যদিও বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই সবসময় সবচেয়ে পুষ্টিকর বিকল্প, তবে মাঝে মাঝে রেস্তোরাঁ বা ক্যাফেতে যাওয়া উত্তেজনাপূর্ণ এবং সুস্বাদু অভিজ্ঞতা হতে পারে। তাছাড়া যে বাবা-মায়েরা খাবার খেতে পছন্দ করেন তারা সাধারণত তাদের বাচ্চাদের প্রথমবার রেস্তোরাঁয় খেতে নিয়ে গিয়ে প্রথমবার খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহিত থাকেন। যদিও মনে রাখবেন যে শিশুরা যখন বাইরে খায় তখন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কেও অনেক কিছু শিখতে পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন যে আপনি কীভাবে তাদের রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করতে পারেন, যেখানে সবসময়ই ফ্যাট, নুন এবং চিনি খাওয়ার অধিক সম্ভাবনা। এই টিপসগুলি থেকে বাবামায়েরা সাহায্য পেতে পারেন।

শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহ জোগানোর কৌশল:

  • সর্বদা এমন একটি রেস্তোরাঁ বেছে নিন যা বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের অপশন সরবরাহ করে। অর্থাৎ এমন একটি রেস্তোরাঁর সন্ধান করুন যা বাচ্চাদের জন্য যথোপযুক্ত কম পরিমাণ বা স্বাস্থ্যকর স্পেশ্যাল মিলের বন্দোবস্ত রাখে।
  • রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার আগে চিপসের মতো জাঙ্ক ফুড বা অত্যধিক পাউরুটি খেলে আপনার সন্তানের ক্ষিদে কমে যেতে পারে। আর এরকম ক্ষেত্রে তারা আর পুষ্টিকর খাবার খেতে চায় না।
  • আপনার সন্তান যদি খুব ছোট হয়, তাহলে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন কীভাবে সন্তানকে এমন রেস্টুরেন্টে খাওয়াবেন যেখানে তাদের রুচি অনুযায়ী কিছুই নেই। আপনি নিজের খাবার উপভোগ করে খাওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের বয়সের ভিত্তিতে ম্যাশড ব্যানানা বানিয়ে বা নরম ফল কেটে খেতে দিতে পারেন। এর ফলে তারা রোজ একটি করে ফল খেতে পারবে, যা সুপারিশ অনুযায়ী তাদের খাওয়া উচিত এবং সেইসাথে খাওয়া নিয়ে ব্যস্তও থাকতে পারবে। আঙ্গুর বা এরকম শক্ত জাতীয় খাবারগুলি বাইট-সাইজ পিস করে কেটে তারপর পরিবেশন করুন, যাতে এগুলি তাদের গলায় আটকে না যায়।
  • বাচ্চাদের খাবার চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেতে শেখান, যাতে তারা স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করে। বাবা-মায়েরা যেহেতু রোল মডেল, তাই তাদের আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে এবং শিশুদের মধ্যে ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • খাবার সম্পর্কে তাদের কৌতূহলকে বাড়িয়ে তুলুন এবং টেবিলে রাখা খাবার কীভাবে খেতে হয়, তার নিয়মকানুন সম্পর্কে শেখান। সামান্য অলিভ অয়েল বা মেরিনারা সস মেশানো পাস্তা যে কোনও বাচ্চার প্রিয়, কারণ তারা চামচ বা কাঁটাচামচ দিয়ে খুব সহজেই পাস্তার টুকরো তুলে খেতে পারে।
  • সবসময় ওয়েটারকে বলুন সন্তানের সবজিতে অতিরিক্ত লবণ না দিতে। এমনকি হালকাভাবে সিজন করা সাধারণ বেকড পটেটো বা সুইট পটেটো ভালো বিকল্প হতে পারে। বাচ্চাদের মশলাদার বা গরম খাবার খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এর ফলে তাদের ক্ষতি হতে পারে। শুরুতে আপনি নিজে চেখে দেখে নিলে সবথেকে ভাল হয়।
  • সন্তানদের নতুন ধরনের খাবার খেতে উৎসাহিত করুন। যত বেশি বৈচিত্র্য থাকবে, তত বেশি তারা পুষ্টি পাবে। এমনকি আপনি তাদেরকে তাদের প্লেটে থাকা নতুন খাবারে কয়েকবার বাইট দিয়েও দেখতে বলতে পারেন।
  • গোটা পরিবারকে এক প্লেট ভর্তি খাবারের স্বাদ নিতে দেওয়া হোক কি চিজকেক শেয়ার করা, আপনার সন্তানকে খাবার শেয়ার এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
  • যেহেতু আজকাল আগেকার তুলনায় বাইরে বেশি খাওয়া-দাওয়া করা হয়ে থাকে, তাই আপনার বাচ্চা কী পান করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তাদের সোডার পরিবর্তে ফ্যাট-ফ্রি দুধ বা সাধারণ জল বা তাজা ফ্রুট জুস খেতে দিন।
  • বেকড বা গ্রিলড চিকেন ডিশ, ভেজিটেবল স্টার-ফ্রাই বা মিটবল এবং টমেটো সস দেওয়া পাস্তা আপনার বাচ্চার সাথে শেয়ার করে খেতে পারেন। আপনার সন্তানের জন্য প্রধান মিল হিসাবে স্বাস্থ্যকর কোনও অ্যাপেটাইজার যেমন চিকেন স্কিউয়ার, স্প্রিং রোল বা কাসাডিলাও অর্ডার দিতে পারেন। স্যুপ ও স্যান্ডউইচ কম্বোও যথাযথ হতে পারে।
  • আপনার সন্তানদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে কয়েকটি প্রাথমিক নিয়ম ঠিক করে নিন। তাই যদি তারা আগে থেকেই চিনি দেওয়া কোনও খাবার খেয়ে থাকে, তাহলে তাদের বোঝান যে ডেজার্টে আরেকবার একই জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। পরিবর্তে, তারা ফল খেতে পারে।

সুতরাং, এগুলি বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে উৎসাহিত করার কয়েকটি স্মার্ট উপায়। স্থানীয় দ্রব্য থেকে প্রস্তুত খাবার এবং যেগুলি বেশি সস ব্যবহার করা হয় না এমন খাবার অর্ডার দেওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ সস মেশানো খাবারে অ্যাডিটিভ মেশানো থাকতে পারে। রেস্তোরাঁর মেনুতে সাধারণত ক্যালোরি, ফ্যাট এবং লবণ বেশি থাকে। সুতরাং, বাইরে খেতে গেলে একটি স্বাস্থ্যকর রেস্তোরাঁ বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আপনার সন্তানের মিল ও খাবারের পরিমাণে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন যাতে সে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে পারে।