অভিভাবক কর্তৃক তাদের বাচ্চাদের দুর্বল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার পূর্বে, এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে প্রতিটি বাচ্চাই পৃথক এবং তাদের স্বাদ ও পছন্দগুলিও অনোন্য। এবং আপনি যে পরিপূরকভাবে খাওয়ানো শুরু করার সময়ে যে অভ্যাস ভেতরে ঢুকিয়ে দেবেন, সেটিই বছরের পর বছর থেকে যাবে। যদিও, কখনো শুরুই না করার থেকে দেরীতে শুরু করা ভালো। তাই, আপনার বাচ্চা কিংবা প্রাক-কিশোরটি যদি ফল অথবা সবজি পছন্দ না করে, তখনও তার স্বাদকে সংশোধন করার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। শুরু করার পূর্বে, বাচ্চার সাধারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসগুলির ব্যাপারে জেনে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

সহজে দেখতে পাওয়া নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাসসমূহ

  • নিয়মিত প্যাকেটজাত জুস খাওয়া
  • শাকসবজি এড়িয়ে চলা
  • জাঙ্ক ফুডের নিয়মিত গ্রহণ
  • অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া
  • মিষ্টি জিনিস বেশি খাওয়া

বাচ্চাদের এই প্রতিটি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুঅভ্যাসে পরিবর্তন করা যায় যা পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় তাদের ভালো ফল প্রদান করবে।

এই সকল বদঅভ্যাসগুলি ভাঙার জন্য নীচে কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ দেওয়া হল:

নিয়মিত জুস খাওয়া

জুস হল ভিটামিন সি এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টের খুব ভালো উৎস, কিন্তু ক্যালোরির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাকে। অন্যদিকে, গোটা ফল, নিউট্রিয়েন্টস এবং ফাইবার সহ ভিটামিন সি এর মতো নিউট্রিয়েন্ট একই পরিমাণে সরবরাহ করে। অর্ধেক কাপ ব্রকোলি কিংবা অর্ধেকটি কমলালেবু থেকেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়। বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি এবং জুস খাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক সংক্রান্ত গবেষণা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদিও, জুস, গোটা ফলের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ নয়, এবং বাচ্চাদের ডায়েটের একটি ছোটো অংশ হতে পারে। অর্ধেক কাপের বেশি যে কোনো জিনিসই শক্ত খাবারের জন্য কম জায়গা রেখে পাকস্থলী পূর্ণ করে দিতে পারে।

অভ্যাস ভাঙতে কী করা উচিৎ?

জুসকে জল দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে দিন।

খেলাধুলোর পরেই জুস দেওয়ার আগে জল দিতে চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের তেষ্টা পেলে, তাদের মধ্যে বেশি জুস খাওয়ার প্রবণতা থাকে। জল দিয়ে তাদের তেষ্টা নিবারণ হয়ে গেলে, তাদের সামান্য পরিমাণ জুস দিন।

সিপার ব্যাবহার না করে সাধারণ কাপ ব্যবহার করুন

তাদেরকে সাধারণ কাপে জুস দিলে জুস খাওয়ার পরিমাণ হ্রাস পায় যেহেতু এটি এক নি:শ্বাসে দ্রুত খেয়ে নেওয়া সহজ নয়।

জল মিশিয়ে নিন

কৌশলটি হল জুসে জল মিশিয়ে দেওয়া। লেমন জুস ব্যাবহার করে ফ্লেভারকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন যদিও, খাওয়াটা প্রতিদিন 1-2 কাপের বেশি হবে না।

শাকসবজি এড়িয়ে চলা

ফলের মতো সবজিও ভিটামিন এবং মিনারেলের সঙ্গে সঙ্গে ফাইবারের ভালো উৎস। আপনার শিশুর প্রতিদিনের ডায়েটে সবজি যুক্ত করা একটি ভালো অভ্যাস এবং প্রথম জীবনেই শুরু করা উচিৎ। এরপর, এই অভ্যাসটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার খাদ্যতালিকায় থাকা সবজি সুস্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়, শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখে, এবং অনেক সাধারণ অসুখের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

এই সাধারণ পরামর্শগুলি নিশ্চিত করে যে আপনার শিশুটি সবজি খায়:

  • একটি ডিপ ব্যবহার করুন : হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ ছাড়া প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সস কিংবা প্রসাধন সবজিতে যুক্র করলে তা অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়।
  • ধৈর্য্যশীল হোন: আপনার শিশুর শাকসবজি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শাস্তি দিয়ে কিংবা চাপ না দিয়ে বরং তাকে সবজির গুরুত্ব এবং তাদের উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে দিন। আপনার শিশুটির সঙ্গে কয়েকবার সবজি খেলে সে আপনাকে দেখে শিখবে।
  • কিছু ফ্যাট যুক্ত করুন: সবজিতে বাটার অথবা চিজ অথবা অলিভ অয়েল যোগ করা যেতে পারে, যা স্বাদ বৃদ্ধি করবে, এবং সেগুলিকে আরও রুচিসম্মত করে তুলবে। কিছু গ্রাম ফ্যাট আপনার শিশুর কোনো ক্ষতি করবে না।
  • সবজিগুলিকে দর্শনীয় করে তুলুন: অতিরিক্ত্র সময় নিন এবং সবজির টুকরো দিয়ে একটি খাবারের পাত্র সাজান, যেটি আহারের আগে হামাস কিংবা যে কোনো কম ফ্যাটের সস দিয়ে মুখোরচক হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

বিরতিহীন স্ন্যাক্স খাওয়া

আহারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে স্ন্যাক্স খাওয়ার ফলে আপনার শিশুটির পেট ভরা লাগতে পারে এবং আহারের সময়ে তার খিদে না-ও পেতে পারে। এমনকি যদি সে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সও খায়, তাহলেও সেটা তার খিদের অনুভূতি এবং তৃপ্তির ওপর প্রভাব ফেলবে।

বারবার খাওয়াকে প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণ কিছু পরামর্শ।

জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন

আপনার ফ্রিজ এবং রান্নাঘরের সাজসজ্জা বদলে অস্বাস্থ্যকর খাবারকে দূরে রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে সেগুলিকে সামনে এবং মাঝে রাখুন যাতে এগুলি খেলে তেমন কোনো সমস্যা না হয়।

তাদেরকে পরিপূর্ণ স্ন্যাক্স খাওয়ান

ক্র্যাকার কিংবা ফলের দই সহযোগে পিনাট বাটার অথবা চিজের মতো উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ স্ন্যাক্স বাচ্চাদের অনেকটা সময় ধরে তৃপ্ত রাখে।

সময়সূচী মেনে চলুন

আপনার শিশুটিকে টেবিলে বসিয়ে আহার করান এবং স্ন্যাক্সের সময়সূচীও তৈরি করুন। আপনার শিশুকে সেই সময়সূচী পালনের বিষয়ে উপলব্ধ করুন এবং তাকে বোঝান যে শুধুমাত্র স্ন্যাক্সের সময়েই সে স্ন্যাক্স খেতে পারবে। শুরুতে এটি খুব কঠিন মনে হতে পারে, একটু অভ্যাস করলেই এটি খুব শীঘ্রই খুব সহজ হয়ে উঠবে।

অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া

কার্বোহাইড্রেট এনার্জির খুব দ্রুত একটি উৎস এবং আপনার শিশুটিকে নিয়মিত ক্ষুধার্ত করে তাড়াতাড়ি হজমও হয়ে যায়। নুডলস কিংবা সাদা ব্রেডের মতো কার্বোহাইড্রেট সকল প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট প্রদান করতে পারে না। এর বদলে তার খাদ্যতালিকায় ফাইবার এবং নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ গোটা শস্যের সিরিয়াল যুক্ত করলে ভালো হবে।

প্রোটিন দিয়ে কমপ্লিমেন্ট দেওয়া: মাংস কিংবা বিনস, ডিম কিংবা কম ফ্যাটের দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করে দিন। এমনকি এক গ্লাস দুধ কিংবা এক চামচ পিনাট বাটার উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ হতে পারে, যা আপনার শিশুর জন্য যথেষ্ট ভালো।

অতিরিক্ত সুগার খাওয়া

সকল শিশুই মিষ্টি খেতে ভালোবাসে এবং সবসময় তাদের বারণ করা সম্ভব নয়। যদিও, মিষ্টি খাওয়া একগাদা ক্যালোরি যোগ করে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে স্থূলত্ব এমনকি ডায়াবেটিসের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং, এই সাধারণ পরামর্শগুলি অনুসরণ করুন:

  • আপনার শিশুটি যে খাবারগুলি খাচ্ছে, তার সুগারের পরিমাণ দেখুন।
  • বেশি সুগার আছে এমন খাবার বাড়িতে কম আনুন।
  • খাওয়ার ওপর সীমা নির্ধারণ করুন
  • ফল কিংবা শুকনো ফলের মতো অন্যান্য বিকল্পের মিষ্টি খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন।

আপনার বাচ্চার জন্য ওপরে উল্লেখ করা পরিমাপগুলির মাধ্যমে খাবারের বদঅভ্যাসগুলি সারা জীবনের মতো পরিবর্তন হয়ে যাবে। মনে রাখবেন যে এই পরামর্শগুলি এক রাতের মধ্যেই কাজ করবে না, কিন্তু অধ্যবসায় থাকলে সাফল্য আসবে।