ডিম, মুরগি ও মাছের মতো আমিষ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, তাই শিশুর সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলও উপস্থিত থাকে। এগুলো শক্তি দেয়, পেশী গঠন করে এবং তৎপরতা নিশ্চিত করে। কিন্তু, আপনি কি এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে আপনার সন্তান আমিষ খাবার খেতে অস্বীকার করে, ফলে তার গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্টের অভাব হতে পারে? আমিষ জাতীয় খাবারের স্বাস্থ্যকর বিকল্প কী, সে সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
সন্তানকে মাংস খাওয়ানোর উপায়
মাংস ও মুরগির মতো প্রাণীজ খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিংক, B ভিটামিন এবং প্রোটিন থাকে। সন্তানকে মাংস খাওয়ানোর কয়েকটি উপায় হল:
- মাংস শক্ত হয়, তাই কয়েকজন বাচ্চা মাংস খেতে অস্বীকার করে। মাংস ধীরে ধীরে রান্না করার চেষ্টা করুন যাতে প্রতিটি টুকরো সুন্দরভাবে নরম হয়। ছোট ছোট টুকরো করে পরিবেশন করুন।
- বার্গারের মধ্যে কুচনো মাংস, সসেজ এবং মিটবল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যদি স্বাদের কারণে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে অল্প পরিমাণে তাদের সেগুলি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এইভাবে খাওয়াতে থাকলে তারা একদিন না একদিন খাবারটা পছন্দ করে ফেলবে।
নিরামিষ খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ
আপনার সন্তান আমিষ খাবার খেতে না চাইলেও, সুপরিকল্পিত, সুষম ডায়েট আপনার সন্তানের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। জেনে নিন কী কী উপায়ে এগুলি নিশ্চিত হতে পারেন:
- আপনার শিশু যদি নিরামিষ খাবার পছন্দ করে, তাহলে কম পরিমাণে ঘনঘন খাবার ও স্ন্যাকস খাওয়ালে তা আপনার বাচ্চাকে সারাদিনের এনার্জির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে।
- আপনার শিশুর ডায়েটে এনার্জি ও প্রোটিনের জন্য বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কলাই, বাদাম, বীজের মতো প্রোটিনের উৎস শরীরের টিস্যু তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে সাহায্য করে।
- উদ্ভিজ্জ খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সাহায্য করে। এ জন্য পাতাযুক্ত সবুজ শাক-সবজির পাশাপাশি রঙবেরঙের শাক-সবজিও খেতে দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার সন্তান যেন খুব বেশি ফাইবার না খায়, কারণ এতে তার পেট ভরে যাবে এবং সে পর্যাপ্ত ক্যালোরি পাবে না। অতিরিক্ত ফাইবার শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন বা জিংক শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
- আয়রন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনার শিশুর দেহের সর্বত্র অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রেও আয়রন অপরিহার্য। কিন্তু উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রন প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের মত সহজে দেহ শোষণ করতে পারে না। তাই, আপনার সন্তান যাতে ভাল শোষণের জন্য উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খায় তা নিশ্চিত করুন। আয়রনসমৃদ্ধ শস্য, বিনস ও মটরশুঁটির সঙ্গে লেবুজাতীয় ফল, ব্রকোলি, টমেটো ও ফুলকপি খেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
- হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ব্রকোলি, রাঙা আলু এবং পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি হল ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যা আপনি তাদের খাওয়াতে পারেন। সয়া মিল্ক এবং অরেঞ্জ জুসে ক্যালসিয়াম থাকে।
- জিংক এমন একটি নিউট্রিয়েন্ট, যা মূলত মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন। আর সবচেয়ে ভালো উৎস হল মাংস, মাছ, পোলট্রি ও ইয়োগার্ট। তবে, নিরামিষ খাবার যেমন হোল গ্রেইন, গমের ভুসি, ব্রাউন রাইস, কলাই ও পালংশাকেও জিংক পাওয়া যায়। আপনি আপনার সন্তানের ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে আপনার সন্তানের কোন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন আছে কিনা।
- ফ্যাট মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে। নিরামিষভোজী এবং গুরুতর নিরামিষাশী ব্যক্তিরা ক্যানোলা অয়েল, ফ্ল্যাক্সসিড অয়েল এবং বাদাম থেকে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড পেতে পারে।
- মস্তিষ্ক ও দাঁতের বিকাশে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন D-র প্রয়োজন হয়। গরুর দুধ, মার্জারিন এবং সয়া মিল্কে এগুলি উপস্থিত থাকে। তবে ভিটামিন D-এর পরিমাণ সম্পর্কে জানতে প্রতিটি খাদ্যের নিউট্রিয়েন্ট লেবেল অবশ্যই পড়ুন।
- ভিটামিন B12 এমন একটি নিউট্রিয়েন্ট যা শুধুমাত্র প্রাণীজ খাবার যেমন ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারে পাওয়া যায়। তাই, যদি আপনার সন্তান এই দুটোর কোনোটাই না খায়, তাহলে তাকে সিরিয়াল, রুটি, সয়াবিন এবং রাইস ড্রিঙ্কের মতো ভিটামিন B12-এ সমৃদ্ধ খাবার দিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, নিরামিষ খাবার সুষম আহারে অবদান রাখতে পারে, যদি আপনার সন্তান বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল, বিনস, বাদাম এবং হোল গ্রেইন খায়। আপনার সন্তান যদি ভেগান বা গুরুতর নিরামিষাশী ডায়েট মেনে চলে, তাহলে একজন ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট এবং ক্যালোরি প্রয়োজন হতে পারে।