নতুন মায়েদের প্রায়ই তাদের সন্তানদের কী খাওয়ানো উচিত, সেই বিষয়ে তারা প্রচুর তথ্য ও পরামর্শ পেয়ে থাকেন। এবং যখন তাদের সন্তানরা বড় হতে থাকে, তখন পর্যাপ্ত পুষ্টির বিষয়ে তাদের উদ্বেগ বেড়ে যায়। যদিও বেশীরভাগ মায়েরাই জানেন যে তাদের সন্তানদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সমস্ত ফুড গ্রুপের খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব প্রায়ই দেখা যায়। এই কারণেই আপনার ছোট সন্তানদের জন্য সুষম খাবারের পরিকল্পনা করার সময় সবসময় ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

শুরুতেই আপনার সন্তানকে কী ধরনের খাবার খাওয়াবেন, কী দেবেন না, কখন দিতে হবে, কতটা পরিমাণে দিতে হবে এবং কী কী নিউট্রিয়েন্টের দিকে আপনার মনোযোগ দিতে হবে সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেতে এই নিবন্ধটি পড়ুন।

আপনার সন্তানের পছন্দের উপযোগী মিল প্ল্যানার

এই নিবন্ধে দেওয়া শিশুদের উপযোগী মিল প্ল্যান আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে খাদ্যে বৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কিন্তু, উল্লেখিত বৈচিত্র্য দেখিয়ে তাদের ভীত করে তুলবেন না। আপনি সবসময়ই সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা রকমের মিল বানাতে পারেন এবং এইভাবে নিজের মিল প্ল্যান ভেবে বের করতে পারেন। শুধু নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন যে আপনি প্রতিদিনের ভিত্তিতে নীচের টেবিলে তালিকাভুক্ত সমস্ত ফুড গ্রুপগুলি অন্তর্ভুক্ত করছেন কিনা।

ভারতীয় পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার শিশুর জন্য বিভিন্ন ফুড গ্রুপের সুপারিশকৃত অংশগুলি নিম্নরূপ:

  1-3 বছর 4- 6 বছরে
সিরিয়াল ও মিলেট 60 গ্রাম 120 গ্রাম
মসুর ডাল 30 গ্রাম বা 50 গ্রাম মুরগি/মাছ/ডিম 30 গ্রাম বা 50 গ্রাম মুরগি/মাছ/ডিম
দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট 500 মিলি 500 মিলি
শিকড় ও কন্দ 50 গ্রাম 100 গ্রাম
সবুজ শাকসবজি 50 গ্রাম 50 গ্রাম
অন্যান্য সবজি 50 গ্রাম 100 গ্রাম
ফলে 100 গ্রাম 100 গ্রাম
চিনি 15 গ্রাম 20 গ্রাম
ফ্যাট ও তেল 25 গ্রাম (5 চা-চামচ) 25 গ্রাম (5 চা-চামচ)

উপরের টেবিলে দেওয়া পরিমাণগুলি হল প্রস্তাবিত পরিমাণ। আপনার সন্তান সব দিনেই হয়তো এত বেশি খায় না, কিন্তু এই পরিমাণই এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে কম বলে মনে হবে। বাচ্চাদের একদিনে ক্ষুধার্ত বোধ না করা এবং অন্য দিন প্রচুর খিদে পাওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে সে যদি খুব লাফালাফি বা খেলাধূলা করে। তাদের সাধারণত দিনে দুটি প্রধান মিল এবং 2-3টি পুষ্টিকর স্ন্যাক্সের প্রয়োজন হয়।

আপনার বাচ্চার জন্য নিরামিষ মিল প্ল্যানার

মিল সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার রবিবার
ব্রেকফাস্ট পিনাট চাটনি দিয়ে ইডলি ও দুধ ভেজিটেবল বেসন চিলা, দুধ পনির রোল, দুধ ফিঙ্গার মিলেট আর ড্রাই ফ্রুট, দুধ, পরিজ ধনেপাতার চাটনি দিয়ে দোসা ও দুধ চিজ ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ মিল্ক আলুর পরোটা, দুধ
লাঞ্চ পালং শাক ডাল লেবু ভাত দই মিলেটের রোটি, বেগুনের তরকারি গাজর ও দই রাইতা ভাত, রসম ও শিমের পুরিয়াল দই মেথি খিচুড়ি, কারি রাজমা চাওয়াল দই কুচনো গাজর ও মুগ ডাল, স্যালাড, কোরিয়েন্ডার রাইস দই নিরামিষ বিরিয়ানি, মেথি রায়তা, কাচকলার চপ
স্ন্যাক আপেল ও ডালিমের স্যালাড, দুধ আমের টুকরো, দুধ কলা, দুধ খেজুর মিল্কশেক তরমুজের টুকরো, দুধ কলা ও ডুমুরের মিল্কশেক মিক্সড ফ্রুট স্যালাড ও দুধ
প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত স্ন্যাক স্প্রাউট ভেল ধোকলা তিলের লাড্ডু কোথম্বির ওয়াড়ি লেবু দিয়ে সেদ্ধ ভুট্টা ভাজা চিনাবাদাম খেজুর আর বাদামের লাড্ডু
ডিনার চাপাঠি ভিন্ডি আর আলু সবজি জিরা রাইস পনির মটর সবজি ভাত, ডাল মাখানি আর পেঁয়াজের রায়তা গোটা গমের রুটির সঙ্গে ভেজিটেবল কাঠি রোল মেরিনারা সস চিকপেক স্যালাডের সঙ্গে হোল হুইট পাস্তা লাউকি আর ছানা কারি, মিলেট, রুটি সূর্যমুখী বীজ এবং রসুনের সাথে কুমড়ার স্যুপ, হোল হুইট রুটি

আপনার বাচ্চার জন্য আমিষ মিল প্ল্যানার

মিল সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার রবিবার
ব্রেকফাস্ট সিদ্ধ ডিম টোস্ট দুধ ভেজিটেবল উথাপম দুধ কাটা ড্রাই ফ্রুটের সঙ্গে ডালিয়া পরোটা পোহা দুধ মুগ ডাল দোসা দুধ ওটস ইডলি দুধ ভেজিটেবল উপমা দুধ
লাঞ্চ ভাত ডাল ভাজা বিটরুট সবজি মুগ ডালের খিচুড়ি সিন্ধি কারি গোয়ান ফিশ কারি ভাত শসার স্লাইস বাজরা রুটি বেসন সিমলা মরিচ দই রুটি ছোলে ও সবজি রায়তা চিকেন ও ভেজিটেবল স্ট্যু টার্মারিক রাইস মক্কি কি রোটি সারসো কা সাগ দই
স্ন্যাক আপেল দুধ নাশপাতি দুধ কলা, দুধ ডুমুর ও মধুর মিল্কশেক তরমুজের টুকরো, দুধ কাস্টার্ড অ্যাপেল মিল্কশেক কমলালেবু ও মোসাম্বি মেডলে
প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত স্ন্যাক মিষ্টি ভুট্টা ভেল মিনি ইডলি ড্রাই ফ্রুট লাড্ডু ভাজা ফক্স নাট (মাখানা) হাং কার্ড ডিপ সমেত ভেজিটেবল স্টিক ভাজা চিনেবাদাম আর গাজর  
ডিনার মেথি থেপলা ইয়াম আর আলুর সবজি কড়াই চিকেন কারি চাপাটি মুলি পরোটা সবুজ মটরশুঁটি তরকারি গঙ্গুরা ডাল, হলুদ ভাত গাজর সবজি বাঙালি মাছের ঝোল ভাত মশলা দোসা শসা ও টমেটো স্লাইস ভেজিটেবল অ্যান্ড চিকেন স্যুপ হোল হুইট গার্লিক ব্রেড

আপনার শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে সাহায্য করার উপযোগী কয়েকটি অতিরিক্ত টিপস এখানে দেওয়া হল:

  1. জাম, ওয়াটার অ্যাপেল, বের, কাস্টার্ড অ্যাপেল, পার্পল ইয়াম, বাথুয়া পাতা ইত্যাদির মতো বছরের মাত্র কয়েকদিনের জন্য পাওয়া যায় এমন মৌসুমি ফল এবং সবজির সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন।
  2. এখানে প্রদত্ত পরিকল্পনা মতো একটি ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবারের সাথে একটি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করার চেষ্টা করুন। যেমন-পালং শাকের ডাল ও লেমন রাইস খেতে দিতে পারেন। এতে আয়রন ভালভাবে শোষিত হয়।
  3. প্রতিটি ফুড গ্রুপের মধ্যে থেকে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি ভ্যারিয়েন্ট অনন্য এবং এর নিজস্ব স্বাদ ও নিউট্রিয়েন্ট ভ্যালু সম্পন্ন। যেমন, আম কেনার সময় কেবল আলফানসো কেনার পরিবর্তে, বঙ্গনাপল্লী, মল্লিকা, বাদামী ইত্যাদিও কেনার চেষ্টা করুন।
  4. খাবারকে যতটা সম্ভব রঙিন বানানোর চেষ্টা করুন। এটি করার মাধ্যমে, আপনি বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট প্রোফাইল থাকা বিভিন্ন সবজি থেকে বেছে নিতে পারবেন।
  5. একটি 1 থেকে 3 বছর বয়সী শিশুর প্রায় 1060 ক্যালোরি এবং প্রায় 17 গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন, অন্যদিকে 4 থেকে 6 বছর বয়সী একটি শিশুর প্রায় 1350 ক্যালোরি এনার্জি এবং 20 গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।
  6. শর্করা ও লবণাক্ত খাবার যেমন চিপস খাওয়ানো সীমিত করতে হবে। হোম-পপড পপকর্ন স্বাস্থ্যকর, তবে প্যাকেজজাত খাবার যেগুলি কিনে এনে ওভেনে বসিয়ে তারপর খেতে হয়, সেগুলি এড়িয়ে চলুন।
  7. আপনার সন্তান যদি স্কুল থেকে ফিরে আসার পর ক্ষুধার্ত থাকে, বিশেষ করে যদি সে নিয়মিত বাড়ির বাইরের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে তবে অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন।
  8. তবে লাঞ্চ বা ডিনারের অন্তত এক ঘণ্টা আগে কিছু খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
  9. বিভিন্ন রকমের রান্নার উপকরণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করুন। এমনকি যদি আপনি নতুন রান্নার চেষ্টা করেন, তবে নিশ্চিত করুন যে এটি যেন স্বাস্থ্যকর হয় (চিজ কম ব্যবহার করুন) আর তাদের মধ্যে সঠিক পরিমাণ প্রোটিন বজায় রাখুন। যেমন কেবল ম্যারিনারা সস দিয়ে আজকাল অনেকেই পাস্তা খান, যার মধ্যে কোনও প্রোটিন নেই। তাই চিকেনের সঙ্গে বা রাজমা ভেজিটেবল স্যালাডের সঙ্গে যোগ করে খেতে দিন।
  10. শিশু যেন পর্যাপ্ত জল পান করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জুস ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে দিতে হবে।
  11. আপনার সন্তান কতটুকু খাবার খায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। খাওয়ার সময় সর্বদা আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করুন।

উপসংহারে বলা যায়, যদি আপনি চান আপনার সন্তান ধীর-স্থির এবং স্বাস্থ্যকরভাবে বেড়ে উঠুক, তাহলে বৈচিত্র্য এবং ভারসাম্য হল সুপরিকল্পিত খাবারের রহস্য। উপরের প্ল্যানার এবং টিপসগুলি মাথায় রাখুন এবং আপনার সন্তানের ডাক্তারকে আরও নির্দেশনার জন্য জিজ্ঞাসা করুন।

আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা এবং গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান

আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in-এ ভিজিট করুন