এটি অনেকেই জানেন যে, মানুষের চোখ তাৎক্ষণিকভাবে উজ্জ্বল রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই কারণে বেকড প্রোডাক্ট এবং অন্যান্য খাবারে ব্যবহৃত আকর্ষণীয় কালারগুলি বিশেষত ছোট বাচ্চাদের এবং প্রি-টিনদের ক্ষেত্রে সর্বদা লোভনীয়। তবে দোকান থেকে কেনা সামগ্রীতে সবসময় নিরাপদ রং ব্যবহার করা যায় না, যদি না তা কোনো নামী ব্র্যান্ডের হয়। সুখবর হলো এই যে, প্রকৃতি আপনাকে নিরাপদে বেকড আইটেম তৈরিতে সাহায্য করার জন্য রং সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি সরবরাহ করে। খাবারে প্রাকৃতিক রং যোগ করলে স্বাদও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আর এই প্রবন্ধে প্রদত্ত পরামর্শগুলি অনুসরণ করার মাধ্যমে, এই রংগুলো আপনি সহজে ঘরেই তৈরি করতে পারেন।
ধাপ 1: রঙের উৎস নির্বাচন করুন
প্রতিটি ফুড আইটেমের নিজস্ব রং রয়েছে এবং বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কাছে একাধিক বিকল্প রয়েছে। কখনো কখনো, এটি আপনার ভাঁড়ার ঘরে বা রেফ্রিজারেটরে সহজলভ্য হতে পারে।
আপনার রান্নাঘর থেকে রঙের প্যালেট:
- লাল রং: বিটরুট বা টমেটো
- নীল রং: বেকিং সোডার সঙ্গে লাল বাঁধাকপি
- সবুজ রং: পালং শাক, মাচা
- হলুদ রং: হলুদ, জাফরান
- গোলাপী রং: রাস্পবেরি, স্ট্রবেরি
- কমলা রং: মিষ্টি আলু, গাজর, পাপরিকা
- বেগুনি রং: বেগুনি মিষ্টি আলু, ব্লুবেরি
- বাদামী রং: কোকো, চা, কফি
- কালো রং: স্কুইড কালি, সক্রিয় চারকোল
ধাপ 2: স্বাদটিকে শনাক্ত করুন
কোন রংটি আপনার প্রয়োজন সেটি এখন আপনি জানেন, ফলে এটির প্রদত্ত স্বাদ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। সব রংই প্রাকৃতিক উপাদান থেকে এসেছে এবং তাই তাদের স্বতন্ত্র স্বাদ রয়েছে যা কৃত্রিম রঙের নেই। এই স্বাদগুলি বেকড খাবারের সামগ্রিক স্বাদকেও প্রভাবিত করে। কোকো, কফি বা মাচা ব্যবহার করলে স্বাদে খুব একটা প্রভাব পড়বে না, কারণ এগুলি সাধারণত বেকিং-এর জন্য ব্যবহার করা হয়। যদিও, পালং শাক, হলুদ বা পেপারিকার ব্যবহার বেক করা জিনিসগুলিতে কড়া অস্বাভাবিক স্বাদ প্রদান করতে পারে।
ধাপ 3: একটি গাঢ় বেস ব্যবহার করুন
মনে রাখবেন যে প্রাকৃতিক রং কৃত্রিম রঙের মতো গাঢ় নয়, তবে আভাগুলির তারতম্য হয়। কনসেন্ট্রেটেড কালার বেস ব্যবহার করলে এন্ড প্রোডাক্টকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করা সম্ভব। বাড়িতে নিজের রং তৈরি করতে গেলে তীব্রতার প্রতি মোহ ত্যাগ করুন। পুরো ধারণাটি হল রঙে অস্বচ্ছতা নিয়ে আসা।
ধাপ 4: খাবারের উপর নির্ভর করে একটি তরল বা গুঁড়ো রং বেছে নিন
আপনি কীভাবে রংটি ব্যবহার করতে চান তার উপর নির্ভর করে গুঁড়ো কিংবা গাঢ় তরল রং তৈরি করুন। গুঁড়ো রং বেশি তীব্রতা দেয় এবং তরলের চেয়ে বেশি গাঢ় হয়। এটি সহজেই দ্রবীভূত হয় এবং প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা সহজ। মশলা, কফি বা কোকোর মতো সহজলভ্য পাউডারগুলি সরাসরি ফ্রস্টিংয়ের উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। জল, দুধ ইত্যাদির মতো যেকোনো তরলে গুলে এই গুঁড়ো রং ব্যবহার করুন।
বাড়িতে গুঁড়ো রং তৈরি করা
আপনার পছন্দের ফল ও শাকসবজি কিনুন এবং সেগুলি ফ্রিজে শুকিয়ে নিন। পরে, গ্রাইন্ডার বা প্রসেসর ব্যবহার করে এগুলিকে পালভেরাইজ করুন এবং সূক্ষ্ম গুঁড়োতে রূপান্তরিত করুন।
গাঢ় তরল রং তৈরি করা
একটি তরল রং তৈরি করার তিনটি উপায় রয়েছে:
- জুস: তরলটি হয় জল-ভিত্তিক কিংবা ফলের রস কিংবা ছাঁকা পিউরি হতে পারে। পছন্দসই ঘনত্বের তরল রং পেতে একটি জুস ব্যবহার করুন।
- পিউরি: পিউরি তৈরি এবং ব্যবহার করার সময়, একটি ঘন তরল তৈরি করতে কঠিন পদার্থগুলিকে ছাঁকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। পিউরিটিকে সেদ্ধ করে কিছুক্ষণ আঁচে বসিয়ে রাখুন।
- জল পদ্ধতি: রং গলানোর জন্য উপাদানটি জলে ভেজানো যেতে পারে। যেমন, স্যাফ্রনকে গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। যদিও, এটি সর্বোত্তম ফলাফল নাও প্রদান করতে পারে।
যাতে জলটি বাষ্পীভূত হয় এবং তীব্র রঙের সাথে ঘন গাঢ় তরল প্রদান করে, তার জন্য তরলটিকে সর্বদা সেদ্ধ করার ব্যাপারটি মনে রাখবেন। তরলটিকে মূল পরিমাণের প্রায় 1/4 ভাগ পর্যন্ত হ্রাস করানোর চেষ্টা করুন।
ধাপ 5: ব্যবহারের আগে রঙটি ঠান্ডা করুন
তাপ রংকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এটিকে হালকা করে দিতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় বেক করার ফলে রংটি ফ্যাকাশে বা ব্রাউনিশ শেডে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই যে কোনও রেসিপিতে রং যোগ করার আগে ঠান্ডা করে নিন। ফ্রস্টিং, গ্লেস, আইসিং বা যেকোনো ঠান্ডার প্রসঙ্গে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে বজায় থাকবে।
ধাপ 6: রঙগুলি ধীরে ধীরে যুক্ত করুন
পছন্দসই গাঢ়ত্ব না পাওয়া পর্যন্ত রঙগুলিকে সর্বদা ধীরে ধীরে যুক্ত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানে গুঁড়ো রঙের একটি সুবিধা রয়েছে কারণ তরল রঙের মতো গুঁড়ো রং রেসিপিকে প্রভাবিত না করেই অধিক পরিমাণে যুক্ত করা যেতে পারে।
উপসংহারে বলা যায়, প্রাকৃতিক খাদ্য রঞ্জক একাধিক খাদ্যের উৎসে পাওয়া যায় এবং আপনার রান্নাঘরে সহজলভ্য। এগুলো কালার যোগ করার পাশাপাশি খাবারে স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও যোগ করে, ফলে ব্যবহারে কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং, প্রাকৃতিক উপায়ের দিকে যান এবং পার্থক্যটি দেখুন।