বাচ্চা এবং প্রাক-কিশোর, সকল শিশুই মিষ্টি জিনিস ভালোবাসে। যদিও, এর আধিক্য তাদের এম্পটি ক্যালোরি দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারে এবং স্থূলত্ব ও জুভেনাইল ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই কারণেই অনেক স্বাস্থ্য-সচেতন অভিভাবক বিকল্প কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন যাতে কম ক্যালোরি থাকবে এবং কম ক্ষতিকর হবে। যদিও, কম ক্যালোরিযুক্ত পানীয় ও খাবার কখনো কখনো শিশুদের বেশি সুগার সাবস্টিটিউট খাওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় যা তাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। এটিই আমাদের কৃত্রিম মিষ্টির প্রসঙ্গে নিয়ে আসে।
কৃত্রিম মিষ্টি কিংবা সুগার সাবস্টিটিউট হল এক ধরণের কেমিক্যাল যা মিষ্টি স্বাদ বা গন্ধ আনার জন্য খাবার অথবা পানীয়তে যোগ করা হয়। এগুলিতে শূন্য কিংবা অত্যন্ত কম ক্যালোরি থেকে, অর্থাৎ তারা পুষ্টিহীন মিষ্টি। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমাদের শরীর এগুলিকে ভেঙে ফেলতে পারে না এবং যার ফলে প্রদত্ত ক্যালোরির মান শূন্য। জ্যাম এবং জেলি, দই, পুডিং, কেক, পেস্ট্রি এবং বিভিন্ন ফলের কাপ হচ্ছে এমন কিছু জিনিস যেগুলির মধ্যে সুগার সাবস্টিটিউট রয়েছে।
কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা
এগুলি "তীব্র মিষ্টি" হিসেবে পরিচিত কারণ এগুলি খাবারে ব্যবহৃত চিনির তুলনায় হাজার গুণ মিষ্টি স্বাদবিশিষ্ট। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের মধ্যে কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়া একটি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জার্নাল অফ দ্য অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে 200 শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে 54 শতাংশ।
ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে-র তথ্যকে বিবেচনা করে 2009 থেকে 2012 সালের মধ্যে একটি "আন্তঃ-বিভাগীয় গবেষণা" থেকে এই তথ্যটি নেওয়া হয়েছে। 2 বছর কিংবা তার বেশি বয়সী মোট 17000 জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণাকারীরা দুই দিন ধরে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাড়িতে হোক কিংবা বাইরে এবং প্রধান আহারে কিংবা জলখাবারের সময়ে, কৃত্রিম মিষ্টি কতবার খাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। দেখা গেছে যে বাচ্চাদের দ্বারা প্রায় 25% এবং প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা প্রায় 41% কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়া হচ্ছে। এইসবের বাইরে, প্রায় 80 শতাংশ বাচ্চা এবং 56 শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন কৃত্রিম মিষ্টি খান।
বাচ্চাদের মধ্যে ক্যানজাত খাবার, স্বাদযুক্ত ওটমিল, সুগার-ফ্রি ক্যানজাত জুস এবং বার খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর ফলে ওজন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা গিয়েছে।
কৃত্রিম মিষ্টিতে স্যাকারিন, সুক্রালোজ, অ্যাস্পার্টেম এবং অন্যান্য জিনিস থাকে। এই সুগারের বিকল্পগুলি প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবারে থাকে, খোলা খাবারে থাকে না।
এই কৃত্রিম মিষ্টিগুলি কীভাবে শিশুদের আকৃষ্ট করে?
WHO এর মতানুযায়ী, একজন শিশুর জন্য প্রতিদিনের খাওয়া মিষ্টির পরিমাণ কোনোভাবেই 25 গ্রামের বেশি হওয়া উচিৎ নয় অর্থাৎ 6 চা-চামচ। এখন, আধুনিক অভিভাবকেরা কখনো কখনো চিন্তা করেম যে সুগার সাবস্টিটিউটগুলি বাচ্চার জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প হবে কি না। অ্যাস্পার্টেম, স্যাকারিন, নিওটেম, অ্যাসিসালফেম-কে এবং সুক্রালোজের মতো কিছু সুগার সাবস্টিটিউট র্যেছে যেগুলি জন্মের অস্বাভাবিকতা কিংবা ক্যানসারের কারণ হয় না এবং কোনোরকম আচরণগত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কেবল সামান্য পরিমাণ সুগার সাবস্টিটিউট প্রয়োজন, কারণ এগুলি চিনির থেকে শতগুণ বেশি মিষ্টি।
কম পরিমাণে খাওয়া হলে কৃত্রিম মিষ্টি বাচ্চাদের জন্য চিন্তার বিষয় নয়। কিন্তু অতিরিক্ত যে কোনো কিছুই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। সুগার সাবস্টিটিউট পূর্ণ আইসক্রিম কিংবা ফ্লেভারযুক্ত পানীয় দিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করা স্বাস্থ্যকর নয় এবং এম্পটি ক্যালোরি প্রদান করতে পারে।
কৃত্রিম মিষ্টি এবং রোগের মধ্যে সম্পর্ক।
এরকম কোনো গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে যে মানুষের মধ্যে মিষ্টি খাওয়া এবং ক্যানসারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে। এরকম কোনো প্রমান যেই যা সুগার সাবস্টিটিউট এবং অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD), জন্মের অস্বাভাবিকতা কিংবা লুপাসের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নির্দেশ করে।
যদিও, কিছু পরীক্ষা সুগার সাবস্টিটিউট খাওয়া এবং শিশুর খিদের অনুভূতি ও পছন্দের পরিবর্তনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য সম্পর্ককে নির্দেশ করে। এটি শেষপর্যন্ত বাচ্চার উচ্চতা এবং ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে। অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরার ওপর কৃত্রিম মিষ্টির প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে এবং এটা মনে করা হয় যে রক্তের শর্করার মাত্রার ওপর এটির প্রভাব রয়েছে যার ফলে বিপাকীয় উপসর্গ দেখা দেয়, ইনসুলিনের সংবেদনশীলতার হ্রাস ঘটে এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মতো রোগ হতে পারে।
2013 সালের একটি পরীক্ষা অনুযায়ী, মিষ্টি খাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মধ্যে একটি সম্পর্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই পরীক্ষাটি 3,700 জনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল, এবং সুগার সাবস্টিটিউট ও ওজনের মধ্যেকার সম্পর্ককে পরীক্ষা করা হয়েছিল। প্রায় 7-8 বছর ধরে তাদের ওজনকে অনুসরণ করা হয়েছিল।
ফলস্বরূপ দেখা গেছে যে যারা সুগার সাবস্টিটিউট খাননি তাদের তুলনায় যে সকল মানুষেরা সুগার সাবস্টিটিউট পানীয় খেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে শরীরের ওজনের সূচক (BMI) 47 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সর্বোপরি, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সীমিত পরিমাণে কৃত্রিম মিষ্টি খাওয়া নিরাপদ। যদিও, এটি বেশি খাওয়ার ফলে স্থূলত্ব, প্রাক-ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুস্থতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভালো খবর হচ্ছে যে কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে FSSAI-এর কঠোর নিয়মাবলী রয়েছে, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের থেকে মিষ্টি খাবার কিনছেন, পরিমিত পরিমাণে দিলে ততক্ষণ আপনার শিশুটির কোনোরকম ঝুঁকি নেই।
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান