একটি সুস্থ পরিপাকতন্ত্র আপনার শিশুকে সুস্থ, সুন্দর ও সুখী রাখতে চমৎকার কাজ করতে পারে। ভাবছেন, এটি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়? সবচেয়ে ভাল উপায় হল তার প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করা। ফাইবার শুধু বাওয়েল মুভমেন্টকে মসৃণ ও ঝামেলামুক্ত করতেই সহায়ক নয়, পাশাপাশি এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে, শৈশবের স্থূলতা প্রতিরোধ করতে এবং এমনকি জুভেনাইল ডায়াবেটিসকে দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। তাই বিভিন্ন ধরনের ফাইবার সম্পর্কে, সেগুলো আপনার সন্তানের শরীরে কেমন আচরণ করে এবং কীভাবে আপনি তার খাদ্যতালিকায় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, সেসব জেনে নিন।

শিশুর ডায়েটে ফাইবার কেন যোগ করা উচিত?

ফাইবার এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা দেহ ভাঙতে পারে না। ডায়েটারি ফাইবার বেশি পাওয়া যায় ফল, সবজি, হোল গ্রেইন ও বিনের মতো উদ্ভিজ্জ খাদ্যে।

শিশুদের জন্য ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি:

  1. কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  2. পরিতৃপ্তি বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
  3. কোলেস্টেরল কমায়
  4. হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
  5. কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

আপনার সন্তানের ফাইবারের পরিমাণ গণনা করার একটি সহজ উপায় হল আপনার সন্তানের বয়সের সাথে 5 বা 10 যোগ করা। যেমন 5 বছর বয়সী শিশুর 10 থেকে 15 গ্রাম, 10 বছর বয়সী শিশুর 15 থেকে 20 গ্রাম এবং 15 বছর বয়সী শিশুর 20 থেকে 25 গ্রাম ফাইবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত।

দ্রবণীয় ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যার ফলে আপনার শিশুর শরীর খাদ্যে উপস্থিত শর্করা শোষণ করতে বেশি সময় নেয়। এটি আপনার শিশুর রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। দ্রবণীয় ফাইবার ফ্যাটি অ্যাসিডের সাথে আবদ্ধ হয়ে শরীর থেকে তাদের পরিবহনের মাধ্যমে LDL হ্রাস করতে সহায়তা করে। অদ্রাব্য ফাইবার জল শোষণ করে এবং আপনার বাচ্চার অন্ত্রের মাধ্যমে বর্জ্যকে সরাতে সাহায্য করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয়।

ফল, সবজি, বাদাম, বিন এবং শস্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা আপনি আপনার শিশুকে সরবরাহ করতে পারেন। কিছু খাদ্য ও পানীয়কে ফর্টিফাই করা যেতে পারে যাতে তাদের ফাইবার কন্টেন্ট বৃদ্ধি পায়। মনে রাখবেন যে প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে ফাইবার পাওয়া সবসময় ভাল কারণ আপনার বাচ্চারা এগুলি খাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত পুষ্টিও পায়। কিন্তু কোনও কারণে যদি আপনার বাচ্চা তার ডায়েট থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না পায়, তাহলে ছোট বাচ্চাদের জন্য ফাইবার সাপ্লিমেন্ট সেরা বিকল্প।

ফাইবারের ধরন

বিভিন্ন ধরনের ফাইবার রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। এগুলির প্রত্যেকের কাজ আলাদা এবং আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্যে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবারগুলি সাধারণত অধিক পরিচিত। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফাইবার সম্পর্কে জানানো হল:

  1. সেলুলোজ এবং হেমিসেলুলোজ: এগুলি হল বাদাম, গোটা শস্য, ছোলা এবং বীজে পাওয়া অদ্রাব্য ফাইবার। এগুলি প্রাকৃতিক রেচক যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
  2. ইনুলিন অলিগোফ্রুকটোস: এসব দ্রবণীয় ফাইবার প্রধানত পেঁয়াজ থেকে আহরণ করা হয় এবং বিট থেকে প্রাপ্ত সুগারের বাই-প্রোডাক্ট। এতে হজমশক্তি ভালো থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  3. লিগনিন: লিগনিন একটি অদ্রবণীয় ফাইবার যা প্রাকৃতিকভাবে ফ্ল্যাক্স, রাই এবং কিছু সবজিতে পাওয়া যায়। এটা হার্টের জন্য খুবই ভালো।
  4. মিউসিলেজ এবং বিটা-গ্লুকান: এগুলো হলো ওটস, বিন, মটরশুঁটি, বার্লি ইত্যাদিতে পাওয়া দ্রবণীয় ফাইবার। এগুলো LDL কোলেস্টেরল কমায় এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
  5. পেকটিন ও গাম: এগুলি বেশিরভাগ দ্রবণীয় এবং বেরি, ফল এবং বীজে পাওয়া যায়। এগুলো রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং খাদ্যনালীতে খাবার চলাচলের গতি কমিয়ে দেয়।
  6. পলিডেক্সট্রোজ পলিওল: এটি একটি দ্রবণীয় ফাইবার, যা মলকে নরম করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
  7. সাইলিয়াম: এটি বীজ থেকে প্রাপ্ত একটি দ্রবণীয় ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  8. হুইট ডেক্সট্রিন: এটি একটি দ্রবণীয় ফাইবার যা গমের স্টার্চ থেকে পাওয়া যায় এবং কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

শিশুর ফাইবার খাওয়ার পরিমাণ কীভাবে বাড়াবেন?

তাই বাজার থেকে যে কোনো খাবার কেনার আগে ফাইবার কন্টেন্টের জন্য নিউট্রিশন লেবেল দেখে নিন। 3 গ্রামের বেশি ফাইবার আছে এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন। ছোট বাচ্চাদের জন্য ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিন, এবং সব সময় রিফাইনড প্রোডাক্টের পরিবর্তে হোল গ্রেইন বেছে নিন, যেমন সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস। সব সময় জুসের পরিবর্তে একটি গোটা ফল বেছে নিন, এবং প্রতিটি খাবারে ফল এবং সবজি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। আপনি নিম্নোক্ত আইডিয়াগুলি ব্যবহার করে আপনার শিশুর খাদ্যে ফাইবার অন্তর্ভুক্ত পারেন:

  • দই, ওটমিল ও সিরিয়ালের সঙ্গে ফল ও বাদাম যোগ করুন
  • স্যান্ডউইচে প্রচুর সবজি দিয়ে পুর ভরুন
  • স্যালাড ও স্যুপে বিনস এবং বেকড খাবারে ব্র্যান যোগ করুন
  • স্ন্যাক্স হিসেবে হোল গ্রেন ক্র্যাকারস, এয়ার পপড পপকর্ন, সবজি ও ফল পরিবেশন করুন

মনে রাখবেন ধীরে ধীরে আপনার ছোট শিশুর খাদ্যে ফাইবার যোগ করুন, কারণ এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ালে তা ক্র্যাম্প, গ্যাস বা বদহজমের কারণ হতে পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সময় বাচ্চাদের যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করতে হবে, যা ফাইবারকে হজম করে অন্ত্রের মধ্যে চলাচল করতে সাহায্য করবে। আপনার সন্তান যদি ফাইবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটে ব্যথা অনুভব করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।