের গন্ধ নাকে গেলে, তার শরীর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বাদামের প্রতি কোনও শিশুর নির্দিষ্ট ধরণের অ্যালার্জি থাকতে পারে বা তার একাধিক ধরণের অ্যালার্জিও থাকতে পারে। কোনও শিশুর যদি বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সেওি শিশুর সব ধরণের বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
বাদাম, চিনাবাদাম, পেকান, পেস্তা, ম্যাকাডামিয়া বাদাম, কাজু বাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট, ব্রাজিল বাদাম এবং পাইন বাদাম অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। ছোট্ট শিশুরা বাদাম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বা বাদামের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাদামের অ্যালার্জির লক্ষণগুলি খুব দ্রুত দেখা দিতে আরম্ভ করে। বাদাম অ্যালার্জির লক্ষণগুলি বাচ্চাদের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে এবং নাক দিয়ে জল গড়িয়ে পড়া, হালকা জ্বালা থেকে শুরু করে আরও গুরুতর জ্বালা হওয়া, এবং এমনকি প্রাণঘাতী উপসর্গ যেমন ফুলে যাওয়া গলা, কাঁপুনি এবং শ্বাস নিতে সমস্যা, এগুলিও হতে পারে। বাদাম বা চিনাবাদামের অ্যালার্জির দরুন হওয়া বিভিন্ন উপসর্গগুলি নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:
- বমি বমি ভাব
- বমি হওয়া
- পেট ব্যথা
- একটানা হাঁচি
- ঠোঁট ফোলা
- মুখের চারপাশে এবং মুখে জ্বালা ও চুলকানি হওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- গিলতে কষ্ট হওয়া
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
বাদামের প্রতি হওয়া অ্যালার্জির মূল কারণ হল শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাদামের প্রোটিনকে সহ্য করতে পারছে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান বাদামের প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। সহজ কথায় বলতে গেলে, বাদামের অ্যালার্জি হওয়ার মূল কারণ হলো চিনাবাদাম বা অন্য কোনও ধরণের বাদামের প্রতি শরীরের অসহিষ্ণুতা। বাদামের প্রোটিন, প্রোটিনের প্রভাবকে রুখে দেবার জন্য হিস্টামিনের নিঃসরণকে প্ররোচিত করে।Dictionary not found for this word আসলে শরীরের জন্য হিস্টামিন ক্ষতিকারক নয়, তবে এই ক্ষেত্রে, শরীর এটিকে অনুধাবন করে এবং এটিকে ছেড়ে দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
বাদামের অ্যালার্জি ফলে শ্বাসনালী, জিআই সিস্টেম, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এবং ত্বকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, এরফলে অ্যানাফিল্যাক্সিস নামক এক প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থার কারণ হতে পারে - এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং রক্তচাপ কমে পায়। রোগী শ্বাস নিতে নাও পারতে এবং দ্রুত ঞ্চিকিৎসাগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
চিনাবাদাম শিশুদের মধ্যে হওয়া অ্যালার্জির সবচাইতে সাধারণ কারণ এবং এগুলি বাদাম নয়। এগুলি শিম। কিন্তু চিনাবাদামে থাকা প্রোটিন গাছের বাদামের মতোই। এই কারণেই চিনাবাদামের প্রতি অ্যালার্জিযুক্ত শিশুরা বাদাম, পেকান বাদাম, হ্যাজেলনাট এবং কাজু জাতীয় গাছের বাদামে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখায়। দুধের অ্যালার্জি, সয়া অ্যালার্জি এবং ডিমের অ্যালার্জির মতো অন্যান্য খাবারের অ্যালার্জির বিপরীতে, অনেক বাচ্চাই বড় হওয়ার সাথে সাথে এই অ্যালার্জি কাটিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু চিনাবাদামের অ্যালার্জি সারা জীবন ত্রয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
তবে দেখা গেছে যে বাদামের অ্যালার্জিযুক্ত বাচ্চারা সাধারণত কোনও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ছাড়াই নারকেল খেতে পারে। কিন্তু যদি এটি বিরল ক্ষেত্রে ঘটে তবে অবিলম্বে আপনাকে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুদের মধ্যে বাদামের অ্যালার্জি নির্ণয় এবং চিকিত্সা
বাচ্চাদের মধ্যে বাদামের অ্যালার্জির চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গেই আরম্ভ হয়। একটি চিনাবাদাম অ্যালার্জি পরীক্ষায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
- ত্বক এবং রক্ত পরীক্ষা: শিশুর চিনাবাদাম বা অন্য কোনো ধরনের বাদামের প্রতি সত্যিই অ্যালার্জি রয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে এই ত্বকের পরীক্ষাটি সাহায্য করবে। বাদাম থেকে কিছুটা তরল নিষ্কাশন করে ত্বকের স্ক্র্যাচযুক্ত স্থানে ঢুকিয়ে দিয়ে লক্ষ্য করা হয় যে কোনও চুলকানি, লাল বা ঝাপসা দাগ দেখা যায় কিনা। রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়া হয়, রক্তের প্রবাহে অ্যালার্জেন-টাইপ অ্যান্টিবডি সনাক্ত করে তা নিশ্চিত করা যায়।
- আপনার সন্তানের খাদ্য ডায়েরি রক্ষণাবেক্ষণ করুন: আপনার সন্তানের খাদ্যাভ্যাস, কোনো খাবারের কারণে সৃষ্ট কোনো উপসর্গ এবং চাহিদা অনুযায়ী সে যে কোনো ওষুধ গ্রহণ করে সেদিকে মনোযোগ দিন। যদি আপনার সন্তান কোনও বিশেষ খাবারের প্রতি কোনও ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সেটা ডায়েরিতে লিখে রাখুন।
- ডায়েট: যখন পরিস্থিতি এমন হয় যে একটি নির্দিষ্ট ধরণের বাদাম বা অন্য কোনও খাবারের ধরণ আপনার সন্তানের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি নির্মূল ডায়েট দিয়ে শুরু হয়। চিনাবাদাম বা অন্য কোনও ধরণের খাবারের মতো সন্দেহজনক খাবারগুলি এক বা দুই সপ্তাহের জন্য ডায়েট থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং মাঝে মাঝে কিছুটা ব্যবধানের পর আবার ফিরিয়ে আনা হয়। এটি অ্যালার্জি এবং কোনও নির্দিষ্ট খাবারের মধ্যে কোনও যোগসূত্রস্থাপন করতে সহায়তা করে। যখন শিশুটি গুরুতর প্রতিক্রিয়াপ্রবণ হয়ে পড়ে তখন এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় না।
যদিও এই মুহূর্ত্তে শিশুর চিনাবাদামের কোনও নির্দিষ্ট অ্যালার্জির চিকিত্সা নেই, তবে অধ্যয়নগুলি পরিচালিত হচ্ছে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত বাদাম এবং বাদামযুক্ত খাবারগুলি বাদ দেওয়াই একমাত্র সমাধান। তবুও, চিনাবাদাম অনেক খাবারে থাকে, তাই যদি আপনি আকস্মিকভাবে কোনও জরুরী পরিস্থিতির সন্মূখীন হন, সেই কথায় মাথায় রেখকে সর্বদা আপনার সাথে এপিনেফ্রিন ইনজেকশন রাখুন। এছাড়াও, কখন এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করতে হবে তা সাবধানে শিখে নিন।
কখনই ভাববেন না যে একটি নির্দিষ্ট ধরণের খাবারে ততক্ষণ পর্যন্ত বাদাম থাকবে না যতক্ষণ না আপনি এটি নিজে প্রস্তুত করেন। খাবারের আইটেমের উপরে থাকা লেবেলকে কখনই উপেক্ষা করবেন না এবং যদি সন্দেহ থাকে তাহলে সেই খাবারটি বাদ দিন। যে কোনও অ্যালার্জি পরিস্থিতির জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকুন। এড়িয়ে যাবার জন্য এখানে কিছু চিনাবাদাম অ্যালার্জিযুক্ত খাবার রয়েছে:
- বেকড পণ্য
- হিমশীতল মিষ্টি ও আইসক্রিম
- এনার্জি বার
- বিভিন্ন ধরণের খাদ্যশস্য এবং গ্রানোলা
- খাদ্যশস্য সঙ্গে রুটি
- ক্যান্ডি
আপনার বাচ্চাদের মধ্যে গাছের বাদামের অ্যালার্জি কীভাবে সনাক্ত করবেন তা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সবচেয়ে গুরুতর ধরণের অ্যালার্জির মধ্যে একটি। সুতরাং, সম্ভাব্য লক্ষণগুলির প্রতি খেয়াল রাখুন এবং কী ধরণের খাবার এড়ানো উচিত সে সম্পর্কে বাচ্চাদেরও শেখান।