পুষ্টি জীবনের সব পর্যায়ে, বিশেষ করে শৈশবে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি সর্বাধিক বৃদ্ধি ও বিকাশের সময়কাল। তবে যখন শিশুর পুষ্টির সাপেক্ষে বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে যে, শিশুরা নিজেরাই এই বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় যে, খাবারটি পুষ্টিকর কি না। ছোটদের জন্য গুরুত্ব রাখে উপস্থাপন, স্বাদ, টেক্সচার, গন্ধ। সুতরাং, উভয় দিককে ভারসাম্যপূর্ণ করতে শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করার বিষয়টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
শিশুদের উপযোগী সুষম খাবার
সুষম খাবার হল এমন খাবার যা বিভিন্ন ফুড গ্রুপের বিভিন্ন খাবারকে ধারণ করে এবং দেহে প্রয়োজনীয় সমস্ত নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া হয়। শিশুর জন্য সুষম খাবার খাওয়া কেন জরুরি, তার কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জেনে নিন
- সুষম খাদ্য থেকে শিশুরা সারাদিন বিভিন্ন কাজ করার জন্য যথেষ্ট এনার্জি অর্জন করতে পারে।
- বিভিন্ন টিস্যু, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দেহাংশের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
- সুষম খাবার দেহকোষগুলোর দ্রুত মেরামত ও আরোগ্য নিশ্চিত করতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
- সুষম খাবার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ নিশ্চিত করতে পারে এবং শিশুদের দ্রুত শিখতে ও সবকিছু স্মরণে রাখতে সাহায্য করে।
- শিশুর হাড় ও দাঁত যাতে মজবুত থাকে, তার জন্য সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
- সুষম খাদ্য মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং শিশুদের বুদ্ধিদীপ্ত ও মনোযোগী করে তোলে।
- সুষম খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে যে আপনার শিশু মোটেও অপুষ্টির শিকার নয়।
- ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের মতো লাইফস্টাইল সংক্রান্ত রোগ/ব্যাধির বিকাশ রোধ করতে হলে সুষম খাদ্য গ্রহণ জরুরি।
শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে উৎসাহিত করার উপায়
- শিশুদের সংশ্লিষ্টতা: আপনার শিশুকে দোকান-বাজারে নিয়ে যান এবং তাদের ফল ও শাক-সবজি বাছাই করতে দিন। তাদেরকে কিচেনে আপনার অল্প সময়ের সাহায্যকারী হতে উৎসাহিত করুন কারণ এটি তাদের সেই খাবার খেতে আগ্রহী করে তুলবে যা তারা প্রস্তুত করতে অবদান রেখেছে।
- প্রচুর রং ও টেক্সচার যুক্ত করুন: যদি খাবারটি শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তবে তা খাওয়ার সম্ভাবনার চেয়ে বেশি থাকে। একটি শিশু হয়তো কুচনো গাজর না খেতে চাইতে পারে, কিন্তু আপনি যদি তাকে একটি তারকা বা ফুলের সাইজে কেটে পরিবেশন করেন, তখন হয়তো এটাই তার সবথেকে পছন্দের খাবারে পরিণত হয়ে যেতে পারে! এর জন্য আপনার হয়তো অতিরিক্ত সময় ও প্রচেষ্টা লাগতে পারে, কিন্তু এর ফলাফল সার্থক হবে।
- পুরস্কার হিসেবে খাবার খেতে দেবেন না: বাচ্চাদের শিখতে দিন যে খাদ্য হল এমন কিছু, যা তারা তাদের নিজের উপকারের জন্য খায় এবং এটি এমন কিছু নয়, যাতা তারা কোনও ভালো কাজ করলে বা বাধ্য হয়ে চললে উপহার হিসাবে পেতে পারে।
- তাদের কল্পনা করতে সহায়তা করুন: শিশুরা বড়সড় শব্দ বা জটিল স্বাস্থ্য ধারণাগুলি বোঝার মানসিকতায় থাকে না, তাই সহজ উপায়ে তারা কী খাচ্ছে তার সুবিধাগুলি বুঝতে তাদের সহায়তা করুন। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে তাদের দুধ খেতেই হবে, এমন কথা বলার পরিবর্তে, বলুন যে এটি তাদের শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত তৈরি করতে সাহায্য করবে।
- বৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত করুন: শিশুরা আগে যদি কোনও খাবার প্রত্যাখ্যান করে থাকে, তা সত্ত্বেও আপনি সেগুলিকে তাদের পছন্দের ডিশে লুকিয়ে পরিবেশন করলে তারা আরও বেশি সেইসব খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখায়। যেমন, আপনার সন্তান যদি পরোটা পছন্দ করে কিন্তু মটর ডাল পছন্দ না করে, তাহলে মটরগুলোকে চেটকে ময়দায় মিশিয়ে নিন, তাহলে সে বুঝতেও পারবে না যে সে এগুলো খাচ্ছে।
- রোল মডেল হয়ে উঠুন: আপনার শিশু আপনার সব কিছু অনুসরণ করবে এবং যদি আপনি স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার খেয়ে চলেন, তাহলে ধরে নিন এখন হোক কি পরে, আপনার সন্তান আপনার পথ ধরেই এগোতে চলেছে।
শিশুদের সুষম খাবার খাওয়ানোর টিপস:
আপনার সন্তানের প্রিয় খাবার পুষ্টিতে ভরপুর এবং সুস্বাদু কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত কিছু সৃজনশীল উপায় রয়েছে!
- তেরঙ্গা পরোটা: শিশুরা রং পছন্দ করে, তাই তাদের নিয়মিত পরোটা পরিবেশন করার পরিবর্তে, তারতম্য অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ। তেরঙ্গা পরোটা তৈরি করতে, ময়দার ডেলাটিকে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করুন। এটি ভাগে কুচনো গাজর, অন্যটিতে কুচি করা পালং শাক ও থেঁতো করা মটরশুঁটি এবং শেষ অংশে সেদ্ধ ও চেটকে নেওয়া বিটরুট যোগ করুন। আলাদাভাবে এই তিনটি ভিন্ন রঙের ময়দার ডেলাকে রোল করুন এবং একে অপরের পাশে অবস্থান করানোর পরে, তাদের একসাথে ব্রেড করুন। আপনি যখন অবশেষে ব্রেড করা ময়দার ডেলা নিয়ে রোল আউট করে পরোটা বানাবেন, তখন সেগুলি অত্যন্ত রঙিন হয়ে উঠবে, এটি একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করবে, যা দই দিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে।
- পিজ্জা বা ব্রেডিজ্জা: আপনি পিজ্জা বেস ব্যবহার করতে পারেন (মাল্টিগ্রেন এবং হোল-গ্রেন বেসগুলি বেছে নিন) অথবা যদি আপনি দ্রুত সমাধান চান, অথচ খুঁজে না পান, তাহলে আপনি রুটির একটি টুকরোও ব্যবহার করতে পারেন (আবার, বাজরা/হোলগ্রেন/মাল্টিগ্রেন বিকল্পগুলিও দুর্দান্ত পছন্দ হতে পারে)। পিজ্জা বা ব্রেডের গায়ে, টমেটো, ক্যাপসিকাম, সিদ্ধ ভুট্টা এবং গ্রেট করা গাজরের মতো রং বেরঙের কাটা সবজি যোগ করুন, উপরে চিজ (চিজ স্লাইস ব্যবহার না করে তাজা, প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নিন) ছড়িয়ে দিন এবং বেক করুন। গলানো চিজের নিচে লুকিয়ে থাকা সবজির কল্যাণে, বাচ্চারা এই সুস্বাদু জলখাবারটি কখনই প্রত্যাখ্যান করবে না!
- ভেজ কাটলেট: বিটরুট, মটরশুটি, আলু, বিনস এবং গাজরের মতো সবজি সামান্য জলে সেদ্ধ করার পরে চেটকে নিয়ে তারপর হাত দিয়ে চেপে কাটলেটের আকার দিতে হবে। এরপর ডিম (ইচ্ছে হলে) এবং ব্রেড ক্রাম্ব দিয়ে কোট করে ভেজে নিন। এইভাবে সুস্বাদু ইভিনিং স্ন্যাক্স তৈরি হয়ে যাবে, যা পুষ্টিতে ভরপুর।
- ফ্রুট বা ড্রাই ফ্রুট মিল্কশেক: সাধারণত শিশুরা দুধ খাওয়া নিয়ে বায়নাক্কা করে। কিন্তু যখন ক্যানজাত জুস খাওয়ার কথা আসে, তখন তাদের খুব ভালো লাগে! এ কথা মাথায় রেখে ফল দিয়ে দুধের স্বাদ নেওয়া খুবই সহজ ও স্বাস্থ্যকর সমাধান। আপেল কুচি করে নিন এবং দুধের সঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন, যতক্ষণ না তা মিহি হয়। তাতে আধ চা-চামচ গুঁড়ো ড্রাই ফ্রুট মেশান, যাতে সুস্বাদু মিল্কশেক বানানো যেতে পারে। পানীয়টিকে মজাদার বানাতে দুধের সঙ্গে গুঁড়ো ড্রাই ফ্রুট বা ভেজানো ড্রাই ফ্রুটকে থেতলে মিশিয়ে দিতে পারেন।
শিশুদের জন্য সুষম খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং সৃজনশীলতা হল মূল বিষয়। ভাল পুষ্টি অভিমুখে যাত্রায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করুন, এইভাবে তারা বড় হয়ে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক হবে যারা সমঝদারভাবে খাবার নির্বাচন করে!
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in ভিজিট করুন
আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের বিকল্প সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in ভিজিট করুন