আপনার সন্তান দুধ দেখে যতই মুখ ব্যাজার থাকুক না কেন, একজন মা হিসেবে আপনি জানেন যে এই পানীয়টি তার স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হাড় ও পেশির কাঠামো বৃদ্ধি থেকে শুরু করে এনার্জি প্রদান এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রতিদিন খাওয়া প্রয়োজন। এটি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস হিসেবে পরিচিত। তাই এই লেখাটি থেকে জেনে নিন শিশুকে কতটুকু দুধ দিতে হবে, কোন ধরনের দুধ থেকে বেছে নিতে পারেন, কোন কোন রেসিপিতে দুধের মজাদার ব্যবহার রয়েছে।

শিশুদের দিনে কতটুকু দুধ পান করা উচিত?

ভারতীয় খাদ্য নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন 1 থেকে 3 বছর বয়সী শিশুর জন্য 5 বার পর্যন্ত দুধ বা 500 মিলিলিটার দুধ এবং সংশ্লিষ্ট ডেয়ারি প্রোডাক্ট প্রয়োজন। এটি তার দৈনিক প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার 16.7 গ্রাম পূরণ করতে পারে। সুতরাং, যদি কোনও শিশু সারাদিন দই, চিজ, বা পনিরের মতো অন্য কোনও ডেয়ারি প্রোডাক্ট না খায়, তবে  একটি শিশুর জন্য  দুধের প্রয়োজনীয়তা হবে আড়াই গ্লাস। এতে তার দৈনিক 600 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। 

4 থেকে 6 বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে, দুধ এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা একই থাকে, অন্যদিকে প্রোটিনের চাহিদা কিছুটা বেড়ে প্রতিদিন 20.1 গ্রাম হয়। তাই এই সময়ে আপনার বাচ্চার বেশি দুধ খাওয়ার প্রয়োজন হবে।

শিশুর খাদ্যাভ্যাসে দুধের ভূমিকা

এই স্বাস্থ্যকর সাদা তরলটি পান করার উপকারিতা অনেক:

  • দুধ দাঁত  ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে
  • পেশীর সঠিক সংকোচনের জন্য এটি খাওয়া প্রয়োজন
  • দুধ আপনার শিশুকে শক্তি যোগাতে এবং সক্রিয় রাখতে পারে
  • এটি ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ করতে পারে, যেগুলি শরীরের একাধিক ক্রিয়াকলাপের যত্ন নেয়

বেছে নেওয়া উচিত এমন দুধের ধরন

শিশুদের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে, বাবা-মায়েরা এর ফ্যাটের পরিমাণ এবং শৈশবের স্থূলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। তাই এই কথাটি মাথায় রেখে কয়েকটি টিপস দেওয়া হল:

  • 1 থেকে 2 বছর বয়সের মধ্যে আপনার শিশু সম্পূর্ণ দুধ পান করতে পারে। এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্যাট থাকলেও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই ধরনের ফ্যাটই প্রয়োজন।
  • 2 বছর বয়সের পর যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় বা পারিবারিকভাবে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ইতিহাস থাকার কারণে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হন, তাহলে তারা কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খাওয়ানো শুরু করতে পারেন।

আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট রাখার বিভিন্ন উপায়

দুধের উপকারিতা ও কার্যকারিতা সর্বজনবিদিত, কিন্তু, শিশুরা প্রায়ই দুধের স্বাদ ও গন্ধ অপছন্দ করে এবং তা পান করতে অস্বীকার করে। আপনার বাচ্চার ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয়, তাহলে চিন্তা করবেন না। কারণ, দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অনেক উপায় রয়েছে।

জেনে নিন এমন কিছু সুস্বাদু খাবার যা আপনি বানাতে পারেন:

  1. মিল্কশেক: এই পানীয়টি দুধের স্বাদকে সুন্দরভাবে ঢেকে দিতে পারে, তারপরেও এটি দারুণ স্বাদযুক্ত হয়। একটি ফল নিন। সেটি আপেল, লিচি, স্ট্রবেরি কিংবা অন্য যেকোনও ফল হতে পারে, যাতে লেবুর নির্যাস নেই এবং তারপর সেটি টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। এরপর টুকরোগুলো একটি মিক্সারে নিয়ে দুধ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। কিছু ফল প্রাকৃতিকভাবে এতটাই মিষ্টি হয় যে, এতে সুগার যোগ করার প্রয়োজন হয় না, যা আপনার মিল্কশেককে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে! এর পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য শেকটিতে কাটা বা গুঁড়ো বাদাম যোগ করুন।
  2. চিজকেক: যদি এমন একটি খাবার বানানো যায় যা দুধ থেকে তৈরি বেশিরভাগ উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করে, তবে ঝামেলাহীন চিজকেক বানানো সহজ।
    • প্রথমে কয়েকটি সাধারণ বিস্কুট নিন, তাতে প্রায় 2 চা-চামচ বাটার মেশান এবং মিহিভাবে গুঁড়ো করুন।
    • হয়ে গেলে, একটি থালায় গুঁড়ো করা মিশ্রণটি নিয়ে হাতের চাপে সমান করে নিন এবং একটি গ্লাসের নীচের অংশটি ব্যবহার করে ভাল করে চাপ দিন।
    • এরপর স্টোভে প্রায় 1 কাপ জল গরম করে 10 গ্রাম চায়না গ্রাস (আগার-আগার) যোগ করুন।
    • যতক্ষণ না ভাল করে মেশানো হচ্ছে ততক্ষণ গরম করতে থাকুন এবং তারপর ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা হতে দিন। 
    • বিস্কুট বেস তৈরির জন্য ব্যবহৃত একই ব্লেন্ডারে, সমপরিমাণ পোর্শনে প্রত্যেক ক্ষেত্রে 200 গ্রাম করে কটেজ চিজ (ঘরে তৈরি পনির দইযুক্ত দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে), তাজা ক্রিম এবং কনডেন্সড মিল্ক (আপনি একটি বাড়িতে তৈরি সংস্করণ ব্যবহার করতে পারেন) যোগ করুন। সবটা সমানভাবে মিহি করতে ব্লেন্ড করুন।
    • এতে চায়না গ্রাসের মিশ্রণটি এবং আপনার পছন্দের যে কোনও তাজা ফল, যেমন আম বা স্ট্রবেরি যোগ করুন। আবার ভাল করে ব্লেন্ড করে নিন।
    • আগে তৈরি করা বিস্কুট বেসের উপর এই মিশ্রণটি ঢেলে দিন, কিছু গ্রেট করা চকোলেট দিয়ে গার্নিশ করুন (ডার্ক, পিওর চকোলেট অতিরিক্ত সুগার ও দুধ দিয়ে তৈরি শক্ত চকোলেটের পরিবর্তে বেশি ভাল চয়েজ) এবং 2 ঘণ্টা মতো ফ্রিজে রাখতে দিন।
    • পরিবেশন করা হলে আপনার সন্তান এই সুস্বাদু কেকটি অবশ্যই পছন্দ করবে! পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য, আপনি এমনকি তাজা কাটা ফল দিয়েও কেকটি সাজাতে পারেন।
  3. ফ্লেভারড ইয়োগার্ট: বেশিরভাগ শিশু সাধারণ দই খাওয়ার সময় মুখ ব্যাজার করে থাকে, তাই এতে ফ্লেভার যোগ করলে তারা হয়ত খেতে চাইতেও পারে। একটি বাটিতে দই নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ চিনি বা মধু মিশিয়ে ঘেটে নিন (বেশি ঘাটবেন না, কারণ ফলগুলিতে প্রাকৃতিক সুগার থাকে), যাতে এটি নরম এবং ফ্লাফি হয়ে যায়। এর সঙ্গে খাঁটি আম (বা যে কোনও শাসযুক্ত ফল) যোগ করুন, তাহলেই খাবারটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই খাবারটি খুব শীঘ্রই আপনার সন্তানের পছন্দের হয়ে উঠতে চলেছে।

মিশনটি সম্পন্ন হয়েছে!

যদিও বেশিরভাগ মায়েরা মনে করেন যে তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানো প্রচুর ঝামেলাময় কাজ এবং গ্লাস হাতে নিয়ে তাদের পিছনে পিছনে দৌড়ঝাপ করা ও তাদের মন ভুলিয়ে খাওয়ানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করা প্রয়োজন, তবে এসব না করে এক ধাপ এগিয়ে সৃজনশীল হন। আপনার সন্তান যদি সাধারণ দুধ পছন্দ না করে, তাহলে তাকে তা দেবেন না। এটাকে একটা লোভনীয় খাবারে পরিণত করুন, যাতে আপনি গোপনে আপনার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেন।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in-এ ভিজিট করুন