সম্ভবত আপনি যে কোনও পুষ্টিবিদের কাছ থেকে সবচেয়ে সাধারণ যে উপদেশটি শুনতে পাবেন তা হল 'ব্যালেন্সড ডায়েট' মেনে চলা। কথাটির অর্থ বোঝাই হল একটি সামগ্রিক খাদ্যতালিকাগত জীবনধারার নেতৃত্ব দেওয়ার চাবিকাঠি, এবং আপনাকে আপনার বাচ্চাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবারে পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।
উৎস: ICMR-NIN আমার দৈনিক খাবারের প্লেট
সুষম ডায়েট মানে শুধু সঠিক খাবার খাওয়াই নয়, আপনার প্লেটে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা। উপরন্তু, সুষম খাদ্যকে আপনাকে পুষ্টির একটি অতিরিক্ত সেট সরবরাহ করতে হবে যা কম খাওয়ার সময়ে স্টোরেজ রিজার্ভ হিসাবে কাজ করতে পারে (দরকার হলে)। একটি বাচ্চার স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবারের আয়োজন কোনও শিশুখেলা নয়!
অভিভাবকত্ব বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় - সুষম খাবার অর্জনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা থেকে শুরু করে শিশুর স্বাদকোরককে খুশি করা এবং খাবার নিয়ে বায়নাক্কা প্রবণ শিশুদের মোকাবিলা করা। খরচের সমস্যা, সুবিধার বাধা ইত্যাদি অন্যান্য ফ্যাক্টরও বিদ্যমান।
এখানে শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবারের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করার একটি প্রচেষ্টা দেওয়া হল। শিশুর স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবার তৈরি করা
এখানে এমন কিছু ফুড গ্রুপ/উপাদানের কথা বলা হল, যা শিশুর স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবার তৈরি করে
- খাদ্যশস্য, শস্য, ডাল ও মিলেট: বৈচিত্র্য যোগ করতে এবং গ্রহণযোগ্যতাকে উৎসাহিত করতে ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে ছোট পরিবর্তন করুন। ফাইবারে পূর্ণ, হোল গ্রেইন এবং খাদ্যশস্যগুলি দুর্দান্ত বিকল্প এবং ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ। পুষ্টিসমৃদ্ধ মিলেটে অনেক কম ক্যালরি থাকে, তাই চমৎকার অ্যাড-অন হিসাবে পরিচিত। অন্যদিকে প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল শিশুদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ফল এবং শাকসবজি: প্রতিদিন আপনার খাবারে পাঁচটি ফল ও শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলি ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ, যা একটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুগ্ধজাত খাবার পুষ্টির একটি বড় উৎস। এতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে। যদিও বেশি ফ্যাট/চিনিযুক্ত খাবার যেমন চিজ এবং আইসক্রিম এড়িয়ে চলুন।
- মাংস, মাছ, মুরগি: আমিষভোজীদের জন্য, প্রাণীজ পণ্যগুলি সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সহ সম্পূর্ণ প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এইসব খাবার গ্রহণ মস্তিষ্ক এবং হাড়ের বিকাশকে উৎসাহিত করে।
- ফ্যাট, চিনি, বাদাম, তেল, তৈলবীজ: বেশিরভাগ শিশু ফ্যাট এবং চিনিযুক্ত খাবার পছন্দ করে, তাই এটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। স্বাস্থ্যকর হওয়ার জন্য খাবারে বিভিন্ন ধরনের বাদাম অবশ্যই যোগ করুন!
- প্রচুর জল খান: হাইড্রেটেড থাকুন। এটি খাদ্যকে এমনভাবে বিপাক করতে সাহায্য করে যাতে সুষম খাদ্য উল্লেখযোগ্য নিউট্রিয়েন্টের আকারে শোষিত হয় এবং ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যকর ফলাফলের দিকে পরিচালিত করে।
চটজলদি টিপস:
- রোল মডেল হয়ে উঠুন: আপনাকে আপনার বাচ্চাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। নিশ্চিত করুন যে আপনি বিভিন্ন ধরণের খাবার খান কারণ জীবনের প্রথম দিকে পছন্দগুলির বিকাশ ঘটে। আপনার সন্তানকে খাবারের প্রশংসা করতে শেখান।
- খাবারের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করুন: আপনার সন্তানের সাথে বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করুন। অন্যান্য বিভ্রান্তি কমিয়ে আনুন। যতবার সম্ভব পরিবারের সকলে মিলে একসাথে খান। রান্নাবান্না ও বাগান পরিচর্যায় আপনার সন্তানদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করুন।
- সৃজনশীল হন: বাচ্চাদের এবং প্রি-স্কুলারদের একটি স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবারের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বানানোর চেষ্টা করুন। এটি খাবার এবং সংস্কৃতির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাকে উৎসাহিত করে, একঘেয়েমি ও বিরক্তির সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং আরও নিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ বাড়ায়।
- স্মার্ট প্ল্যান বানান: স্বাস্থ্যকর দ্রব্য মজুদ করুন, খাবার প্রস্তুত করার জন্য সময় বের করুন এবং আপনার রেসিপি তালিকায় বিকল্পগুলি বাড়ান।
স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে:
- সর্বোত্তম বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
- ঘাটতি প্রতিরোধ করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- জীবনব্যাপী স্বাস্থ্যকর খাওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
- রোগ প্রতিরোধ করে (মেদবৃদ্ধি, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ)।
আর অপেক্ষা করার মানে নেই, এগিয়ে যান এবং বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর প্লেটভর্তি খাবার তৈরি করুন!