জীবন সাধারণ এবং বিরল উভয় ধরনের অসুস্থতার বিরুদ্ধে একটি অনবরত লড়াইয়ের নামান্তর এবং এসবের বিরুদ্ধে আপনার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য, আপনাকে তাকে সঠিক অস্ত্রে সজ্জিত করতে হবে। অর্থাৎ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনভাবে বাড়ানো দরকার যাতে সে বারবার অসুস্থ না হয়। যেমন, সঠিক ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সে যা খাবে তা তার বড় হওয়ায় অবদান রাখবে। তাই, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এমন সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ খাবার অপরিহার্য।

শিশুদের জন্য কিছু টিপস দেওয়া হল, যা তাদের অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে:

কোনও মা-ই তার সন্তানকে বারবার অসুস্থ হতে দেখতে চান না। কিন্তু, আপনার ছোট্ট বাচ্চাকে সবসময় জীবাণুমুক্ত পরিবেশে বড় করা অসম্ভব এবং অস্বাভাবিক। তাকে রাস্তায় খেলতে দিতে হবে, নোংরায় মিশতে দিতে হবে, মাঝে মাঝে কাদামাখা হাত-পা নিয়ে বাড়ি ফিরতে দিতে হবে। আর তার যখন তখন হাঁচি বা কাশি হওয়াও খুব স্বাভাবিক। মনে রাখবেন, সাধারণ জীবাণুর সংস্পর্শে আসা দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার একটি দারুণ উপায়। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাকে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার সরবরাহ করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার সন্তান সুস্থ থাকে।

  • শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান: শিশুদের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার খাওয়ানো হল সংক্রমণের বিরুদ্ধে আপনার শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার সবচেয়ে ভাল উপায়। আদর্শভাবে, আপনার শিশু টাটকা ফল এবং সবজি, বীজ, ডিম, ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ এবং অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর তেল খাওয়া উচিত। রওয়া, রুই, আহি এবং পমফ্রেটের মতো মাছ আপনি তার প্রতিদিনের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। শাক-সবজি ও ফল যেন বিভিন্ন রঙের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার ছোটটি সব ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস পায়। এগুলি কাঁচা, স্টিম করা, সেদ্ধ বা গ্রিল করে খেতে দিন, যাতে আপনার শিশু পর্যাপ্ত ডায়েটারি ফাইবারও পেতে পারে।
  • শিশুকে ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে: ছোটদের জন্য ভিটামিন C খুবই উপকারী। এই ভিটামিন আপনার শিশুকে সাধারণ সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে রক্ষা করে। লেবুজাতীয় ফল, সবুজ শাক-সবজি, পেয়ারা, স্ট্রবেরি জাতীয় খাবারে এটি পাওয়া যায়। ভেজি বা ফ্রুট স্যালাড, স্মুদি এবং টাটকা জুস তার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চমৎকার কিছু অপশন।
  • ভিটামিন B6 সমৃদ্ধ খাবার রাখুন: আরেকটি ভিটামিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তা হল ভিটামিন B6। এই ভিটামিনটি হোল-গ্রেইন সিরিয়াল, মসুর ডাল, সবুজ শাকসবজি, মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, পোল্ট্রি ও বাদামে পাওয়া যায়। আপনার বাচ্চাকে বাদাম খাওয়ানোর একটি সহজ এবং নিরাপদ উপায় হল সেগুলিকে গুঁড়ো করে তার সিরিয়াল বা পোরিজে যোগ করা। ব্রাউন রাইস বা হোল গ্রেন রোটি দিয়েও সে বিভিন্ন ডাল খাওয়ার মজা নিতে পারে।
  • আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: আয়রন হল আরেকটি নিউট্রিয়েন্ট যা শিশুদের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও, এটি লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়, যা আপনার শিশুর দেহের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করে। রেড মিট, মাছ, মুরগি, ডিম এবং সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। 6 মাস পর থেকে শিশুকে সেদ্ধ ও ম্যাশ করা সবজি খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। লক্ষ্য করুন যে প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের তুলনায় নিরামিষ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রন শরীরের পক্ষে শোষণ করা কঠিন। সুতরাং, আয়রন সমৃদ্ধ নিরামিষ উৎসগুলির সাথে ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবারগুলি ভাল শোষণের জন্য সুপারিশ করা হয়।
  • শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সঠিক খাবার খাওয়া ছাড়াও আপনার শিশু যাতে পর্যাপ্ত ঘুম পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শিশু যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন শরীর নিজেকে সুশ্রুষা ও নতুন করে তরতাজা করে। পড়াশোনা বা খেলার সময় সারাদিন যে এনার্জি সে হারিয়ে ফেলে, তা পূরণ করতে ঘুম জরুরি।