আপনার বাচ্চাকে সঠিক পরিমাণে সমস্ত প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করতে হবে, যাতে সে সুস্থির ও স্বাস্থ্যকরভাবে বিকশিত হতে পারে। এবং এটি নিশ্চিত করতে হলে, সমস্ত প্রধান ফুড গ্রুপ থেকে খাবার খাওয়ানো অপরিহার্য। এছাড়াও অভিভাবক হিসাবে আপনাকে বুঝতে হবে কীভাবে প্রতিটি নিউট্রিয়েন্ট আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বা তার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে যেহেতু ছোট বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে বায়নাক্কা করে, তাই তারা গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্টের অভাব বোধ করতে পারে, যা কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই আপনার উদ্বেগের মীমাংসা করার উদ্দেশ্যে, এই নিবন্ধটিতে সাধারণ পুষ্টিজনিত ঘাটতি এবং কীভাবে আপনি সেগুলি পূরণ করতে পারেন, সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

কেন আপনার সন্তানের খাদ্যে নিউট্রিয়েন্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ?

আপনার সন্তানের জ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য বাড়াতে এবং আগামী দিনে দীর্ঘস্থায়ী রোগের সূত্রপাত প্রতিরোধ করতে সুষম নিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ অপরিহার্য। শিশুদের বাড়ন্ত বছরগুলিতে দেখা যায় এমন সবচেয়ে সাধারণ নিউট্রিয়েন্ট-জনিত ঘাটতির মধ্যে আয়রন ও ভিটামিন D-এর ঘাটতি পড়ে। নিউট্রিয়েন্টের চাহিদা পূরণ না হলে অন্যান্য ঘাটতির মধ্যে আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A এবং ভিটামিন C-এর ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘায়িত ঘাটতি আপনার সন্তানের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত এবং তার সামগ্রিক বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটকে বোঝায়। কার্বোহাইড্রেট প্রধানত হোল গ্রেইন সিরিয়াল, গম-ভাঙানি ময়দার চাপাটি, চাল, হোল গ্রেইন রুটি, গম-ভাঙানি ময়দার পাস্তা ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট, ডাল ও কলাই, মুরগির মাংস, ডিম ও মাছ প্রোটিনের প্রধান উৎস। বাদাম, বীজ, পিনাট বাটার এবং ঘি থেকে প্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও অপরিহার্য। রঙিন ফল এবং শাকসবজি ভিটামিন এবং মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস। যদিও প্রোটিন, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটগুলি আপনার বাচ্চাদের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ, তবে বাবা-মায়েরা নির্দিষ্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি যোগ করতে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখান।

সাধারণ নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি

শিশুদের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ, যা প্রায়শই সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি খাওয়ার উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে ঘটে থাকে। কয়েকটি ঘাটতি নিচে উল্লেখ করা হল:

  • আয়রন: বিরক্তি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, অস্বাভাবিক খাবারের আকাঙ্ক্ষা, কম খিদে, ক্লান্তি, জিভে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং মাথা ঘোরা এগুলি সবই আপনার সন্তানের আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ। এই সমস্যা বাড়ার সাথে সাথে, আপনার সন্তানের চোখের সাদা অংশ ফ্যাকাশে হয়ে যেতে বা নীলচে দাগ পড়তে পারে। ভঙ্গুর নখ এবং ফ্যাকাশে ত্বকের রং প্রদর্শিত হওয়ার উপযোগী অন্যান্য লক্ষণ। আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য উৎস যেমন মুরগি, মাছ, অন্যান্য মাংস, ডাল, রাজমা, ছানা, সয়াবিন, এপ্রিকট, ডিম, কিশমিশ, আলুবোখরা, পালং শাক, সরিষা পাতা, শালগম শাক, মেথি ও বাথুয়া খেলে এই অভাব দূর করতে পারে।
  • ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D: আপনার সন্তানের হাড় এবং পেশীতে ঘন ঘন ব্যথা এবং দুর্বলতা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D এর অভাবের কারণে হতে পারে। দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট যেমন পনির, দই এবং চিজ, সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক, মেথি ও সরিষা পাতা, রাগি, ফ্ল্যাক্স সিড, তাজা ও শুকনো মাছ, ডাল, বাদাম ও অয়েল সিড ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রোধ করতে পারে। ভিটামিন D-এর উৎস প্রধানত ডিম এবং তৈলাক্ত মাছ যেমন রাওয়া, ইলিশ এবং অহি।
  • ভিটামিন C: ভিটামিন C-এর অভাবে খিটখিটে ভাব, খিদে চলে যাওয়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া ও রক্ত পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সাইট্রাস ফল যেমন তাজা আমলা, কমলালেবু, লেবু, পেয়ারা এবং কলা ভিটামিন C এর অভাব এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  • ভিটামিন A: শুষ্ক ত্বক এবং ঠোঁট, পুরু জিভ এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের সংক্রমণ সাধারণত ভিটামিন A-এর অভাব নির্দেশ করে। সবুজ শাক-সবজি যেমন মেথি, পালং শাক, বাথুয়া ও সর্ষে পাতার পাশাপাশি গাজর, টমেটো, রাঙা আলু, পেঁপে এবং আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A রয়েছে।
  • আয়োডিন: আয়োডিনের অভাবের লক্ষণগুলির মধ্যে পড়ে ক্লান্তি, পেশীতে দুর্বলতা, উষ্ণ দিনে ঠান্ডার অনুভূতি এবং কারণ ছাড়াই ওজন বৃদ্ধি। আয়োডিনের অভাব এড়াতে, আপনার সন্তানের দুধ ও মিল্ক প্রোডাক্ট যেমন দই, পনির, চিজ ও স্কিমড মিল্ক প্রোডাক্ট, ডাল যেমন অড়হর, মসুর ডাল, উরদ চানা ডাল এবং মুগ, আমন্ড ও আখরোটের মতো বাদাম এবং ফ্ল্যাক্স সিড ও মেলন সিডের মতো অয়েল সিড খাওয়া উচিত।
  • জিঙ্ক: জিঙ্কের ঘাটতিতে আক্রান্ত শিশুদের বৃদ্ধি সুষমভাবে ঘটে না এবং তারা ঘন-ঘন সংক্রমণে ভোগে। বিনস, আমন্ড, আখরোট ও পেস্তার মতো বাদাম, মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়ার মতো সামুদ্রিক খাবার এবং গম ও ব্রাউন রাইসের মতো হোল গ্রেইনের নিয়মিত ব্যবহার শিশুদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি রোধ করতে পারে।

সর্বোপরি, প্রয়োজনীয় পরিমাণে সমস্ত ম্যাক্রো এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট উপস্থিত থাকা সুষম খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে নিউট্রিশনের অভাবজনিত ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান

আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in-এ ভিজিট করুন