একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার সন্তানের খাদ্যাভ্যাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। শৈশবকালেই আমরা নানা কিছু শিখে থাকি। আপনার সন্তান পর্যাপ্ত এক্সারসাইজ করছে কিনা তা আপনার এই সময়পর্বেই নিশ্চিত করা উচিত। এক্সারসাইজ করা আর হেলদি খাবার খাওয়ার মতো কাজগুলি আপনি নিজেও প্র্যাকটিস করেন, তা দেখানোর মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানদের এই ধরনের আচার-আচরণ নিজেদের মধ্যে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করতে পারেন। আপনার সন্তানদের নিউট্রিশন সংক্রান্ত ভাল আচরণ শেখানোর মাধ্যমে, আপনি তাদের খাদ্যের সাথে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন, যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তারা নিয়মিত মেনে চলবে। শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের মতো একই খাওয়ার ধরণ গ্রহণ করতে পছন্দ করে; অতএব, সম্পূর্ণ পরিবারের একটি বৈচিত্র্যময় এবং সুষম ডায়েট উপভোগ করার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর জিনিস বেছে নেওয়ার দ্বারা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

পারিবারিক আহার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার গুরুত্ব

আপনার বাচ্চাদের আরও ভালোভাবে বোঝার এবং তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য পারিবারিক আহার হল একটি দুর্দান্ত সময়। আপনার সন্তানকে রুটিন সম্পর্কে ভাল ধারণা গড়ে তুলতে ফ্যামিলি মিলের অভ্যাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। এটি অভিভাবকদের জন্য তাদের বাচ্চাদের সাথে দেখা করার, তাদের সাথে নতুন খাবারের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য রোল মডেল হওয়ার একটি দুর্দান্ত পরিসর। নিয়মিত পারিবারিক আহার স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে যেমন:

  • ফল, শাকসবজি এবং শস্য খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার ইচ্ছে কমে যাওয়া
  • তাদের আহার স্বাধীনভাবে খেতে চাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া

পারিবারিক আহারকে একটি বন্ধন কসরত হিসাবে বিবেচনা করুন এবং আপনি আপনার বাচ্চাদের পছন্দের আচরণটি অনুসরণ করতে সেটি অনুশীলন করুন। আপনার বাচ্চাদের নতুন খাবার খেতে এবং তারা কী উপভোগ করে তা আপনাকে বলতে উৎসাহিত করুন। তাদের প্রিয় খাবারগুলিকে স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলিতে পরিণত করার উপায়গুলি জানার চেষ্টা করুন। শিশুরা যখন বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি রুচি তৈরি করে ফেলে, তখন খাবারের পরিকল্পনা করা সহজ হয়ে যায়। আপনি এমনকি আপনার বাচ্চাদেরকেও তাদের বয়সের উপযোগী খাবার তৈরিতে যোগদান করানোর চেষ্টা করতে পারেন বা আপনি যখন সরঞ্জাম কেনাকাটা করেন তখন তাদের সাথে নিয়ে যেতে পারেন। একসাথে রান্না করুন, একসাথে খাবার খান এবং পারিবারিক আহারকে আপনার দিনের একটি আনন্দদায়ক অংশ বানিয়ে নিন!

আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে শেখানো গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে:

  • অধিক মজবুত হাড় ও দাঁত
  • উন্নত মেজাজ
  • তুলনায় ভালো স্মৃতিশক্তি
  • বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

কী করতে হবে তা বলার পরিবর্তে আপনার বাচ্চাদের সেগুলি দেখানোর মাধ্যমে, আপনি তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং তাদের নিজেদেরকেই সঠিক পছন্দ তৈরি করতে উৎসাহিত করবেন। মনে রাখবেন, নতুন খাবার খাওয়ার জন্য বা তাদের শাকসবজি ও ফল খাওয়ার জন্য তাদের প্রশংসা করা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাচ্চারা যে স্বাস্থ্যকর পছন্দগুলি তৈরি করছে তার সামান্য স্বীকারোক্তিই, তাদের এই পছন্দগুলি তৈরি করা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াকে শিশুদের মধ্যে কিভাবে উৎসাহিত করা যায়?

বাড়িতে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করার এবং পারিবারিক আহারের নিয়মিতকরণকে নিশ্চিত করার পরে, আপনার বাচ্চাদের জন্য একটি ভাল উদাহরণ স্থাপন করা এবং তাদের দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে এই পরামর্শগুলি আপনি অনুশীলন করতে পারেন।

  1. সম্পূর্ণ পরিবার একসাথে করতে পারে এমন কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। যেমন, একসাথে সাঁতার কাটুন, আপনার বাচ্চাদের সাথে পার্কে যোগ দিন কিংবা তাদের সাথে হাঁটাহাঁটি করুন।
  2. ঘুষ হিসাবে মিষ্টি জিনিস ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। তার পরিবর্তে, একটি ফ্রুট কাপ বা দই-এর মতো স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট পরিবেশন করার চেষ্টা করুন।
  3. টিভির সামনে বসে খাবার বা জলখাবার খেতে উৎসাহ দেবেন না কারণ এর যলে পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতির দিকে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে।
  4. বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খেয়ে ইতিবাচক আদর্শ হয়ে উঠুন।
  5. আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সের বিকল্প দিন। যেমন, গাজর এবং হুমাস বা আপেলের টুকরো এবং পিনাট বাটার।
  6. ক্ষুধার্ত হওয়া কিংবা পেট ভরে যাওয়া সময়টিকে আপনার বাচ্চাদের নির্ধারণ করতে দিন।
  7. বাচ্চাদের খাবারের সাথে শাকসবজির একটি বড় অংশের প্রস্তাব দিন বা তাদের খিদে পেলে প্রথম কোর্স হিসাবে সবজি পরিবেশন করুন।
  8. পর্যাপ্ত জল পান করতে এবং চিনিযুক্ত পানীয় কমাতে আপনার বাচ্চাদের উৎসাহিত করুন। li>

খাবার এবং শারীরিক কার্যকলাপের সাথে সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুতরাং, ভালো আদর্শ হওয়া এবং সন্তানদের মধ্যে দেখতে চাওয়া ইতিবাচক আচরণ নিজেদের অনুশীলন করা বাবা-মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।