আপনি কি আপনার সন্তানের খাদ্য পছন্দকে বর্ধিত করার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন? যদি আপনার সন্তান খুব বেছেবুছে খাবার খায়, তবে কীভাবে তার স্বাদবোধ প্রসারিত করতে হয় এবং তার রুচির সীমিত পছন্দের বাইরে যেতে হয় তা বুঝতে হলে, আরও পড়ুন।
শিশুদের রুচি ও সংবেদনশীল অনুভুতির বিকাশ
12 মাস হয়ে গেলে শিশুরা আর দুধের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নানা ধরনের খাবার গ্রহণ করা শুরু করে। 12 থেকে 18 মাস পর্যন্ত তারা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের জন্য তাদের পছন্দ জাহির করতে সক্ষম হবে এবং সেইসাথে রুচি ও টেক্সচারের সংমিশ্রণকে শনাক্ত করতে পারবে। খাবারটি কেমন দেখতে, তার উপর ভিত্তি করে, শিশুরা এটিকে পরিচিত বা অজানা হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। তাই নতুন খাবার সদ্যোজাত শিশু এবং হাঁটতে শেখা শিশুরা প্রত্যাখ্যান করে যেহেতু, এটি তাদের কাছে অজানা। এমনকি খাবারে সামান্য পরিবর্তন হলেও তারা ফুড প্লেট প্রত্যাখ্যান করতে পারে। পছন্দ গড়ে তোলার জন্য শিশুটিকে প্রথম 6 মাসে এক বা দু রকমের খাবারের স্বাদ এবং পরবর্তী পর্যায়ে 14 বা তার বেশি প্রকারের স্বাদ দিতে হবে। এই কারণেই বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাদ এবং পছন্দগুলি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেসব বিষয় শিশুর স্বাদবোধ গড়ে তোলে
শিশুর স্বাদ বোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে এমন কয়েকটি বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো:
- একই খাবার বারবার খাওয়ার মাধ্যমে শিশুরা তাদের স্বাদবোধ গড়ে তোলে। তারা এমন খাবার পছন্দ করে, যার স্বাদ তাদের কাছে পরিচিত, বিশেষ করে যদি তা খাওয়ার পরে তাদের ভাল লাগে।
- শিশুদের পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রতি রুচি গড়ে তুলতে পারে।
- গন্ধ, চেহারা এবং উপলব্ধিও স্বাদবোধ গঠনে অবদান রাখে। গল্প, গান ও আর্টের সাহায্যে স্বাস্থ্যকর খাবারকে কেন্দ্র ইতিবাচক অভিজ্ঞতা গড়ে তোলাও শিশুর স্বাদবোধকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
- বাচ্চারা মজাদার ও দুঃসাহসিক কাজ পছন্দ করে এবং তাই, খাওয়ার সময়টিকে মজাদার করে তুললে আপনার সন্তানের নতুন খাবার খাওয়ার ইচ্ছে গড়ে উঠতে পারে।
- কিচেন, বাজার এবং ডিনার টেবিলে কী খাওয়া হবে বা কী কেনা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাচ্চাদের যুক্ত করা উচিত। একটা ভাল উদাহরণ হল কেনাকাটা করার সময় কার্টে তাদের পছন্দের জিনিসপত্র যোগ করতে বলা। এতে জিনিসপত্রের প্রতি তাদের মালিকানা বোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। যদিও সমস্ত বাচ্চারা কিচেনে সময় কাটাতে পছন্দ করে না, তবে কখনও কখনও এটি তাদের খাবার তৈরির প্রক্রিয়ার একটি অংশ করতে সাহায্য করে।
- খাবার প্রত্যাখ্যানের পেছনের কারণগুলো বুঝতে পারলে শিশুর স্বাদবোধও উন্নত করা যায়। শিশুরা নানা কারণে খাবার খেতে অস্বীকার করতে পারে। স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি নিয়ে বাবা-মায়ের উদ্বেগকে এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নীচে কিছু উপায় দেওয়া হল, যেগুলির সাহায্যে বাবা-মা অথবা পরিচর্যাকারীরা শিশুদের খাবার খেতে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে অবদান রেখে থাকেন:
- তারা হয়তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ধরে দুধ খাইয়ে যেতে থাকেন
- তারা কঠিন বা আধা-কঠিন খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে দেরি পারেন যেহেতু তারা শ্বাসকষ্টের বিপদ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন
- খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্যহীনতা এড়ানোর জন্য তারা জোরপূর্বক কিছু খাবার খাওয়াতে পারেন
- মা-বাবা বা পরিচর্যাকারীরা জোর করে কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন
আপনার শিশুর খাবার ও স্বাদের প্রতি তাদের নিজস্ব পছন্দ উন্নতি করুন
এই সুপারিশগুলি অনুসরণ করে শিশুদের মধ্যে স্বাদ এবং খাবারের প্রতি তাদের পছন্দ উন্নত করা যেতে পারে।
- পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবারের সংস্পর্শে আসা এবং সংস্পর্শ বৃদ্ধি করা
- বাচ্চারা হয়ত শুরুতে নতুন খাবার পছন্দ নাও করতে পারে, কিন্তু চেষ্টা করতে থাকলে তারা হয়ত তাদের পছন্দমাফিক স্বাদ গড়ে তুলতে পারে। তবে বাবা-মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে যেন সন্তান যেন কষ্ট না পায়।
- মা-বাবাকে খাবারের পরিমাণের ওপর নয়, বরং খাওয়ার অভিজ্ঞতার ওপর মনোযোগ দিতে হবে।
- নিয়মিত বাড়িতে তৈরি বা হোমমেড খাবার খেতে দিন।
- আপনার সন্তানকে খাবার খেতে উৎসাহিত করা উচিত।
- আপনার সন্তানকে যে খাবার খাওয়াতে চান, তা আপনার নিজেরও খাওয়া উচিত।
- শিশুকে জোর করে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
- তাদের পছন্দের খাবারের সঙ্গে অপছন্দ করা খাবারকেও প্লেটে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার সন্তান বেছেবুছে খাবার খায় বলে দাগিয়ে দেবেন না, কারণ এটি তাদের জেদি করে তুলতে পারে।
- আপনার শিশুকে একই ধরনের খাবার থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিন এবং সিদ্ধান্তগুলিতে তাদের জড়িত করার চেষ্টা করুন।
- খাবারের বিকল্প সন্ধান করা এড়িয়ে চলুন কারণ এর ফলে স্বাদের বিকাশ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
শিশুরা 18 মাস বয়স হওয়ার পরে বেছেবুছে খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখায়, যা তাদের শৈশবকাল কেটে যাওয়ার পরেও স্থায়ী হতে পারে। বেছেবুছে খাবার খাওয়ার অনেক রকমের ধরন রয়েছে এবং তাই, আপনার সন্তানের জন্য কী কাজ করে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এটাও মনে রাখবেন যে বাবা-মায়ের উদ্বেগ অনেক সময় বাচ্চার খাবার খেতে না চাওয়ার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং তাই আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় আপনাকে উদ্বেগমুক্ত থাকতে হবে। আপনি নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার শিশুকে তার বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ পুষ্টিমূল্য উপস্থিত থাকা খাবারের সাথে পরিচিত করছেন। এটি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি রুচি ও পছন্দের বিকাশে সহায়তা করতে এবং তার স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ ভিজিট করুন
আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.Ceregrow.in -এ ভিজিট করুন