বর্তমানের দ্রুতগতির পৃথিবীতে, যেখানে জীবনের সকল ক্ষেত্রকে প্রযুক্তি অধিকার করে নিচ্ছে, তখন প্রতিদিনের কাজগুলোকে তাড়াতাড়ি এবং সহজভাবে করার জন্য আমরা নানা পথ খুঁজে বেড়াই। রান্না করা হল এরকমই একটি কাজ যেটা বানাতে, পরিপাক করতে এবং সাজিয়ে দিতে আপনার বেশ কিছুটা সময় নিয়ে নেয়। এই ক্ষেত্রে প্যাটজাত খাবার প্রায়শই আপনার কাজে আসে। ব্যস্ত সময়সূচীর জন্য যথাযথ এই খাবারগুলি যেহেতু সহজেই সংরক্ষণ করা যায় এবং খাওয়ার জন্য তৈরিই থাকে, তাই গত কয়েক বছরে এই ধরণের খাবারগুলির জনপ্রিয়তা খুব দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও, বিবেচনার সঙ্গে সেগুলিকে বাছাই করাই হচ্ছে ভালো স্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি।
প্যাকেটজাত খাবার কি প্রসেস করা হয়?
এই সকল খাবারের ভালো থাকার সময়কালকে বাড়ানোর জন্য, তাদেরকে কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হয়, এবং, তারপর, তাদেরকে আর প্রাকৃতিক হিসেবে গণ্য করা যায় না। অনেক মানুষ মনে করেন যে প্যাকেটজাত খাবার ক্ষতিকর। যদিও, সকল প্যাকেটজাত খাবার অস্বাস্থ্যকরের তালিকায় পড়ে না। উদাহরণ, দই অনেকসময় প্যাকেটজাত খাবার হিসেবে কেনা হলেও সেগুলি ক্ষতিকর নয়।
এখানে, সঠিকভাবে বেছে নেওয়ার জন্য প্যাকেটজাত খাবারের ভাল-মন্দের দিকগুলি সমর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। প্যাকেটজাত খাবার স্বল্প প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে অধিক প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত হতে পারে। কুচানো ও ভাজা বাদাম এবং প্যাকেট করা সবুজ পাতাযুক্ত সবজির মতো খাবারগুলিকে স্বল্প প্রক্রিয়াজাত বলা যেতে পারে, অন্যদিকে, ঠান্ডা প্যাটিজ, নাগেটস এবং মাইক্রোওয়েভে গরম করে নেওয়া যাবে এমন সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার মতো খাবারগুলিকে অধিক প্রক্রিয়াজাত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। ক্যানজাত ফল, টম্যাটো, এবং অন্যান্য সবজিকে তাদের তাজাভাব বাজায় রাখার জন্য, এবং পুষ্টিগুণকে অটুট রাখতে প্যাকেটজাত করা হয়, ফলে সেগুলিকে ক্ষতিকারর হিসেবে ধরা হয় না।
প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় স্বাস্থ্যকর জিনিস বাছবেন কীভাবে?
প্রায়শই, প্যাকেটজাত খাবারের সঙ্গে বেশী পরিমাণে সুগার এবং প্রিজারভেটিভ মিশিয়ে দেওয়া হয়। যদিও, এটা বুঝতে হবে যে সমস্ত প্যাকেটজাত খাবারই এইভাবে করা হয় না। কখনো কখনো, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত উপাদান খাবার থেকে সরানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। যেহেতু, প্যাকেটজাত খাবার আমাদের প্রতিদিনের কাজকে সহজ করে তোলে, এবং আমাদের খিদে মেটানোর জন্য সহজ একটি বিকল্প, তাই সঠিক (পড়ুন স্বাস্থ্যকর) জিনিসটি বাছাই করে নেওয়াটাও কাজের একটি অংশ। প্যাকেটজাত খাবার কখনো কখনো আপনাকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতেও সাহয্য করতে পারে। এইসকল খাবার এবং পানীয়গুলি কখনো কখনো প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল দিয়ে সুরক্ষিত থাকে।
সুতরাং, প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময়ে, লেবেলটিকে ভালোভাবে পড়ার বিষয়টি আপনাকে অভ্যেস করে নিতে হবে। বাস্তবে, খুব কম মানুষই প্রতিটি প্যাকেটজাত খাবারের প্যাকেটের গায়ে প্রিন্ট করা লেবেলটি পড়েন। খাবারের প্যাকেট তার ভেতরে থাকা জিনিস সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়, কিন্তু পুষ্টির জায়গাটিতে অধিক মুল্যবান তথ্য সম্বলিত থাকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেগুলি লিখে রাখা প্রয়োজন
- প্রক্রিয়াজাত খাবারটিতে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম, ফ্যাট এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণটি দেখে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতি বারে কত পরিমাণ ক্যালোরি থাকছে তা দেখে নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে বলবে যে এই খাবারটি একবার খাওয়ার ফলে আপনি কতটা এনার্জি পাবেন।
- নিউট্রিয়েন্টের তথ্য দেখার সময়ে, সেই খাবারগুলি বেছে নিতে বলা হচ্ছে যার মধ্যে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টগুলি বেশী পরিমাণে রয়েছে, এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আপনি যে নিউট্রিয়েন্টগুলি এড়াতে চান, সেগুলি কম পরিমাণে রয়েছে। সুতরাং, সেই খাবারগুলি বেছে নেওয়া উচিত যেগুলিতে সোডিয়াম, মেশানো সুগার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম পরিমাণে আছে কারন এই নিউট্রিয়েন্টগুলি স্থূলত্ব, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সংযুক্ত।
- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ডি, এবং ফাইবার যেসব প্যাকেটজাত খাবারে বেশি আছে, সেগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
- কখনো কখনো, খাবারের লেবেলগুলি আপনাকে কোনো একটি নিউট্রিয়েন্টের জন্য প্রস্তাবিত খাদ্যের পরিমাণ অথবা RDA সম্পর্কে জানাতে পারে। সুতরাং, তথ্যগুলির দিকে তাকিয়ে, আপনি আন্দাজ করতে পারবেন যে আপনার কতটা খাবার খাওয়া উচিৎ।
- প্রদেয় উপাদানের তালিকাটিও আপনার পড়া উচিৎ। তালিকায় যেটি সবথেকে ওপরে উল্লেখ করা থাকে, খাবারটির মধ্যে সাধারণত সেটিই সবথেকে বেশী পরিমাণে থাকে। এবং সবথেকে নীচে থাকা জিনিসটি সবথেকে কম পরিমাণে থাকে। সুতরাং, যদি কোনো খাবারে কার্বোহাইড্রেট অথবা ফ্যাট সবথেকে ওপরে থাকে, তবে সেটিকে আপনার পরিমিতভাবে খাওয়া উচিৎ।
- কোন খাবারে আপনার অ্যালার্জির সংক্রমণ হতে পারে কি না তা জানার জন্যও লেবেল পড়া ভালো।
সুতরাং, পরের বার থকে গ্রসারি কেনার সময়ে, স্বাস্থ্যকর বিকল্পের জন্য মূল্য়ের তুলনা না করে জিনিজের লেবেলের তুলনা করলে ভালো হবে। প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময়ে, এটা মাথায় রাখবেন যে আপনি এই খাবারগুলি কতবার খাবেন। কিছু খাবার রোজ খাওয়া যেতে পারে, আবার কিছু খাবার মাঝে মধ্যে খাওয়া উচিৎ। সুতরাং, কেউ স্বাস্থ্যবান থাকতে চাইলে বা না চাইলে, তাকে খাবারের পুষ্টিগুণের সঙ্গে সঙ্গে সেটি কতবার খাবেন সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
সারসংক্ষেপ
ফলে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার শিশুর জন্য সব প্যাকেটজাত খাবার খারাপ নয়। বিবেচনার সঙ্গে সেগুলি বাছাই করা এবং সঠিক পরিমণে সেগুলি গ্রহণ করা একটি সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। ভালো থাকার সময়কালকে বাড়ানোর জন্য, প্যাকেটজাত খাবারকে কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এবং খাবারের ধরণের ওপর তাদের প্রক্রিয়ার স্তর নির্ভর করে। তাই, অধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিমিতভাবে খাওয়া যেতে পারে, স্বল্প প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তা প্রতিদিন খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর। সুতরাং, খাবারের ধরণ এবং প্যাকেটের ওপরের লেবেলে ছাপানো পুষ্টির মানগুলি সম্পর্কে পড়ার বিষয়টি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।