যদি আপনার শিশুটির টাইপ 1 ডায়াবেটিস কিংবা জুভেনাইল ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাবে একজন অভিভাবকের কাছে সেটা চিন্তার এবং হতাশার কারণ হয়ে উঠতে পারে। আপনি জানেন যে আপনার বাচ্চার শরীরে  ইনসুলিনের অভাব এই পরিস্থিতির কারণ যেখানে প্যাংক্রিয়াস গ্ল্যান্ড ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ইনসুলিন এমন একটি হরমোন যা এনার্জির জন্য কার্বোহাইড্রেট থেকে প্রাপ্ত সুগার কিংবা গ্লুকোজ তৈরির ক্ষেত্রে শরীরের প্রয়োজন হয়। তাই, যদি আপনার বাচ্চার শরীরে ইনসুলিনের অভাব ঘটে, তবে তার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, যা এই ডায়াবেটিক অবস্থার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যাইহোক, এই পরিস্থিতিকে ভালোভাবে বোঝার এবং আপনার শিশুটির জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে এই নিবন্ধটি আপনাকে সাহায্য করবে।

বাচ্চাদের মধ্যে টাইপ 1 ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ

  • টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা অতিরিক্ত তেষ্টা অনুভব করে এবং বারবার জল পান করে ও প্রস্রাব করে। রক্তে সুগারের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে, শিশুরা বিছানাও ভিজিয়ে ফেলতে পারে।
  • শরীরের কোশে পর্যাপ্ত সুগার না থাকার কারণে, আপনার শিশুটি অত্যন্ত ক্লান্তি এবং খিদে অনুভব করবে।
  • জুভেনাইল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একটি শিশুর ওজন খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। এনার্জির অভাব শরীরে মজুত থাকা ফ্যাটের পরিমাণও কমিয়ে দিতে পারে।
  • টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন কিংবা স্কুলের কর্মক্ষমতার অবনতির মতো কিছু আচরণগত পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
  • তাদের শরীর সুগারের পরিবর্তে ফ্যাট পোড়ার কারণে তাদের শ্বাসে ফলের মতো গন্ধ হতে পারে।
  • জুভেনাইল ডায়াবেটিসের কারণে অস্বচ্ছ দৃষ্টির মতো সমস্যা হতে পারে কারণ হাই ব্লাড সুগার চোখের লেন্সের থেকে রস টেনে নেয়। আপনার শিশুর কোন একটি জিনিসের ওপর ফোকাস করতে কষ্ট হবে।
  • টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মেয়েদের মধ্যে যৌনাঙ্গে ঈস্টের সংক্রমণ খুব সাধারণ একটি বিষয়।

জুভেনাইল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের জন্য ডায়েটের পরামর্শ

প্রথমে, একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন যে আপনার টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর জন্য একটি আহারের পরিকল্পনা প্রস্তাব করবে। আবার, জুভেনাইল ডায়াবেটিসকে সামলানোর জন্য কিছু সাধারণ খাদ্য নির্দেশাবলী মেনে চলতে পারেন।

  • টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের একটি সুষম ডায়েট এবং আহারের সঠিক পরিকল্পনা মেনে চলা উচিৎ। তাদের নিয়মিত বিরতি নিয়ে ছোটো ছোটো আহার করা উচিৎ।
  • প্রস্তাবিত আহারের পরিকল্পনায় অতিরিক্ত ফ্যাট এবং ক্যালোরির সীমা নির্ধারণ করতেই হবে, নাহলে এর ফলে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে অথবা হার্টের রোগের মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে
  • আপনাকে তাদের খাবার খাওয়াকেও কমাতে হবে নাহলে হাইপারটেনশন এবং ম্যাক্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বেড়ে জাএতে পারে। তাই, যেসব জাঙ্ক ফুডে নুন বা চিনি বেশি থাকে সেগুলোকে দূরে রাখুন।
  • 2 বছর বেশী বয়সী বাচ্চাদের ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট দেওয়া উচিৎ যাতে রক্তে সুগারের রিলিজ হওয়াটা কমে যেতে পারে।

প্রোটিন গ্রহণের বিষয়টিকে ভাবনার রাখার কারণে, জুভেনাইল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর প্রস্তাবিত পরিমাণে সেটি খাওয়া উচিৎ। ক্যালোরির সম্পূর্ণ চাহিদার মধ্যে প্রোটিন কেবলমাত্র 12-20% থাকা উচিৎ।

  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত এনার্জির হ্রাস ঘতে, এবং সেই কারণে তাদের ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলের সঙ্গে বেশী পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট দেওয়া উচিৎ।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে ফাইবারের গ্রহণকে বাড়াতে হবে। তাদের খোসা সমেত ফলের পাশাপাশি বীজ, সবজি, শিম, ওটস, বিনস, এবং গোটা শস্যের সিরিয়াল দেওয়া উচিৎ। দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং কার্বোহাইড্রেটের শোষণকে কমাতে পারে। এটা অবশেষে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে দেয়। যদিও কেবল 3 বছর বয়সের পরেই উচ্চ ফাইবারযুক্ত ডায়েট দেওয়া যেতে পারে।

সর্বোপরি; একজন ডায়াবেটিক শিশুকে ঘুমানোর সময়ে কম গ্লাইসেমিক সূচক এবং প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ কিছু স্ন্যাক্স দেওয়া উচিৎ। এটি ব্যায়াম কিংবা খেলাধুলার পরের বিলম্বিত হাইপোগ্লাইসেমিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে। একটু সতর্কতা এবং প্রচুর স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের সঙ্গে, আপনার বাচ্চার অন্য বাচ্চাদের মতোই জীবনযাপন করা উচিত।