বাড়ন্ত শিশুদের জন্য দুধকে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। এটি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা শক্তিশালী দাঁত ও হাড়ের জন্য বাধ্যতামূলক এবং পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রোটিন, যা এনার্জি সরবরাহ করে এবং পেশি গঠন করে। সুতরাং, যদি আপনার বাচ্চা দুধ খেতে না চায়, তাহলে আপনি তার ডায়েটে এর বিকল্পগুলি চালু করার উপায় বের করতে পারেন।

এখানে দুধের কয়েকটি বিকল্প দেওয়া হল, যাতে আপনার সন্তান প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টের অভাব বোধ না করে।

দুধের বিকল্প বের করার গুরুত্ব

যেহেতু দুধ হল বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্টের ভাণ্ডার, সহজে পাওয়া যায় এবং পর্যাপ্ত তৃপ্তিগুণ রয়েছে, তাই এটি শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে প্রচুর অবদান রাখে। বিশেষত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D-এর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টের সুবিধা পেতে, ভারতে সাধারণত দুই বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য দিনে দুবার দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। 2 থেকে 4 বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন আড়াই কাপ (2 কাপ সম্পূর্ণ ও বাকি আধ কাপ) দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যদি আপনি বাচ্চাদের জন্য দুধের বিকল্পের সন্ধান করেন, সেক্ষেত্রে সয়া মিল্ক একটি সাধারণ পছন্দ। প্রাপ্যতার ভিত্তিতে কোকোনাট, আমন্ড, রাইস ও সিড মিল্কও খাওয়া যেতে পারে, কারণ এগুলিতে ল্যাকটোজ থাকে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে, আপনার শিশু দুধ না খেতে চাইলেও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যের প্রতি বিরূপ হয় না। যেমন, অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই, ইয়োগার্ট, চিজ, বাটার ইত্যাদি আপনার সন্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।

দুধকে একান্তই প্রতিস্থাপন করতে হলে শিশুর খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার সাবধানে যোগ করাতে হবে। এই খাবারগুলিকে শনাক্ত করার এবং এগুলির তাৎপর্য বোঝার সর্বোত্তম উপায় হল এগুলির স্বতন্ত্র নিউট্রিয়েন্টের ভিত্তিতে এগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করা।

এখানে একটি সহজ তালিকা দেওয়া হল-

  • ক্যালসিয়াম: ক্যালসিয়াম পেতে হলে রাগি, গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সয়া মিল্ক এবং ফলের রস দুধের দারুণ বিকল্প। কিন্তু, ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা খুব একটা সহজ নয়। সন্তানকে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খাওয়ানোর প্রয়োজন আছে কি না, তা বুঝতে পুষ্টিবিদ বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
  • ভিটামিন D: এটি ক্যালসিয়ামের সমগুণ বিশিষ্ট। যেহেতু এই ভিটামিনটি রোদ থেকে পাওয়া যায়, তাই ভিটামিনটি দেহে প্রবেশ করাতে রোদের সংস্পর্শে আসা প্রয়োজন। সুতরাং, যদি আপনার শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোকের সংস্পর্শে না আসে, তাহলে সম্পূরকগুলি প্রয়োজন হতে পারে, তবে কেবলমাত্র ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরেই এটি করা প্রয়োজন।
  • প্রোটিন: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মানবদেহে, বিশেষত শৈশবের প্রাথমিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রোটিন বৃদ্ধি, টিস্যু গঠন এবং উৎসেচক হরমোন ও অ্যান্টিবডি গঠনে সহায়তা করে। এটি এছাড়া টিস্যু মেরামত ও প্রতিস্থাপনেও সহায়তা করে। আমিষভোজীদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের চাহিদা মেটানো খুব একটা কঠিন নয়। মাছ, ডিম ও মুরগির মাংস এই নিউট্রিয়েন্টের দুর্দান্ত উৎস। বাচ্চাদের জন্য পাতলা ঝোল তৈরি করা যেতে পারে। সন্তানের খাদ্যতালিকায় ডিম দিয়ে বানানো বেশ কিছু সহজ এবং নরম খাবারেরও প্রচলন করা যেতে পারে। তবে ডিমে কোনও ধরনের অ্যালার্জি হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। অন্যদিকে, নিরামিষভোজীদের ডাল, বিনস, মসুর ডাল, টফু ইত্যাদি উদ্ভিদ-নির্ভর প্রোটিনের উৎস বেছে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অসম্পূর্ণ প্রোটিন। এগুলির প্রত্যেকটিতে কয়েকটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের অভাব রয়েছে যা প্রোটিনের সম্পূর্ণ কাঠামো গঠন করে। সুতরাং, বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি বা দুটি উৎস থেকে খাবার খাওয়া পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকেই প্রোটিন খেতে হবে, যাতে একটি উৎস অনুপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য অন্যটির পরিপূরক হতে পারে।
  • কার্বোহাইড্রেট: যদিও ল্যাকটোজ হল এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যে কারণে বাচ্চারা দুধ না খেতে চাইতে পারে, তবে অন্যান্য ধরনের কার্বোহাইড্রেট দিয়ে অবশ্যই দুধের শর্করাকে প্রতিস্থাপন করতে হবে, কারণ কার্বোহাইড্রেট এনার্জির একটি সমৃদ্ধ উৎস। চাল, আলু, মিষ্টি স্বাদের ফল, ফাইবারযুক্ত সবজি এবং মধু এগুলি সবই স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের বিকল্প।
  • ফ্যাট: এটি এনার্জির সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস। এটির অন্যান্য বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ রয়েছে, যেমন শরীরের অ্যাডিপোজ টিস্যু গঠন, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম, তেলবীজের পাশাপাশি ডার্ক চকোলেটও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। আমিষভোজীরা ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ এবং কয়েক ধরনের মাংসের খাবার থেকে তাদের শরীরে ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
  • মিনারেল: দুধে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং বিভিন্ন প্রকারের আয়রনের মতো মিনারেলও উপস্থিত থাকে। এগুলি ছাড়া, রেটিনল, ভিটামিন E, কয়েক ধরনের B ভিটামিন (ফোলেট, বায়োটিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ইত্যাদি), ভিটামিন C এবং ভিটামিন D (আলোচনা সাপেক্ষে) এগুলিও দুধের গঠনে অবদান রাখে। এসবের প্রতিটিই নির্দিষ্ট খাদ্য উৎসে উপস্থিত থাকে, তবে সার্বিকভাবে ফল ও সবজি ভিটামিন ও মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস। তাই, আপনার সন্তানের খাদ্যতালিকায় কমপক্ষে তিনটি আলাদা রকমের ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। স্যুপ, জুস, স্মুদি, স্যালাড, কারি বানিয়ে খেলেও উদ্দেশ্য সাধন হতে পারে। এগুলো ডায়েটে ফাইবারও যোগ করে, যা আবার দুধে থাকে না!

সুতরাং, দুধ বা তা থেকে বানানো খাদ্যদ্রব্যগুলি প্রস্তুতির অংশ নয় তা নিশ্চিত করতে হলে বাজার থেকে আপনি যে দ্রব্যগুলি কেনেন, তার পুষ্টিগত লেবেলগুলি পড়া গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে লেবেলে "ডেয়ারি-ফ্রি" শব্দগুচ্ছের অর্থ হল কোনও দুগ্ধজাত দ্রব্য এতে অন্তর্ভুক্ত নেই, অন্যদিকে "ল্যাকটোজ-ফ্রি" বলতে বোঝায় যে, কোনও ল্যাকটোজ উপস্থিত নেই, তবে ডেয়ারি ফুড অন্তর্ভুক্ত থাকলেও থাকতে পারে।

ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুষমভাবে খাদ্য পরিকল্পনা করে এবং সঠিক বিকল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত করে, আপনার সন্তানের দুধ খাতে না চাওয়ার সমস্যাটি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারেন।

আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা এবং গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন www.nangrow.in

আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ খাদ্যের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in ভিজিট করুন