বাচ্চার বিকাশের সময়ে সে যে খাবারগুলি খায় সেগুলি যেহেতু মনঃসংযোগ, স্মৃতিশক্তি, চিন্তা-ভাবনা করা, শেখা এবং উপলব্ধির মতো নানারকম মানসিক কার্যকলাপের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই সেই সময়ে তার বিকাশে পুষ্টির ওপর যথেষ্ট জোর দেওয়া হয় না। গর্ভাবস্থা চলাকালীন এবং আপনার শিশুর পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই তার মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এবং এটিই নির্ধারণ করে যে বাকি জীবনে তার মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করতে চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুগুলির বৃদ্ধি হতে থাকে এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে থাকে এবং মাইলিন দ্বারা আবৃত হতে থাকে, যেগুলি একত্রে তার বৃদ্ধিকালীন চিন্তাশক্তি এবং অনুভবক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করে।

খাবার যেহেতু স্নায়ুতন্ত্র, শেখার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি, মনঃসংযোগের ক্ষমতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, মেজাজ, এবং একসঙ্গে অনেকগুলি কাজ বা প্ল্যান করার ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, তাই পুষ্টি এবং সামগ্রিক উন্নতি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জেনে রাখার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যে মস্তিষ্কের বিকাশ কোনোভাবেই পূর্বাবস্থায় ফেরানো যাবে না। শিশুটির বেড়ে ওঠার পরিবেশ এবং তার লালনপালনের পদ্ধতি এই বিকাশকে প্রভাবিত করে। স্তন্যদানও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনব করে কারণ এটি যে বাচ্চাকে শুধুমাত্র পুষ্টি প্রদান করে তাই নয়, মা-শিশুর মধ্যেকার বন্ধনকেও সুদৃঢ় করে।

একজন শিশুর মস্তিষ্ক কীভাবে বিকশিত হয়?

একটি শিশুর মস্তিষ্কের গড় আয়তন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের গড় আয়তনের এক-চতুর্থাংশ। এর প্রথম বছরেই, সে নিজের আয়তনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। 3 বছর বয়সে পৌঁছোতে পৌঁছোতে, একটি পূর্ণবয়স্ক মস্তিষ্কের প্রায় 80% পর্যন্ত সেটি বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এবং 5 বছরের মধ্যে, তার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে যায়। একটি শিশুর জন্মের সময়ে, স্নায়ুকোশ অর্থাৎ নিউরোনগুলো বিকশিত হয়েই থাকে কিন্তু নড়াচড়া করা, চিন্তা এবং কথা বলার জন্য শৈশবের প্রথম বছরগুলিতেই নিউরাল সংযোগগুলি হয়ে থাকে। এই পর্যায়ে প্রতি সেকেন্ডে দশ লক্ষ নিউরাল সংযোগ হয়ে থাকে যাকে সিন্যাপ্স-ও বলা হয়।

মস্তিষ্কের ভেতরে বিভিন্ন পৃথক স্থান রয়েছে যেগুলি পৃথক দক্ষতা যেমন নড়াচড়া করা, ভাষা এবং অনুভূতি ইত্যাদির জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করে। এই স্থানগুলি পৃথক হারে বিকশিত হতে থাকে। নিউরাল সংযোগগুলি জটিল ভাবে হওয়ার কারণে সেগুলি আপনার শিশুকে নড়াচড়া করা, কথা বলা এবং জটিল ভাবে চিন্তার জন্য ক্ষমতা প্রদান করে। অনুপ্রেরণা, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ, সমস্যা সমাধান, এবং যোগাযোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সংযোগগুলি তাদের দক্ষতার উন্নতিকে নির্দেশ করে যেগুলি হয় তার প্রথম বছরগুলিতেই তৈরি হয়ে যায় অথবা কখনোই তৈরি হয় না। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মস্তিষ্ক ও বিকশিত হয় এবং সেটি তার বাবা-মা এবং যত্নশীলদের ইতিবাচক সংযোগের উপর নির্ভর করে। তাদের অনুভূতিগুলি কতটা ভালোভাবে বিকশিত করবে সেটি তাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, যত্নের পরিমাণ ও গুণ, এবং তারা কতটা উদ্দীপনা এবং সংযোগ পাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে।

পুষ্টি এবং মস্তিষ্কের বিকাশ অথবা শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক কী?

পুষ্টি এবং জ্ঞান সম্বন্ধীয় কার্যকলাপ সরাসরি সম্পর্কিত। ডিএনএ-র সিন্থেসিস, নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের পরিবর্তন-এর ক্ষেত্রে পুষ্টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি মস্তিষ্কে পাওয়া বিভিন্ন উৎসেচকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অপুষ্টি আপনার শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুর সংখ্যাকে কমিয়ে দিতে পারে যা তার মস্তিষ্কের আকারের পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এটি তাদের শিক্ষার দক্ষতা এবং জ্ঞান সম্বন্ধীয় কার্যকলাপের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। কিছু বিশেষ নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যেগুলি বিশেষভাবে মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং সেগুলি তাদের খাদ্যের উৎসের সঙ্গে তালিকার মাধ্যমে নিম্নে দেওয়া হল:

  1. প্রোটিন: মাংস, পোল্ট্রি, সামুদ্রিক খাবার, বিন্স ও মটর, ডিম, সয়ার দ্রব্য, বাদাম ও বীজ, এবং সকল দুগ্ধজাত দ্রব্যগুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
  2. জিঙ্ক: ঝিনুক হল জিঙ্কের খুব ভাল উৎস, যদিও মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, এবং বাদামেও এটি থাকে।
  3. আয়রন: মাংস, বিন্স এবং মসুর ডাল, টাটকা সিরিয়াল এবং রুটি, ঘন পাতাযুক্ত শাকসবজি, এবং আলুর মধ্যে আয়রনের প্রাচুর্য রয়েছে।
  4. কোলিন: অনেক শাকসবজির সঙ্গে সঙ্গে মাংস, দুধ জাতীয় জিনিস, ডিম কোলিনের সমৃদ্ধ হয়।
  5. ফোলেট: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফোলেট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট এবং এটি চিকেনের লিভারে, টাটকা সিরিয়ালে, পাঁউরুটি এবং পালং শাকে পাওয়া যায়।
  6. আয়োডিন: সামুদ্রিক শৈবাল আয়ডিনের মূল উৎস হলেও আয়োডাইজড সল্ট, দুগ্ধজাত দ্রব্য, সামুদ্রিক খাবার, এবং টাটকা শস্যের মধ্যেও এই নিউট্রিয়েন্টি পাওয়া যায়।
  7. ভিটামিন এ: গাজর, পালং শাক, মিষ্টি আলুর মতো সবজিতে, এবং লিভারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
  8. ভিটামিন বি6: লিভার, অন্যান্য অঙ্গের মাংস, মাছ, স্টার্চযুক্ত সবজি যেমন আলু, এবং লেবুজাতীয় ফল ছাড়া অন্যান্য ফল ভিটামিন বি6-এর খুব ভাল উৎস।
  9. ভিটামিন বি12: মাংস, মাছ, ডিম এবং দুধ জাতীয় প্রাণীজ উপাদানগুলি হল ভিটামিন বি12-এর প্রাকৃতিক উৎস।
  10. ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: চর্বিযুক্ত মাছ, মাছের তেল এবং অন্যান্য টাটকা শাকসবজি হল ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাল উৎস।

নিরামিষাশী পরিবারদের ক্ষেত্রে তাদের শিশুদের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুদের খাবারে কিছু সাপ্লিমেন্ট যোগ করতে হবে।

সঠিক পুষ্টি প্রদানের পাশাপাশি, শিশুর সঙ্গে সম্পর্কও তার মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। যখন একটি বাচ্চা হাসছে কিংবা কাঁদছে, অথবা একটি শিশু তার পছন্দ এবং প্রয়োজনটি ব্যক্ত করছে, তাদেরকে উত্তর দেওয়ার জন্য দেখাশোনাকারীদের সেই সুযোগটি গ্রহণ করা উচিৎ। এটি শিশুটির মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করবে এবং তার জ্ঞান সম্পর্কিত কার্যকলাপে সাহায্য করবে। শিশুর জন্মের দিন থেকেই তার সঙ্গে কথা বলা, গান গাওয়া, পড়া এবং খেলা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুরক্ষা এবং নিশ্চয়তা প্রদানের সময়ে তাদের এই পরিবেশকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিতে হবে।

আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা ও গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান

আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্পগুলি সম্পর্কে আরও জানতে www.ceregrow.in-এ ভিজিট করুন