চোরা খিদে হচ্ছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, অথবা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস-এর অভাব এবং এটা স্বাভাবিক খিদের তুলনায় অস্পষ্ট। এই অবস্থার কোন বিশেষ চিহ্ন অথবা লক্ষণ নেই এবং তবুও এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর অপুষ্টি সারা পৃথিবীতে প্রায় 2 বিলিয়ন মানুষকে (প্রতি 3 জনের মধ্যে 1 জন) সমস্যায় ফেলে এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে যেগুলোর সঙ্গে ক্যালোরির অপুষ্টির কারণে হওয়ায় সমস্যার মিল রয়েছে। চোরা খিদে মূলত বাচ্চাদের, গর্ভবতী মহিলাদের এবং গরিব দেশের মানুষদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ভারতীয় বাবা মায়েরা প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট সম্বলিত খাবার দেওয়ার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখেন কিন্তু দরকারী মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো প্রয়োজনীয় মনোযোগ পায় না এখানে বাচ্চাদের মধ্যে এই চোরা খিদের মূল কারণ হচ্ছে নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস।
চোরা খিদের কারণসমূহ
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ যেমন ইমিউনিটি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য বাচ্চাদের ক্যালোরির পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টেরও প্রয়োজন রয়েছে। চোরা খিদে তখনই তৈরি হয়, যখন ভিটামিন এ, আয়রন, জিঙ্ক, আয়োডিন এবং ফলিক এসিড ইত্যাদির মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর গ্রহণ এবং শোষণ পরিপূর্ণভাবে হয় না।
এর সঙ্গে জীবনের কিছু পর্যায়ে যেমন গর্ভাবস্থা, স্তন্যদান অথবা কোন অসুস্থতার সময়ে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক পরিমাণে বেশী থাকে। ফলে বর্ধিত চাহিদা এবং নিউট্রিয়েন্ট-এর যোগানের মধ্যেকার পার্থক্য চোরা খিদের জন্ম দিতে পারে।
এখন, ভুট্টা, গম এবং ভাতের মতো প্রধান শস্য সম্বলিত খাদ্যাভ্যাস এনার্জির খুব ভালো উৎস কিন্তু এটা প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল কম পরিমাণে প্রদান করে। যদিও, খাদ্যাভ্যাসের গুণমান অনেকগুলি বিষয় যেমন জিনিসপত্রের মূল্য, সংস্কৃতিগতভাবে তৈরি হওয়া খাদ্যাভ্যাসের, আশেপাশে মানুষদের প্রভাব, ভৌগোলিক বিষয়, পরিবেশগত বিষয়, এবং ঋতুকালীন বিষয় ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
কোনো সংক্রমণ অথবা পরজীবীর কারণে হওয়া নিউট্রিয়েন্ট-এর কম শোষণও এই অভাবের জন্যও দায়ী। খাদ্যতালিকাগত বিভিন্ন বিষয়ের কারণে খাদ্যের শোষণে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খাদ্যতালিকায় থাকা ফ্যাট দিয়ে ভিটামিন এ গ্রহণ করলে তা ভালো পরিমাণে শোষণ হয়। ট্যানিস অথবা ফাইটেটস্ এর মত কিছু যৌগের গ্রহণের কারণে আয়রনের শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অ্যালকোহলের গ্রহণও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস-এর শোষণে হস্তক্ষেপ করে।
স্থূলত্ব এবং চোরা খিদে
অপুষ্টি, ওজনের অতিরিক্ত বৃদ্ধি অথবা স্থূলত্ব অনেক সময় চোরা খিদের মতোই। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন ধারার অসাম্য হল অপুষ্টির একটি প্রধান কারণ যেটা স্থূলত্বের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত, এমনকি ধনী দেশগুলোও এর বাইরে নয়। ওবেসিটি টাইপ 2 ডায়াবেটিসের বিপদ বাড়িয়ে তোলে।
স্থূল বাচ্চাদের ভবিষ্যতে টাইপ 2 ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং হাইপারটেনশনের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে।
চরম পর্যায়ে গেলে, স্থূলত্ব, হাড় এবং জয়েন্টের সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। একজন সঠিক ওজনের মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে একজন স্থূল মানুষের আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা 60 শতাংশ বেড়ে যায়। স্থূল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বড় হওয়ার পরে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন স্তন, কিডনি, লিভার, কোলন এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিপদ অনেক বেশি থাকে।
গর্ভাবস্থায় চোরা খিদের প্রভাব
গর্ভাবস্থায় হওয়া চোরা খিদে ভ্রুণের বৃদ্ধিকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে যা বাচ্চাটির বিকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। মিনারেল এর অপুষ্টির কারণে সময়ের আগেই জন্ম হতে পারে। নির্দিষ্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর উপর ভিত্তি করে চোরা খিদে একটি বাচ্চার স্বাস্থ্যকে অনেক রকম সমস্যায় ফেলতে পারে।
- আয়রনের অভাব অ্যানিমিয়ার কারণ হতে পারে, যেটা টিস্যুতে অক্সিজেনের বিস্তার কে প্রভাবিত করতে পারে, যা আবার ক্লান্তি, মাথা যন্ত্রণা এবং শরীরের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণ হতে পারে।
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য জিঙ্ক একটি অতিপ্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট। এটির অভাব শরীরের ধীর বিকাশের কারণ হতে পারে এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে। জিঙ্কের অভাব ডায়েরিয়া সংক্রান্ত অসুখগুলির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়। ডায়রিয়া অপুষ্টিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে যেহেতু সেই সময়ে বারবার এবং জলের মতো মলত্যাগের কারণে বাচ্চাটির শরীর থেকে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টগুলি বেরিয়ে যায় ফলে তখন অসুস্থতা, এনার্জি এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে বাড়িয়ে তোলে।
- বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে ইমিউনিটিকে উন্নত করার জন্য এবং বিশেষত বাচ্চাদের চোখের দৃষ্টির জন্য ভিটামিন এ একটি প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট।
- ফলিক অ্যাসিড ভ্রূণের বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এর অভাব জন্ম সংক্রান্ত সমস্যা কারণ হয়ে উঠতে পারে।
জীবনের প্রথম পর্যায়ে চোরা খিদেতে আক্রান্ত হওয়া একটি বাচ্চার ভবিষ্যতের পড়াশোনাকে শেষ করতে পারার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং ক্রনিক ডিসঅর্ডারে ভোগার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
চোরা খিদে কমানোর সমাধান
একটি বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এই চোরা খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি কার্যকরী উপায়। এর মধ্যে শস্য, মাংস, ফল এবং সবজি থাকা উচিৎ। যদিও একটি বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস অনেক ব্যায়বহুল। খাদ্যের মজবুতিকরণ অর্থাৎ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট দিয়ে তৈরি প্রধান খাদ্যকে শক্তিশালী করে তোলাই হচ্ছে জীবনের গুণগতমানকে উন্নত করার জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
প্রচলিত খাবারেের বায়ট্রিফিকেশন তার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের পরিমাণকে বাড়িয়ে তোলে। যেমন ভুট্টা, মিষ্টি আলুর দ্বারা ভিটামিন এ-র বৃদ্ধি ঘটে না, আবার পার্ল মিলেট এবং বিনসের দ্বারা আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। এই মজবুতিকরণের সময়ে গম এবং চালের মধ্যে দিয়ে জিঙ্কের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
ঠিকঠাকভাবে স্বচ্ছতা মেনে চলা বিভিন্ন সংক্রমণ হওয়ার হার কমিয়ে আনে, এবং বাচ্চাদের সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়া সাধারন অসুখ থেকে তাদের রক্ষা করে। এইসকল পদক্ষেপগুলির ফলে খাদ্য থেকে ভালোভাবে মাইক্রনিউট্রিয়েন্টস শোষণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান