বাবা মা হিসাবে আপনার সন্তানের পুষ্টির চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজনের তুলনায় খানিকটা বেশী কিছু করা বা প্রয়োজনের চাইতে কিছুটা কম করাটা খুবই সহজ ব্যাপার। তাইতো শিশুকে সন্তুলিত এবং স্বাস্থ্যকর আহার প্ৰদান করার ক্ষেত্রে এক সংগঠিত পদ্ধতির ভীষণ প্ৰয়োজন। আর তাইতো এইক্ষেত্রে খাদ্য পিরামিড বাচ্চাদের খাদ্য তালিকা তৈরীতে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে। এটি ত্রিভুজ আকৃতির একটি গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা, যেখানে বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী এবং প্রতিটি খাদ্য গ্রুপের সর্বোত্তম পরিমাণ নির্দেশ করে আযা আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন খাওয়ানো উচিত।
অন্যভাবে বলতে গেলে, এই খাদ্য পিরামিড চাৰ্টটি এখানে আপনাকে আপনার শিশুর দৈনিক প্ৰয়োজনীয় কাৰ্বোহাইড্ৰেট, প্রোটিন, চৰ্বি, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারের উপযুক্ত পরিমাণের বিষয়ে বিশদ তথ্য প্ৰদান করে। এর সাহায্যে খুব সহজেই এক স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিকল্পনা তৈরী করে নেওয়া যায়।
এই খাদ্য পিরামিডটিকে মূলত "চার স্তরে" ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি স্তর এক একটি গ্রুপকে বোঝায়। এবং সেগুলো হল-
- খাদ্যশস্য, ডাল, এবং বাজরা
- শাক-সবজি ও ফল
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, মাংস এবং মাছ
- তেল ও চর্বি এবং বাদাম ও বীজ
শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা এবং বিকাশের জন্য, উপযুক্ত মাত্রায় কাৰ্বোহাইড্ৰেট,প্রোটিন, চৰ্বি, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের সঠিক পরিমাণ খুবই প্ৰয়োজন। এগুলির প্রতিটির পরিমাণ আপনার সন্তানের বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এই খাদ্য পিরামিডটি বাবা-মা এবং শিক্ষকদের পথ নির্দেশ করতে পারে এবং তাদের এই প্ৰয়োজনীয়তাগুলিকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। যেমন এক সু-সন্তুলিত আহারে 3 থেকে 5 -এর কম খাদ্য গ্রুপ অন্তৰ্ভুক্ত থাকাটা উচিত নয় বলে এটা আপনাকে জানতে সাহায্য করতে পারে।
এই খাদ্য গ্রুপ কীভাবে বানানো হয়?
এবার যখন আপনি এই খাদ্য মিরাপিডের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন, তাহলে এই খাদ্য গ্রুপগুলি কীভাবে সাজানো যায় একবার দেখে নেওয়া যাক। যেহেতু এটি একটি পিরামিড, তাই এর শীর্ষতম স্তরটি সংকীর্ণ, এবং এটা বোঝায় যে ঠিক সেই স্থানটিতে কম পরিমাণের খাবারের প্রয়োজন রয়েছে।
এর সর্বনিম্ন স্তরটি বড় এবং চওড়া, যা নির্দেশ করে যে এই খাদ্য গ্রুপটিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।
খাদ্য পিরামিডের ব্যবস্থাপনা (উপর থেকে নীচ অবধি)
- উপরের স্তরটি, যেমন সংকীৰ্ণ: চৰ্বি এবং তেল ও চিনি
- দ্বিতীয় স্তর: মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম, মটরশুটি এবং বাদাম
- তৃতীয় স্তর: দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী
- চতুর্থ স্তর: শাক-সবজি ও ফল
- পঞ্চম স্তর অর্থাৎ বড় এবং চওড়াঃ গোটা শস্যের দানা
খাদ্য গ্রুপগুলি সম্পর্কে কীভাবে জানবেন?
- পিরামিডের গোড়ায় থাকা খাদ্য গ্রুপটি গোটা শস্যের দানা বোঝায়। স্বাস্থ্যকর কাৰ্বোহাইড্ৰেট এবং শক্তি প্ৰাপ্ত করতে হলে এই খাদ্য গ্রুপে উল্লেখিত পৰ্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া প্ৰয়োজন।
- চতুর্থ স্তরটি ফল এবং শাকসবজিকে বোঝায়, যা বিস্তারিতও রয়েছে, কারণ ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার পাওয়ার জন্য এগুলি অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- প্রাণীউত্স এবং দুধ-পণ্যগুলি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তর দ্বারা চিত্রিত হয় এবং এগুলি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া দরকার। এগুলোর সাহায্যে আপনার শিশু তার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় মিনারেল বা খনিজও পাবে।
- পিরামিডের শীর্ষভাগে অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, যেমন ফ্যাট এবং শৰ্করা, যা খুবই পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। এগুলি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এবং ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।
খাদ্য পিরামিড ছাড়াও আপনার সন্তানের নিয়মিত ব্যায়াম প্ৰণালী মেনে চলা এবং শারীরিকভাবে সক্ৰিয় হওয়াটাও জরুরী। আপনার সন্তান যে হাইড্রেশনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করছে তার উপর আপনাকে নজর রাখতে হবে।
খাদ্য পিরামিড অনুযায়ী একটি খাদ্য পরিকল্পনা বানিয়ে নিন:
- আপনার সন্তানের খাদ্যতালিকায় খুব কম পরিমাণে চিনি, লবণ এবং ফ্যাট রয়েছে তা নিশ্চিত করুন। জাঙ্ক ফুড খাওয়া এড়িয়ে চলা সেই লক্ষ্য অর্জনের একটি ভাল উপায়।
- ভাল প্রোটিন দিতে হলে, সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুবার তৈলাক্ত মাছ, সেইসাথে ডিম, মুরগির মাংস, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য, মটরশুটি, বাদাম এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করুন।
- শিশুদের সম্পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ানো উচিত।
- ওদের খাদ্যশস্য, আলু এবং অন্যান্য কার্বোহাইড্রেটের কমপক্ষে 3-4 অংশ খাওয়ান। ফল এবং শাক-সবজির কমপক্ষে 5 ভাগ অন্তর্ভুক্ত করুন (বেশী পরিমাণে শাকসবজি)।
- শিশুদের প্রতিদিন কমপক্ষে 6 কাপ জল খাওয়ানো উচিত।
- জল তেষ্টা পেলে জলের বদলে ফলের রস দেওয়া এড়িয়ে চলুন। এগুলি প্রাকৃতিক চিনিতে ভর্তি থাকে এবং খুব কম পরিমাণেই ফাইবার থাকে।
উপসংহার
আপনার সন্তান যাতে সুস্থভাবে জীবনযাপন করে তা সুনিশ্চিত করার জন্য, কোন খাবার স্বাস্থ্যকর, তার কতটা শিশুকে খাওয়ানো উচিত এবং প্রতিদিন তার কত ক্যালরি নষ্ট করা উচিত তা জেনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং একাজে খাদ্য পিরামিড আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, আপনি ধীরে ধীরে শুরু করলেও, সময়ের সাথে সাথে, আপনার শিশু সমস্ত প্রধান খাদ্য গ্রুপ থেকে খাবার খাচ্ছে সেই বিষয়ে নিশ্চিত করুন।