"আমি ক্ষুধার্ত নই!" - পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় আপনি কি প্রায়ই এমনটা দাবি করেন? নানান ধরণের পাঠ্য অধ্যায়গুলি মুখস্ত করা হয়তো বাকি আছে আর সেকারণে খাবারকে অবহেলা করে আপনার পুরো সময় আপনি বইতে ব্যয় করতে আগ্রহী, তবে, এমনটা করলে আপনি ভুল করছেন! খাদ্য কীভাবে ভাল গ্রেডের কারণ হতে পারে এবং কেন আপনি পড়াশোনার সময় খাদ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না তা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেন পরীক্ষার সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি
দীর্ঘ অধ্যয়নের সময়, লাইব্রেরি সেশন এবং পর্বত প্রমাণ নোটগুলির অধ্যয়ণের কারণে পরীক্ষার সময়গুলি নিশ্চিতভাবেই সেমিস্টারের সবচেয়ে চাপপূর্ণ সময়। যেখানে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা এবং সময়ের যথোপযোগী ব্যাবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং যোগ্যতা অনুসারে ভালো স্কোর পেতে সহায়তা করে, সেখানে স্বাস্থ্যকর খাবারও পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য ফলাফল প্রদানে অবদান রাখতে পারে। একাডেমিক সাফল্যে ডায়্টের একটি বিশেষ ভুমিকা থাকায় ডায়েট এর সাথে এন্ট্রান্স পরীক্ষার অপরিহার্য সম্পর্কের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে, আর এটি একমাত্র সম্ভব সকালের জলখাবারকে অন্তর্ভুক্ত করে, নিয়মিত খাবার খেয়ে, এবং পরিমিত পরিমাণে ফল-মূল ভক্ষণ করে।
পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার সমূহ
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা অন্য যেকোনও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাদ্য তালিকার পরিকল্পনা করার সময়, নিম্নলিখিত খাবারগুলি প্রত্যাশিত ফলাফল সরবরাহ করতে সহায়তা করতে পারে:
- মাছ: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের চমত্কার উত্স হওয়ার পাশাপাশি মাছের মধ্যে আছে সেলেনিয়াম নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস মিনারেল। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘকালীন মেয়াদে স্বল্প মাত্রার সেলেনিয়াম জ্ঞানীয় কার্যকারিতা হ্রাসের কারণ। সেলেনিয়ামের অন্যান্য উত্স হল বাদাম এবং ডিম, যা পরীক্ষার সময়ের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডিম: পরীক্ষার সময় কী কী খাবার খেতে হবে, তার এই সংক্ষিপ্ত তালিকাটি ডিম ছাড়া থেকে যাবে অসম্পূর্ণই। এটি প্রোটিন, ভিটামিন A এবং কোলিনের অন্যতম সেরা উত্স। মস্তিষ্কে অ্যাসিটিলকোলিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারকে সংশ্লেষিত করার জন্য চোলিনের প্রয়োজন হয়, যা মস্তিষ্কে রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, স্নায়ু এবং জ্ঞানকে বাড়িয়ে তুলতে কোলিনের প্রয়োজন হয় এবং এটি স্মৃতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সবুজ শাক-সবজি: এর মধ্যে রয়েছে ব্রাসেলস স্প্রাউট, বাঁধাকপি, পালং শাক, এছাড়া রয়েছে মটরশুঁটি যেটিফোলেটের ভাল উত্স। গবেষণায় দেখা গেছে যে ফোলেট মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং এটি প্রদাহমূলক কণিকা হ্রাস করতে পারে যা জ্ঞানীয় হ্রাসের একটি কারণ। স্মৃতিশক্তির ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলেও জানা যায়। তাই, পরীক্ষার সময় স্মরণশক্তি বাড়ানোর খাদ্য হিসেবে এক বাটি সবজি দারুণ কাজ করে এবং আপনার এই মনোনিবেশ করে অধ্যয়নের সময়গুলোতে এটি বাদ দেওয়া উচিত নয়! ব্রকোলি: ক্রুসিফেরাস সবজি হিসাবে, ব্রোকলিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন C এবং এটি বেশ কয়েকটি উপকারী উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যে পাওয়া যায় যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ব্রকোলি ভিটামিন K-এরও একটি উত্তম উত্স, যা এমন এক ধরনের ফ্যাটকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম যেটি মস্তিষ্কের কোষগুলির বেঁচে থাকায় প্রভাব ফেলে। ব্রকোলির এই বৈশিষ্ট্য এটিকে পরীক্ষার সময়ে খাওয়ার দারুণ খাদ্যে পরিণত করে।
- ব্লুবেরি: ব্লুবেরি পলিফেনল নামে পরিচিত কার্যকরী উদ্ভিদ যৌগে সমৃদ্ধ যা জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে উপকারী হতে পারে। এমনটাও উল্লিখিত আছে যে ব্লুবেরি খেলে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তির উন্নতি সাধনে তা সহায়তা করতে পারে, ফলে এটি পরীক্ষার সময়ে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত জন্য একটি প্রয়োজনীয় খাবারে পরিণত হয়।
- বাদাম এবং বীজ: ফ্ল্যাক্সসিড ও চিয়াসহ বীজ এবং আখরোট ও বাদাম জাতিয় খাবার ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের উত্তম উত্স, যা এক ধরনের উপকারি ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য, কারণ এর ঘাটতির ফলে পড়াশোনা এবং স্মৃতিশক্তি ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া এগুলো ভিটামিন E-এর উত্তম উত্স, যা ভালো কগনিশনের কারণ।
- ডার্ক চকলেট: ন্যূনতম চিনি দিয়ে তৈরি ডার্ক চকোলেটে কামড় দিলে সেটি আসলে পরীক্ষার আগে খাওয়ার জন্য একটি উপকারি মিষ্টি এবং সুস্বাদু খাবার হিসাবে কাজ করতে পারে। কারণ কোকোয়া মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে মস্তিষ্কের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- তরল:জল মস্তিষ্কের ভরের 75% গঠন করে এবং জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতার জন্য অপরিহার্য, তাই হাইড্রেশন এবং তড়িত্বিশ্লেষ্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা না করলে এই সংক্ষিপ্ত তালিকাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এছাড়া, এমনটা লক্ষ্য করা গেছে যে সামান্য জলশূন্যতাও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং তা স্মৃতিশক্তিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং, সাদা জল এবং অন্যান্য তরল যেমননারকেল বা আখের রস,অথবানরম নারকেল মিন্ট কুলারেরদ্বারা হাইড্রেটেড থাকা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে একটি অপরিহার্য উপায়।
পরীক্ষার সময়ের উপযোগী খাবারের টিপস
পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলে অন্য কোনো কিছুর জন্য সময় পাওয়া যায় না, কিন্তু খাদ্য এক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম। অশেষ অধ্যয়ন এবং মধ্যরাতে শক্তি ক্ষয় করে আপনি যে ফলাফল পেতে চাইছেন তা সঠিক পরীক্ষা কালীন খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তত্ত্বটি হ'ল নিয়মিত খাওয়ার উপলক্ষগুলি মস্তিষ্কের বিকাশ এবং ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার একটি মাধ্যম প্রদাণ করে, পাশাপাশি জ্ঞানীয় ক্রিয়াকলাপকে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত শক্তিও সরবরাহ করে।
পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের কয়েকটি বিকল্প নীচে তালিকাভুক্ত করা হল:
ওটসের সাথে ডিমের অমলেট: সকালের জলখাবার ও নিয়মিত ব্যবধানের ভোজনগুলি গ্রহণ করলে সামগ্রিকভাবে একাডেমিক পারফরমেন্স বাড়তে পারে। যেহেতু পরীক্ষার জন্য ডিম একটি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের খাদ্য, তাই সকালের জলখাবারে ডিম খেলে আপনার দিনের শুরুটা দারুণ হবে। আপনি যদি আমলেটের ভক্ত না হন তাহলে ডিম ভুরজিও তৈরি করতে পারেন। এই দুটোই আপনি খেতে পারেন চাপাটি বা পাউরুটি দিয়ে।
স্যান্ডউইচ(অ্যাভোকাডো অথবা চিকেন ক্লাব স্যান্ডউইচ): পরীক্ষারকালীন খাদ্যের পরিকল্পনা করার সময় একটি স্যান্ডউইচ দারুণ কাজে আসতে পারে। একটি স্যান্ডউইচে অ্যাভোকাডোর মত স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায়, যেটি ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমত্কার উত্স, বা মুরগির মাংসও দেওয়া যেতে পারে, যা প্রোটিন এবং কোলিন সরবরাহ করতে সহায়তা করবে।
ব্রকোলি স্যুপ:একটি উষ্ণ স্যুপের বাটি আপনার অধ্যয়নের সময় এক দারুণ সাথি হয়ে উঠতে পারে। আর এই স্যুপের প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্রকোলির থেকে উত্তম আর কী হতে পারে, যেখানে এই সবজিটির মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষমতা অতুলনীয়। পরীক্ষার সময় স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য এটি একটি দারুন খাদ্য। এছাড়াও, এটি বানানোও বেশ সহজ এবং গুঁড়ো মেশালে এর গুণ আরও বাড়িয়ে তোলা যায়।
আপেল চিয়া বীজ স্মুদি: হতে পারে বীজ একটি ক্ষুদ্র উপাদান কিন্তু পরীক্ষার সময় স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য খাদ্য হিসাবে এটি দারুণ কাজ করে। চিয়া বীজ কেবল সুস্বাদুই নয়, ফল ও দইয়ের সঙ্গে স্মুদি তৈরি করা হলে এই পানীয়টি অন্ত্রে কর্মক্ষমতা বাড়াতেও যথেষ্ট সাহায্য করে। এটি প্রমাণিত যে, আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কে প্রবেশ করা বেশ কিছু আন্ত্রিক হরমোন জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
কলা চকলেট কুকিজ: কেউ কেউ পরীক্ষার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুদার্ত বোধ করতে পারে। অন্তঃসারশূন্য ক্যালোরি গ্রহণ করার পরিবর্তে, কলা এবং কোকোয়া দিয়ে তৈরি কুকিজের মতো স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সগুলি খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ এগুলি বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর যা জ্ঞানের উন্নতি করতে পারে।
উপসংহার
এটি কোনও অজানা বিষয় নয় যে পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বিস্ময়কর ফলাফল প্রদান করতে পারে, কারণ নির্দিষ্ট পুষ্টির উচ্চ পরিমাণ জ্ঞান এবং আবেগকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। মজার বিষয় হল, খাদ্য গ্রহণ জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারে, এবং খাদ্য চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য একটি নির্ধারক কারণ হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং,আমদের খাদ্যকে অবহেলা করা বন্ধ করার সময় এসে গেছে , পরিবর্তে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন!