এটা আমরা সবাই জানি যে, কোলেস্টেরল বেশি থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেসব খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, যেমন- গোটা শস্য, ওয়েহ প্রোটিন, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি, সেগুলো খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে।
ভূমিকা
চিকিত্সাবিজ্ঞানের কোলেস্টেরল এমন একটি শব্দ যার সম্বন্ধে বিভ্রান্তি সবচেয়ে বেশি। বেশির ভাগ লোক এটাকে খারাপ শব্দ ছাড়া আর কিছুই ভাবেনা, যা যেকোনো মূল্যে পরিহার করা উচিত। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এটি আপনার শরীরের বিপাকের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বেশ কয়েকটি হরমোন এবং ভিটামিনের জন্য একটি বিল্ডিং ব্লক।
তবে,যখন আপনার রক্ত প্রবাহে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে, তখন এটি প্লাক গঠনের দিকে নিয়ে যায়,যা শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন বিপাকীয় রোগের কারণ হতে পারে।
আপনার শারীরিক ক্রিয়াকলাপের যত্ন নেওয়া এবং এমন খাবার খাওয়া যা কোলেস্টেরল দ্রুত হ্রাস করে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উন্নতি ঘটায়।
উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে যথাযথ ডায়েট ও ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য এখানে দশটি খাবারের তালিকা দেওয়া হল।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে 10টি সেরা খাবার
1. গোটা শস্য (ওটমিল এবং সোরঘাম)
ওটস হল একপ্রকার ভোজন যোগ্য দানাশস্য যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে কারণ এতে বিটা-গ্লুকান নামে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ফাইবার থাকে। বিটা-গ্লুকান একটি জলে দ্রবণীয় ফাইবার যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ওটমিলের জুড়ি নেই।
সোরঘাম,যেটি জোয়ার নামেও পরিচিত, হলএকটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য যা সারা বিশ্বে উত্পাদিত হয় এবং পুষ্টি এবং ডায়েটারি ফাইবার দ্বারা পূর্ণ। জোয়ারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। জোয়ার দিয়ে চাপাটি, উপমা, ঢোকলা ইত্যাদি বানানো যায়।
2. ওয়েহ ওয়াটার এবং পাউডার
কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্যতালিকায় পরের স্থানটি হল ওয়ে প্রোটিনের। ওয়ে প্রোটিনের অনেক উপকারিতা রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা।
এতে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা পেশির বৃদ্ধি ও মেরামতের কাজে সহায়তা করে। এটি ক্যালসিয়ামের একটি উত্তম উত্স, যা হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও রয়েছে বলে দেখা গেছে।
3. রসুন
কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রণের তালিকায় পরের উপাদানটি হল রসুন। ভারতীয় রান্নাঘরে এটি খুবই প্রচলিত, যেটি সুগন্ধি যোগ করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও ব্যবহৃত হয়। রসুনের অনেক উপকারিতাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কোলেস্টেরল কমানো। রসুন লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (LDL) এর উত্পাদনকে বাধা দিয়ে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, রসুনের মধ্যে এলিসিন রয়েছে, যেটি একটি যৌগ যা LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীর কঠিনতা) প্রতিরোধ করে। রসুন থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে হলে কাঁচা বা হালকা রান্না করে খাওয়াই শ্রেয়।
4. সয়াজাত খাদ্য
সয়া জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্ল্যাভোন থাকে, যা উদ্ভিদজাত রাসায়নিক উপাদান যেটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। সব মিলিয়ে কোলেস্টেরল ও বিপাকীয় রোগ কমাতে সয়া ভিত্তিক খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
5. নির্বাচিত শাক-সবজি
কোলেস্টেরলের কথা বললে পাতাযুক্ত সবুজ শাক-সবজিই সবচেয়ে ভালো খাবার। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাক-সবজি ছাড়াও কলার্ড গ্রীন, মটরশুঁটি, পদ্মের মূল এবং বেকড মিষ্টি আলু অন্যান্য কিছু তন্তুময় বিকল্প যা আপনি আপনার নিম্ন কোলেস্টেরল ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
6. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। অ্যাভোকাডোতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এতে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যাভোকাডো ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন C, ভিটামিন E, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উত্তম উত্স।
হার্ট সুস্থ্য রাখতে কোলেস্টেরল ডায়েটে অ্যাভোকাডো যোগ করুন।
7. বাদাম (বাদাম ও আখরোট)
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী খাবারের তালিকায় এর পরের স্থানে রয়েছে বাদাম। বাদাম কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এগুলো ভিটামিন E-এর চমত্কার উত্স, যা কোলেস্টেরলের মাত্রার উন্নতিতে সাহায্য করে বলে জানা যায়। এ ছাড়া এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যকর আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা রক্তে ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
আখরোট হল প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি উত্তম উত্স, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন 2-3 টি আখরোট খেলে মোট কোলেস্টেরল এবং কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাযুক্ত ব্যক্তিদের এন্ডোথেলিয়াল কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
তাই কোলেস্টেরল কমাতে যদি সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রণের ডায়েটে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে বাদাম রাখুন!
8. অলিভ অয়েল
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী খাবারের তালিকায় এর পরের স্থানে রয়েছে অলিভ অয়েল।
অলিভ অয়েল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং বিপাকীয় রোগ প্রতিরোধ করে। অলিভ অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীর ভেতরের আস্তরণকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।
9. ডার্ক চকলেট
কয়েকটি উপায়ের মাধ্য্যমে ডার্ক চকোলেট কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এক, ডার্ক চকোলেটে পলিফেনল থাকে, যা এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, ডার্ক চকোলেট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তাই প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল কমাতে যদি আপনার ডায়েটের প্রয়োজন হয় তাহলে সুগার ফ্রি ডার্ক চকোলেট আপনার জন্য উত্তম বিকল্প হতে পারে।
10. মাছ এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড
মাছ এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। কোলেস্টেরল কমাতে মাছ এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড দুটিই গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সারা শরীরে প্রদাহ কমাতে পারে এবং বিপাকীয় রোগ থেকে রক্ষা করে। এগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে।
কোলেস্টেরল-বন্ধের ভাবনা কমানোর জন্য ডায়েট
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য আপনি বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। এগুলির মধ্যে একটি হল কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রিত খাদ্য অনুসরণ করা এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া। রেড মিট, পোল্ট্রিজাত মাংসে এবং ল ফ্যাট ডেইরি প্রোডাক্টের মতো প্রাণিজ মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। এ ছাড়া সাদা রুটি, পাস্তা ও চিনির মতো সাধারণ কার্বোহাইড্রেট সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে এবং তৈলাক্ত বা ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের মাংস, সবজি ও ফল আছে যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সহজ জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত খাদ্য আপনর খাদ্যতালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারেন এবং আপনার হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন।