আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখা তাদের অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে আপনার সন্তানের খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন A, B6 এবং C, আয়রন, জিঙ্ক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফলিক অ্যাসিডের মতো নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার আপনার সন্তানকে খাওয়ালে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে আপনার প্রস্তুত করা খাবার থেকে আপনার সন্তান কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী নিউট্রিয়েন্ট পাচ্ছে তার হিসাব রাখা কঠিন হতে পারে। এছাড়াও আপনার সন্তান পর্যাপ্ত পরিমাণে এইসব নিউট্রিয়েন্ট পাচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে আপনাকে অনেক উপাদান বিশিষ্ট জটিল খাবার প্রস্তুত করতে হতে পারে। ব্যাপারটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি একজন ব্যস্ত অভিভাবক হন। এইরকম পরিস্থিতিতে ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর হতে পারে। আপনার রান্নাঘরে ইতিমধ্যেই উপস্থিত থাকা সাধারণ উপাদানগুলির সাহায্যে, আপনি সহজ ঘরোয়া প্রতিকারগুলি তৈরি করতে পারেন যা আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুস্থ রাখে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:

1. মধু এবং লেমন জুস

আপনি হয়তো কাশি ও নাকবন্ধ দূর করার জন্য এই মিশ্রণের কার্যকর প্রভাব সম্পর্কে শুনেছেন। লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। মধুতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এর জন্য প্রতিটিকে 1 টেবিল চামচ করে একসাথে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি উত্তপ্ত না হওয়া পর্যন্ত মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিন। এবারে আপনার শিশু একবারে এক চা চামচ করে মিশ্রণটি খাওয়ান। যেহেতু মধুর স্বাদ মিষ্টি, তাই আপনার শিশু মিশ্রণটি খাওয়ার ব্যাপারে বিরক্ত হবে না।

2. হলদি মিল্ক

হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই হলুদ মশলার অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও অবদান রাখতে পারে। মধু, অল্প পরিমাণে গ্রেট করা আদা এবং এক চিমটি দারুচিনি যোগ করলেও হলদি মিল্কের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। সপ্তাহে কয়েকবার এক কাপ হলদি মিল্ক আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে আর এর ফলে তারা রোজকার দুধ খাওয়া থেকেও বিরতি পাবে।

3. গার্লিক স্যুপ

রসুনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলি এটিকে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর অনাক্রম্যতা বর্ধকে পরিণত করে। সাধারণত, আমরা খাবার তৈরি করার সময় মাত্র কয়েকটি রসুনের কোয়া ব্যবহার করি। কিন্তু গার্লিক স্যুপে রসুনই আসল রাজা এবং এতে রসুনের রোগ প্রতিরোধ করা ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী প্রভাব সর্বাধিক হয়ে ওঠে। সাধারণ গার্লিক স্যুপের জন্য, আপনার প্রয়োজন হবে 5-6টি রসুনের কোয়া, রসুন ভাজা করার জন্য অলিভ অয়েল, কাটা পেঁয়াজ, মুরগির বা সবজির ঝোল, যেকোনো প্রকারের দুধ, স্বাদের জন্য থাইম ও অরিগ্যানো এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ ও গোলমরিচ। গার্লিক স্যুপ আপনার সন্তানের জন্য রসুনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্য থেকে উপকৃত হওয়ার একটি সুস্বাদু উপায়।

4. লেমন জিঞ্জার টি

নামের মধ্যে উল্লেখ থাকলেও, এই পানীয়টিতে কোনও ক্যাফেইন দেওয়া থাকে না। এতে লেবু, আদা ও মধুর মতো সুপরিচিত, সংক্রমণ-প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। লেবুতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ভিটামিন C। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য, আর আদায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রভাব। এই সমস্ত উপাদানই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই প্রশান্তিদায়ক ড্রিঙ্কটি তৈরি করতে আপনার যা দরকার তা হল তাজা লেবুর রস, মধু, তাজা গ্রেট করা আদা এবং জল। আপনি সহজেই আপনার সন্তানের স্বাদ অনুসারে মিষ্টি যোগ করতে পারেন।

আপনার সন্তানের জীবাণুর সংস্পর্শে আসা স্বাভাবিক, কিন্তু এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি জীবাণুগুলিত গুরুতর সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। মাঝেমধ্যে আপনার সন্তানের জন্য এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি প্রস্তুত করা আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে পারে এবং তাদের সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।