স্বাভাবিক বা সুস্থ অবস্থায় মানবদেহের একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা থাকে যা তাকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সাহায্য করে। শরীর যখন কোনও সংক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে বা কোনও অসুস্থতা দেখা দেয়, তখন এই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। প্রমিত সংজ্ঞা অনুসারে, জ্বরকে 100.4°F (38°C) বা এর বেশি তাপমাত্রা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা রেক্টাল থার্মোমিটার দিয়ে পরিমাপ করা হয়। সন্তানদের জ্বর হলে মায়েদের দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। ঘরোয়া উপায়েই কি এই সমস্যার সমাধান করা উচিত, নাকি সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত? আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে, কেন জ্বর হয় এবং এর সমাধানের জন্য আপনি কী কী করতে পারেন, সে সম্পর্কে জেনে নিন।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ে আরও কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক

আপনার শিশুর দেহের তাপমাত্রা তার মস্তিষ্ক, ত্বক, পেশী এবং রক্তনালী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আপনার শিশুর দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন কেবলই অসুস্থতা বা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া, যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ জ্বর একাধিক রোগের লক্ষণ।

দেহ এইসব উপায়ে তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া জানায়:

  • ঘামের উৎপাদন বৃদ্ধি বা হ্রাস করার মাধ্যমে, যার ফলে হয় দেহ থেকে জল বেরিয়ে যায় বা জল জমাট বাধে
  • রক্ত ত্বকের পৃষ্ঠতলের কাছাকাছি চলে যাওয়া বা দূরে সরে যাওয়ার মাধ্যমে
  • ঠান্ডা বা উষ্ণ পরিবেশের খোঁজ করার মাধ্যমে

আপনার শিশুর দেহের তাপমাত্রা নিম্নোক্ত কারণে বাড়তে পারে:

  • যখন কোনও নতুন রোগজীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা অন্য কোনও অণুজীব আপনার শিশুর দেহকে আক্রমণ করে, তখন সাইটোকাইন নামক নির্দিষ্ট রাসায়নিক এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় নির্গত হয়।
  • ম্যাক্রোফেজ নামক আরেক ধরনের কোষ এই আক্রমণাত্মক অণুজীবের বিরুদ্ধে লড়াই করার মাধ্যমে ধ্বংস করে।
  • আপনার শিশুর দেহ তারপর এই সংক্রামক অণুজীবগুলির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি তৈরি করার চেষ্টা করে, যাতে এগুলি আবার আক্রমণ করলে এগুলিকে চিনে রাখা বং ধ্বংস করা যায়।
  • ব্যাকটেরিয়া একটি আচ্ছাদন দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং ম্যাক্রোফেজের ক্রিয়ার কারণে এগুলির বিষাক্ত উপাদানগুলি উন্মুক্ত হয়, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

জ্বর হলে বাচ্চাকে কী ধরনের খাবার খাওয়াতে পারেন?

  • বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং টাটকা ফলের রস খাওয়ান, যাতে সে ভালভাবে হাইড্রেটেড থাকতে পারে।
  • ভালো করে রান্না করা, নরম, সহজে হজমযোগ্য খাবার সরবরাহ করুন, যা আপনার শিশু গিলতে পারে এবং কোনও অসুবিধা ছাড়াই খেতে পারে।
  • যেসব খাবার সহজপাচ্য, খুব বেশি তেলতেলে ও মশলাদার নয়, যেমন ওটস, ব্রেড টোস্ট, সেদ্ধ ও ম্যাশড আলু, অল্প পরিমাণে চর্বিহীন মাংস, নরম ব্রাউন রাইসের মতো হোল গ্রেন ফুড, নরম চাপাটি ইত্যাদি খেতে দিন।
  • ভেজিটেবল ও চিকেন স্যুপের মতো গরম স্যুপ দিন, যা শরীরকে পুষ্টিকর ও নমনীয় রাখতে পারে।
  • হার্বাল টি খাওয়ান, যা নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
  • মধুতে বেশ কিছু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় অল্প পরিমাণে মধুও খাওয়াতে পারেন।
  • রসালো ফল খাওয়ানো উচিত, কারণ এর দরুণ জ্বর হওয়াকালীন গলার ব্যথার সমস্যা উপশম হওয়া সম্ভব।

বাচ্চাদের জ্বরের মাত্রা কখন অত্যাধিক বেশি থাকে?

তবে উপরের ব্যবস্থাগুলি আপনার শিশুর জ্বর প্রতিরোধ করায় সাহায্য করলেও, তার কোনও উন্নতি হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে আপনার খেয়াল রাখা উচিত। এ ছাড়া জ্বরের সঙ্গে অন্য কোনও জটিলতা থাকলে বা জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে বা শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখা দিলে অবশ্যই শিশুর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকা 100.4°F-এর বেশি তাপমাত্রা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা বা অন্যান্য অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। তাই এইরকম ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনার শিশুর ডাক্তার জ্বরের সঠিক কারণ শনাক্ত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন, পাশাপাশি জ্বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।