আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, বড়োদের তুলনায় ছোটদের পাকস্থলী ক্ষুদ্র হলেও, তাদের শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা অনেক বেশি। এর কারণ হচ্ছে যে এরা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। এবং আপনার শিশু একবার স্কুলে যাওয়া শুরু করলে, তখন এককালীন শক্তির বিস্ফোরণের তুলনায়, তার সারাদিন ধরে চলার জন্য স্থায়ী শক্তির প্রয়োজন পড়বে। কোন খাবারগুলি আপনার শিশুকে স্থায়ী শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে সেই ব্যাপারে চিন্তা করছেন? আপনার সাহায্যের জন্য এই নিবন্ধটি এখানে দেওয়া হল।
স্থায়ী শক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কেবলমাত্র সংক্ষিপ্ত শক্তি সরবরাহকারী কিন্তু খুব কম পুষ্টিগুণ সম্বলিত খাবার খাওয়া বেড়ে ওঠা শিশুদের শক্তির চাহিদা টিকিয়ে রাখতে পারে না। কিছু উদাহরণ হল শর্করাযুক্ত খাবার এবং কোলা ও সোডার মতো মিষ্টি পানীয়।
- সঠিক, স্থায়ী পুষ্টির অভাব বাচ্চা এবং প্রাক-কিশোরদের মধ্যে তৈরি হওয়া আলস্য এবং ক্লান্তির প্রধান কারণ।
- পুষ্টির মান, শিশুদের কর্মক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তির সঙ্গে সমানুপাতিক।
- বয়ঃসন্ধিকালে, অথবা মেয়েদের দশ বছর এবং ছেলেদের বারো বছর বয়সে শিশুরা বেড়ে ওঠার একটি উচ্ছ্বাস অনুভব করে। সেই সঙ্গে তাদের খিদের অনুভূতিও বাড়তে থাকে। তাই, তাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ছাড়াও ম্যাক্রো ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের প্রয়োজন পড়ে।
কোন জিনিসটা স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের স্থায়ী শক্তির যোগান দিতে পারে?
স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট:
সময়ে সময়ে বার বার বলা হয়েছে, সকালের ব্রেকফাস্ট হল দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। স্কুলে যাওয়া শিশুদের জন্য, উন্নত শিক্ষা এবং পড়াশোনার উচ্চতর কাজকর্মের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট যুক্ত। এটি সতর্কতা এবং মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে এবং শিশুদের সারাদিন কাজের ক্ষমতা সরবরাহ করে, যার ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ হয়। কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের সংমিশ্রণ একটি আদর্শ ব্রেকফাস্টের পথ প্রশস্ত করে। এটাই শক্তির স্তর ধরে রাখার চাবিকাঠি।
ফল এবং দইযুক্ত খাদ্যশস্য, পিনাট বাটার এবং ফলের সাথে মিশ্রিত গোটা শস্যের টোস্ট এবং ডিম বাচ্চাদের দেওয়া যেতে পারে। আপনি দুধ ও কিশমিশ ইত্যাদি দিয়ে ওটস-ও দিতে পারেন।
কার্বোহাইড্রেট:
আপনার শিশুর সারাদিন চলার জন্য শুধু ব্রেকফাস্ট পর্যাপ্ত নয়। অন্যান্য সুষম আহারও অবশ্য-প্রয়োজনীয়। ফল, সবজি এবং মধুর মতো তাৎক্ষণিক শক্তিপ্রদানকারী সাধারণ কার্বোহাইড্রেট, এবং সম্পূর্ণ শস্য এবং স্টার্চযুক্ত সবজির মতো তৃপ্তি প্রদানকারী জটিল কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য, আপনার শিশুর শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করবে। বয়ঃসন্ধিকালে, তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরির 50% থেকে 60% জটিল কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া উচিত। ক্যান্ডি,সফট ড্রিঙ্কস এবং কুকিজ থেকে পাওয়া সাধারণ কার্বোহাইড্রেট বাচ্চাদের জন্য অধিক শক্তির খাদ্য হিসাবে কাজ করলেও তা কেবল অল্প সময়ের জন্য। এনার্জি লেভেলও দ্রুত কমে যায়। সাদা পাউরুটি, পাস্তা এবং সাদা চালের মতো প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটে খুব কম কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং সেইকারণে এটি স্থায়ী শক্তির বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখে না।
এই প্রসঙ্গে, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পর্কে জানাও জরুরি। এই স্কোরটি একটি খাবার বা আহারের জন্য গণনা করা হয় যেটি নির্ভর করে নির্দিষ্ট খাবারটি খাওয়ার পরে রক্তের গ্লুকোজের প্রতিক্রিয়ার উপর। একটি উচ্চ ফাইবার, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাদ্য গ্লুকজ কম রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এবং বেশী পরিমাণে স্থায়ী গ্লুকোজ মুক্তির কারণ হবে। ওটমিল এবং স্প্রাউট হল কম-GI, ফাইবার সমৃদ্ধ জটিল কার্বোহাইড্রেট। এগুলো হজম করতে অনেক সময় লাগে, এবং তাই, আপনার বাচ্চাদের শক্তির এককালীন বিস্ফোরণ দেওয়ার বদলে, তারা সারাদিন তাদের শক্তির মাত্রা বজায় রাখে।
ফ্যাট:
সঠিক ধরনের ফ্যাট বাছাই করা আপনার শিশুকে একত্রভাবে শক্তি প্রদান করতে পারে। তাই, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিবর্তে তাদেরকে অলিভ অয়েল, বাদাম ও বীজের মতো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রদান করুন। আপনার বাচ্চাদের সুষম অনুপাতে উদ্ভিজ্জ তেল, সামুদ্রিক খাবারের মতো পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং জলপাই তেল, বাদাম এবং বীজের মতো মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দিন। ডিম, আমন্ড, কাজু, দই ও এক টেবিল চামচ ঘি ভালো ফ্যাটের উৎস।
প্রোটিন:
মাংস, মাছ, ডিম, মটরশুটি, বাদাম, সয়া এবং কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্যের মতো প্রোটিনের ভাল উৎসগুলি আপনার বাচ্চার এনার্জি লেভেলকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে। আপনার শিশুর খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের অভাব দেখা দিলে প্রোটিন সেই অভাব পূর্ণ করে দেয়।
হাইড্রেশন:
বেশিরভাগ বাচ্চাদের মধ্যে কম শক্তির মাত্রার একটি প্রধান কারণ হল ডিহাইড্রেশন। পুষ্টির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিদিন মেয়েদের 11 কাপ এবং ছেলেদের 16 কাপ জল প্রয়োজন। যে কোনও ধরনের শারীরিক কার্যকলাপের পরে হাইড্রেটিং অপরিহার্য।
চা, কফি, চকোলেট, কোমল পানীয় ইত্যাদির মধ্যে ক্যাফেইন পাওয়া যায় । আপনার বাচ্চাদের তাৎক্ষণিক শক্তি দিতে পারে, কিন্তু এই শক্তি স্থায়ী হয় না। ক্যাফেইন আপনার বাচ্চার ঘুমের নিয়মকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই ক্যাফেইনের পরিবর্তে সাধারণ জল দিয়ে তাদের হাইড্রেট করুন।
শেষ কথা
উপরে আলোচিত বিষয়গুলি ছাড়াও, আপনার বাচ্চার আহারের ধরনও তার শক্তির মাত্রা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। স্বাস্থ্যকর কিন্তু অনিয়মিত আহার ক্লান্তির কারণ হতে পারে, অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণে আহার আপনার বাচ্চার ওজন অত্রিক্ত করে তুলতে পারে এবং তারপর অলস করে তোলে। মনে রাখবেন, প্রত্যেক শিশুই আলাদা এবং তাদের পৃথক পৃথক শক্তির প্রয়োজন হয়। কারো কারো জন্য দিনে তিনটি আহার যথেষ্ট হতে পারে এবং কারো কারো জন্য বার বার ও স্বল্প আহার ভালো হতে পারে। সুতরাং, একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন এবং সেই অনুযায়ী খাবারের পরিকল্পনা করুন।