উচ্চতা বৃদ্ধি শিশুদের সুস্থভাবে বৃদ্ধির অন্যতম সেরা সূচক। আর তাই বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তান উচ্চতা বৃদ্ধি না হলে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। এবারে আপনার ছেলে বা মেয়ের উচ্চতা বাড়ানো সম্পর্কে দুশ্চিন্তা করা বা উপায় খুঁজতে শুরু করার আগে আপনার যা জানা উচিত তা এখানে দেওয়া হল। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং গড়ে তারা 10 ইঞ্চি (25 সেন্টিমিটার) করে বাড়তে থাকে এবং 1 বছর বয়সে তাদের জন্ম ওজন তিনগুণ হয়ে যায়। তারপরে সেই বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে যায়। 2 বছর বয়স হওয়ার পর, উচ্চতা বৃদ্ধি বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় 2½ ইঞ্চি (6 সেন্টিমিটার) স্থায়ী হারে হয়ে চলে।
শৈশবের পুরো সময় জুড়েই বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হতে দেখা যায়। বয়ঃসন্ধির সময় বড় ধরনের বৃদ্ধি ঘটে, যা প্রায় 2 থেকে 5 বছর স্থায়ী হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে 8 থেকে 13 বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে 10 থেকে 15 বছর বয়সের মধ্যে এটি ঘটে থাকে। তাছাড়া সুখবর হলো, শিশুদের উচ্চতা বাড়াতে পারে এমন অনেক শারীরিক কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলি কম বয়স থেকেই শুরু করা যায়।
কীভাবে উচ্চতা নির্ধারণ করা সম্ভব
উচ্চতার পূর্বাভাসের জন্য সবচেয়ে নির্ভুল পদ্ধতি হল শিশুর “হাড়ের বয়স”, যা হাতের এক্স-রে দ্বারা নির্ধারিত হয়। শিশুর উচ্চতা সম্পর্কে আন্দাজ করার জন্য আরও বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:-
- দুই গুণ দুই বছর পদ্ধতি: - এই পদ্ধতিতে 2 বছর বয়সে শিশুর উচ্চতা দ্বিগুণ করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে তার উচ্চতার পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এ ছাড়া ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। তাই 18 মাস বয়স হলে আপনি তাদের উচ্চতা সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারেন, অথবা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তাদের উচ্চতা কত হবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। তবে এই পদ্ধতি যে সব সময় কার্যকরি হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
- মিড-পেরেন্টাল পদ্ধতি: এটি একটি শিশুর উচ্চতা অনুমান করার একটি জটিল পদ্ধতি, যাতে ইঞ্চি এককে মা এবং বাবার উচ্চতাকে যোগ করে 2 দিয়ে ভাগ করা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে 2.5 ইঞ্চি যোগ করে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে 2.5 ইঞ্চি বিয়োগ করে গড় প্রত্যাশিত উচ্চতা পাওয়া যায়। বাবা-মা লম্বা হলে সন্তান লম্বা হওয়ার এবং আর বাবা-মা বেঁটে হলে সন্তানের বেঁটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গ্রোথ চার্ট: শিশুর উচ্চতার পূর্বাভাস দেওয়ার আদর্শ উপায় হল গ্রোথ চার্ট। শিশু চিকিৎসকরা সাধারণত শিশুর লম্বা হওয়া ট্র্যাক করার জন্য শিশুর উচ্চতা, ওজন এবং মাথার পরিধি পরিমাপ করে।
- পারিবারিক ইতিহাস ও বংশগতি: শিশুর উচ্চতা এবং বৃদ্ধি সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস এবং DNA-র উপর ভিত্তি করে হয় যা সে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে অর্জন করে। বয়ঃসন্ধির প্রাথমিক বা বিলম্বিত সূচনা পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক্স দ্বারাও নির্ধারিত হতে পারে।
যেসব বিষয় শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে
শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করার উপযোগী কয়েকটি বিষয় রয়েছে। উচ্চতা বৃদ্ধির বেশিরভাগটাই জেনেটিক কারণের উপর (60 থেকে 80%), এবং বাকিটা পরিবেশগত কারণের (পুষ্টি, ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ) উপর নির্ভর করে। নীচে বিভিন্ন কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে:-
- সুষম ডায়েট: শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে পুষ্টির ভূমিকা অপরিসীম। পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট উপস্থিত থাকা সুষম ডায়েট শিশুর বৃদ্ধিকে সহজতর করে। যেসব খাবার শিশুর উচ্চতা বাড়ায় সেগুলি হল প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, মুরগি, হোল গ্রেইন, সয়াবিন, ডেয়ারি প্রোডাক্ট এবং বাদাম ও বীজ। খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D, ফর্টিফায়েড প্রোডাক্টস অন্তর্ভুক্ত করার ফলেও তারা ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক পরিমাণ ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানব বৃদ্ধিকারক হরমোন নিঃসরণ করে। যে কারণে শৈশব ও কৈশোর পর্যায়ে অন্তত 10 থেকে 12 ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
- সক্রিয় থাকা: - বিকাশের সময় শিশুদের সক্রিয় থাকা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম পেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করতে পারে, সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং বেশি করে বৃদ্ধিকারক হরমোন নিঃসরণ ঘটায়। স্কুলে বাচ্চাদের দিনে কমপক্ষে 1 ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত (ব্যায়াম শক্তি-নির্মাণ, নমনীয়তা এবং অ্যারোবিক্সের উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে)।
- সঠিকভাবে বসার অনুশীলন: - দুর্বল ভঙ্গির কারণে শিশুদের দেখতে ছোট লাগে। সামনের দিকে ঝুকে বসা এবং পিছনের দিকে হেলে বসার কারণে আপনার সন্তানের প্রকৃত উচ্চতা প্রভাবিত হতে পারে এবং ঘাড়ে এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। আপনার সন্তানের দৈনন্দিন রুটিনে আর্গোনোমিক্স অন্তর্ভুক্ত করুন, তাকে বসার ভঙ্গি ঠিক কর অনুশীলন করতে উৎসহিত করুন এবং শারীরিক বৃদ্ধির সমস্যা এড়াতে কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে সে ব্যাপারে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
- ওরাল সাপ্লিমেন্ট: কিছু ক্ষেত্রে, যখন মানব বৃদ্ধিকারক হরমোনের উৎপাদন কম হয়, তখন শিশুকে ওরাল সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে, তবে তা সতর্কতার সাথে এবং ডাক্তারের সুপারিশের ভিত্তিতে দিতে হবে।
ছোটদের উপযোগী শারীরিক ক্রিয়াকলাপ
বেশ কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা আপনার সন্তানের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং এগুলি তার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলি হল-
- স্ট্রেচিং ব্যায়াম
- জগিং ও দৌড়াদৌড়ি
- রিং ধরে ঝোলা
- যোগাসন যেমন মাউন্টেন পোজ, কোবরা, চাইল্ড পোজ এবং ওয়ারিয়র II পোজ।
- স্কিপিং
- সাঁতার কাটা
- সঠিক বসার ভঙ্গি
উপসংহার
আপনার সন্তান শেষ পর্যন্ত কত লম্বা হবে তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমনটা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, বাবা-মা হিসেবে তাদের খাবার স্বাস্থ্যকর ও সুষম আছে কিনা তা আপনার নিশ্চিত করা উচিত এবং তাদেরকে খেলাধুলা বা শারীরিক কার্যকলাপে অংশ নিতে উৎসাহিত করা উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বয়ঃসন্ধির শেষে সর্বোচ্চ উচ্চতা অর্জন করা যায়। তাই শিশুর উচ্চতা ও ওজন গড়ের চেয়ে কম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ ভিজিট করুন