বর্তমান যুগে বেশিরভাগ শহুরে পরিবারেই সদস্যসংখ্যা অনেক কমে গেছে, সেইসাথে বাবা-মা দুজনেই কর্মরত থাকে। এখানেই ডে কেয়ারের প্রসঙ্গ আসে। যে সব বাবা-মায়ের সন্তানরা ডে-কেয়ারে যায়, তাদের জন্য সঠিক পুষ্টি এক নিত্য চিন্তার বিষয়। আপনি বাড়িতে আপনার সন্তানকে যে পুষ্টি প্রদান করেন, তা আপনি আদর্শভাবে আপনার সন্তান ডে-কেয়ার সেটআপে পবে বলে আশা করেন। কিন্তু সেটি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

এই নিবন্ধটি আপনাকে ভাল পুষ্টির ক্ষেত্রে আপনার ছোট সন্তানের লাঞ্চ বক্সে কী ধরণের খাবার প্যাক করা উচিত সে সম্পর্কে আপনাকে সুন্দর আইডিয়া দেয় এবং কীভাবে খাবারকে নোংরা না রেখেও দীর্ঘ সময়ের জন্য তাজা রাখা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয়।

যে খাবারগুলো প্যাক করা লাঞ্চে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

আপনার সন্তানের ডে কেয়ার লাঞ্চ বক্সে সমস্ত প্রধান ফুড গ্রুপের খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। তার মানে, তার উচিত জটিল কার্বোহাইড্রেট, লিন প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং কিছু পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করা। এখানে কয়েকটি আইডিয়া তুলে ধরা হল:

  • সেদ্ধ বা স্ক্র্যাম্বলড এগ প্রোটিনের জন্য ভালো অপশন, যদি আপনার সন্তান আমিষভোজী হয়। সে যদি নিরামিষভোজী হয়, তাহলে ছোট ছোট কিউব করে পনির নাড়াচাড়া করে বেল মরিচ ও টমেটো দিয়ে ভাজা হলে ভালো হয়। পনিরের ছোট টুকরো, বাদাম গুঁড়ো দিয়ে তৈরি সুজি হালুয়া, এমনকি মুগ ডালের মতো ডাল দিয়ে তৈরি রুটি প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস হিসাবে কাজ করতে পারে।
  • হোল-হুইট স্যান্ডউইচ বা হোল-হুইট পাস্তা বা হোল-হুইট নুডলস প্যাক করুন, যাতে আপনার সন্তান যথেষ্ট জটিল কার্বোহাইড্রেট পায়। এগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত না বাড়িয়ে তাকে এনার্জি দেবে। পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে কুচনো সবজি যোগ করুন।
  • আপনার বাচ্চার লাঞ্চে আপেল, নাশপাতি এবং কলার টুকরোও দিতে পারেন। এগুলো প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করবে। আম বা ক্যান্টালুপ তরমুজও দুর্দন্ত আইডিয়া।
  • পোহা, দোসা, ইডলি এবং পরোটা হল কিছু ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় লাঞ্চের বিকল্প যা আপনি আপনার সন্তানের জন্য প্যাক করতে পারেন। ব্যাটার বা স্টাফিং তৈরি করার সময় সবজি বা মসুর ডাল যোগ করতে ভুলবেন না, এতে করে খাবারগুলি আরও পুষ্টিকর-ঘন এবং ভরাট হয়ে ওঠে।
  • হাইড্রেশনের জন্য থার্মো ফ্লাস্কের মধ্যে সাধারণ ঈষদুষ্ণ জল, পাতলা ও মিষ্টিহীন লস্যি অথবা নারকেল জল ভরে দিন। টাটকা ফলের রসে সাধারণত প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

লাঞ্চে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত

আপনার বাচ্চার প্যাক করা লাঞ্চে জাঙ্ক ফুড বা এমন খাবার দেওয়া উচিত নয় যা দম বন্ধ করে দিতে পারে। যে খাবারে জল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে সেগুলিও এড়ানো উচিত নয়তো ক্যাতক্যাতে হয়ে যেতে পারে। নিম্নলিখিত টিপসগুলি মনে রাখবেন:

  • চিপস, বিস্কুট বা ক্র্যাকারের মতো ফ্যাট, চিনি বা লবণের পরিমাণ বেশি রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পেস্ট্রি, কুকিজ এবং ক্যান্ডিগুলিও খাওয়ানো চলবে না। অতিরিক্ত লবণ যেমন ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে এবং আপনার সন্তানের কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি অতিরিক্ত চিনি স্থূলতা এবং কিশোর ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
  • গোটা আঙ্গুর, বাদাম, পপকর্ন, বীজ, বেরি, মাংসের ছোট ছোট টুকরো ইত্যাদি শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং তাই এগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। যদিও আঙুর টুকরো টুকরো করে কেটে তারপর লাঞ্চ বক্সে দিতে পারেন।
  • যেসব খাবারে মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে ভারতীয় গ্রীষ্মের প্রখর গরমে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার যেমন- দই, মিল্কশেক, ডিম দিয়ে তৈরি মেয়োনিজ, নারকেলের গ্রেভি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
  • আপনি যদি স্যালাড প্যাকিং করেন, তাহলে ড্রেসিং এড়িয়ে চলুন, কারণ জল বের হতে শুরু করবে এবং আপনার বাচ্চা যখন স্যালাড খাবে, তখন সব ক্যাতক্যাতে ও জলাজলা হয়ে যাবে। বরং চেষ্টা করুন বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে, যাতে আপনার সন্তান মূল স্বাদ উপভোগ করতে পারে।

শিশুর ডে কেয়ার ফুড নিরাপদ ও সহজ-সরল রাখুন

  • প্রথমত, ডে কেয়ারের জন্য কত পরিমাণ খাবার প্যাক করতে হবে, তার পরিকল্পনা করুন। এটি সাধারণত নির্ভর করে সে ডে কেয়ারে কত সময় ব্যয় করে, তার বয়স, বাড়িতে তার খাদ্য তালিকা ইত্যাদির উপর। সে যদি স্কুলের পর ডে কেয়ারে কয়েক ঘন্টা ব্যয় করতে যায়, তাহলে হয়তো পুষ্টিকর জলখাবারই যথেষ্ট। তবে যদি সে ডে কেয়ারে অর্ধেকেরও বেশি দিন ব্যয় করে, তাহলে আপনাকে একাধিক স্ন্যাক বক্স সরবরাহ করতে হতে পারে যা ছোটখাটো স্ন্যাক ছাড়াও দুপুরের খাবারের মতো প্রধান মিলকে কভার করে।
  • শিশুকে পছন্দসইভাবে ফিঙ্গার ফুড বা এমন খাবার দিন যা কোনো গোলমাল সৃষ্টি না করে খাওয়া যায়।
  • খেয়াল রাখবেন, আপনি যে খাবারই দিন না কেন, তা যেন এমন হয় যে, তা সংরক্ষণ করা যায় এবং খুব দ্রুত নষ্ট না হয়। যেমন সাদা কাটা আপেলগুলি দেওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলি বাদামী হয়ে যাবে। বরং বাদামি রঙের হয়ে যাওয়া আটকাতে টুকরোগুলোর উপরে অল্প লেবু চিপে রস ছড়িয়ে দিতে পারেন। খাবারটি দৃষ্টি আকর্ষণকারী হওয়া উচিত এবং আপনার বাচ্চার খাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ভাল স্বাদ বিশিষ্ট হওয়া উচিত।
  • প্যাক করা খাবারটি শিশুটির যখন খাওয়ার সময় আসে, ততক্ষণে সেটি স্বাদ ও গঠনের দিক থেকে পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। এছাড়া খাবার প্যাক করার সময় আবহাওয়ার কথাও বিবেচনা করুন। যেমন নারকেল-ভিত্তিক চাটনিগুলি গরমের তাপে নষ্ট করতে পারে বা ঘি দিয়ে রান্না করা খাবারগুলি শীতকালে শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে মুখের অপ্রীতিকর অনুভূতি হতে পারে।
  • লবণ ছিটানো শসা বা তরমুজের টুকরো কিছুক্ষণ পর জল ছেড়ে দেয়। তাই এসব এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়াও, খাবার প্যাক করার জন্য লিক-প্রুফ কন্টেইনার ব্যবহার করুন।
  • কয়েকটি টিস্যু প্যাক করুন যাতে খাবার ছিটকে পড়লে আপনার সন্তান তার মুখ এবং হাত মুছে ফেলতে পারে।
  • আপনার বাচ্চার ডে কেয়ার স্ন্যাক বা লাঞ্চের জন্য বাসি খাবার প্যাকিং করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ সে যখন খাবে, ততক্ষণে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

সবশেষে এটাই বলা যায় যে, আপনার শিশু প্রতিদিন ডে কেয়ারে কিছুটা সময় ব্যয় করে,তার মানে এই নয় যে তার পুষ্টি বা খাদ্য সুরক্ষার সাথে আপোষ করতে হবে। উপরের টিপসগুলির সাহায্যে এবং আপনার উদ্বেগগুলির ব্যাপারে ডে কেয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে, আপনি সহজেই আপনার সন্তানের জন্য সুখী অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে পারেন।

আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in-এ ভিজিট করুন