ছোট বাচ্চার পক্ষে মিষ্টি এবং চকলেটের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের জন্য আদর্শ পরিমাণের থেকে বেশি খাওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। এবং যেহেতু ব্রেস্ট মিল্ক মিষ্টি প্রকৃতির হয়, ফলে তারা ক্যান্ডি এবং চিনিযুক্ত খাবারগুলি দেখে সহজেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মিষ্টি সাধারণত আপনার সন্তানের দেহের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়, কারণ এগুলি কোনও প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে না। যদিও কিছু লবণাক্ত, তিক্ত বা তৈলাক্ত স্বাদ গড়ে তোলার আগে শিশুদের মধ্যে মিষ্টির স্বাদ উপভোগ করার প্রবণতা গড়ে ওঠে।
এই কারণে শিশুর জীবনের প্রথম দিকে বিভিন্ন ফ্লেভারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সে মিষ্টির প্রতি বেশি আসক্ত না হয়ে পড়ে। এটি আপনার সন্তানকে সব ধরনের স্বাদ পছন্দ করতে এবং গ্রহণ করতে সাহায্য করবে এবং একটিকে অন্যটির উপর প্রাধান্য দিতে দেবে না। চিনি ও মিষ্টি শুধু বাচ্চাদের জন্য নয়, বরং বড়দের জন্যও নেশায় পরিণত হয়ে উঠতে পারে। তাই, আপনার সন্তানের মধ্যে মিষ্টির প্রতি তীব্র আকাঙ্খা রয়েছে কিনা, তা আপনাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
আপনার সন্তানের ডায়েটে প্রচুর শর্করাযুক্ত খাবারগুলি নিম্নলিখিত সমস্যার কারণ হতে পারে:
- দাঁত বা মাড়ির ক্ষয়
- অতিরিক্ত ওজন বা শৈশবকালীন স্থূলতা
- চিনির প্রতি আসক্তি, যার কারণে তারা বদমেজাজী হতে পারে এবং অন্যান্য ফুড আইটেম সম্পর্কে খুঁতখুঁতে আচরণ করতে পারে
- অতিসক্রিয়তা, যেমনটা কিছু গবেষণা নির্দেশ করে
শিশুর তরফে শর্করা গ্রহণের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু টিপস:
- যেকোনও সুনির্দিষ্ট দিনে, প্রধান ফুড গ্রুপের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মিল প্ল্যান করুন এবং আপনার সন্তানকে শর্করার কু-প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষিত করুন। সে যেন হোল গ্রেইন, প্রোটিন, সবজি ও ফল এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেন সঠিক পরিমাণে খায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- বাড়িতে চকোলেট, টফি, বেকড আইটেম সঞ্চয় করে রাখায় হ্রাস টানুন। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলে কেনাকাটা করা যেতে পারে, কেন না তা না করলে আপনার সন্তান নিজেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত মনে করতে পারে। যখন এই খাবারগুলি আপনার সন্তানের জন্য নিয়মিত অ্যাক্সেসযোগ্য হয় না, সে আর এগুলির উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে পারবে না।
- চকোলেট, টফি, কেক ও পেস্ট্রির বদলে মিষ্টি স্বাদের অথচ স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন টাটকা ফল, ড্রাই ফ্রুট যেমন কিশমিশ, খেজুর, অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি খেতে দিন। এই জাতীয় বিকল্পগুলি ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে ভরপুর।
- যেহেতু হাইড্রেশন সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই আপনি নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের কার্বোনেটেড বা মিষ্টি পানীয় বা সোডা খেতে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। বরং আপনার সন্তানকে টাটকা ফ্রুট বা ভেজিটেবল জুস, স্মুদি, মিল্কশেক, সাধারণ জল ইত্যাদি খেতে দিন। তবে মনে রাখবেন, গোটা ফলে জুসের চেয়ে বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকে। যদি আপনার সন্তান সাধারণ জল পান করতে খুব বেশি আগ্রহী না হয়, তাহলে স্বাদ আকর্ষণীয় করার জন্য কয়েকটি লেবু বা কমলালেবুর স্লাইস বা পুদিনা পাতা যোগ করুন। ডাবের জল প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রেশনের আরেকটি বড় উৎস এবং এটি খেতেও হালকা মিষ্টি লাগে। চিনি ছাড়া লস্যি আরেকটি চমৎকার বিকল্প। আপনি হাইড্রেশন বাড়াতে এবং চিনিকে দূরে রাখতে এছাড়াও খাবারের সময় বা স্ন্যাক্স হিসাবে স্যুপও পরিবেশন করতে পারেন।
- সন্তানকে মাঝে মাঝে তার পছন্দের মিষ্টি ট্রিট হিসাবে খেতে দিন। সেই মিষ্টিকে নানাভাবে আরও স্বাস্থ্যকর বানিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। যেমন, আইসক্রিমে কুচি করা টাটকা ফল ছড়িয়ে দিন। যদি কম চিনি দেওয়া ক্ষীর বা পায়েস তৈরি করে থাকেন, তাহলে মিষ্টির জন্য ড্রাই ফ্রুট ছিটিয়ে দিন।
- বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খান। খাবারের ক্ষেত্রে আপনার শিশুরএক্স পছন্দগুলি মূলত নির্ভর করে আপনি কি খাচ্ছেন তার উপর। তাই আপনি মিষ্টি বাদ দিয়ে যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাহলে আপনার সন্তানও একই কাজ করবে বলে মনে করা হয়।
তাহলে যা যা জানলেন, তা হল- মাঝারি পরিমাণে বা মাঝে মাঝে মিষ্টি খেলে আপনার সন্তানের কোনও ক্ষতি হবে না। তবে চিনি মানেই অস্বাস্থ্যকর ক্যালরি আর শূন্য নিউট্রিশন ভ্যালু। অতিরিক্ত চিনি খেলে ভবিষ্যতে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই, উপরে যেমনটা আলোচনা করা হয়েছে, সেইভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার অভ্যাসগুলোকে ছোটবেলা থেকেই উৎসাহিত করা দরকার।