মায়ের দুধ, শিশুর প্রথম স্বাদের খাবার, স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টি হয়। এমনকি 6 মাস পর থেকে যখন আপনি বাচ্চাকে পরিপূরকগুলি খাওয়ানো আরম্ভ করেন, তখন আপনার ছোট্টটি প্রাকৃতিক শর্করা বা খাঁটি ফলের সাথে মিশ্রিত খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারে। তাই খানিকটা বড় হবার সাথে সাথে আপনার ছোট্টটি যদি চকোলেট, কুকিজ, পেস্ট্রির জন্য বায়ন করে তা হলে অবাক হওয়ার মত সত্যিই কিছু নেই। পরিমিত মাত্রায় এই মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলি খেলে অবশ্য ওর স্বাস্থ্যের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না, তা বলে আপনাকে অসতর্ক হলে চলবে না।

আজকাল, মিষ্টি পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত মিষ্টিযুক্ত খাবারের সহজলভ্যতার কারণে শিশুদের মধ্যে মিষ্টিখাওয়ার প্রবণতাওনেক বেড়ে গেছে। ফলস্বরূপ, তাদের প্রায়ই পুষ্টিকর এবং প্রাকৃতিক খাবারের জন্য খিদে কম থাকে। যাইহোক, এনার্জি ছাড়াই শর্করা প্রধানত শুধু ক্যালোরি প্রদান করে। আসলে, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ভবিষ্যতে মোটা হবার সমূহ সম্ভাবনা সহ ডায়াবেটিস আশংকাও থাকে। সুতরাং, মিষ্টি আপনার সন্তানের খাদ্যের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে এবং কীভাবে আপনি এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তা বুঝতে এটি পড়ুন।

চিনির ধরণ

মিষ্টি দুই ধরণের হতে পারে - প্রাকৃতিক এবং মেশানো চিনি।

  1. ফল (ফ্রুক্টোজ), সবজি এবং দুগ্ধজাত খাবারে (ল্যাকটোজ) প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকে।
  2. মেশানো শর্করা হল সেই শর্করা এবং সিরাপ যা প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন মিষ্টি খাবার, সোডা ইত্যাদিতে মিশ্রতি করা হয়ে থাকে। মেশানো মিষ্টির মধ্যে প্রাকৃতিক শর্করা যেমন সাদা চিনি, বাদামী চিনি, মধু এবং উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

যদি আপনি প্রাকৃতিক চিনির সাথে মেশানো মিষ্টির তুলনা করেন, প্রাকৃতিক মিষ্টি সর্বদাই অনেক ভালো পছন্দের হবে।

শিশুদের জন্য মিষ্টি খাবারের সুপারিশ

ICMR -এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখানে শিশুদের জন্য মিষ্টির প্রস্তাবিত পরিবেশনপরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

  শিশু (6 - 12 মাস) 1 থেকে - 3 বছর 4 থেকে - 6 বছর 7 থেকে - 9 বছর 10 থেকে - 12 বছর 13 থেকে - 15 বছর 16 থেকে - 18 বছর
অংশের আকার (প্রতি অংশে 5 গ্রাম চিনি) 2 3 4 4 6 মেয়েদের জন্য 5টি ও ছেলেদের জন্য 4টি মেয়েদের জন্য 5টি ও ছেলেদের জন্য 6টি

আগে থেকেই থাকা মিষ্টি বনাম মেশানো মিষ্টি

টেবিল সুগার বলতে খালি চোখে দৃশ্যমান আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত সাদা বা বাদামি সুগারকে বোঝায়। প্রক্রিয়াকরণ করার সময় খাবারে যে সব ধরনের চিনি বা মিষ্টি মেশানো হয়, তাকে 'হিডেন সুগার' বলা হয়। যেহেতু লুকানো চিনি সনাক্ত করা কঠিন, তাই আপনার শিশু কিন্তু আপনার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি চিনি খেয়ে ফেলতে পারে।

খাবারে আড়ালে মিশে থাকা শর্করা শনাক্ত করা

লুকানো চিনির উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। তাই সর্বদা কিছু কেনার আগে প্যাকেটের উপর থাকা পুষ্টির লেবেল দেখে নিন। এতে মোট প্রাকৃতিক মিষ্টি এবং মেশানো চিনি উপস্থিত (গ্রাম হিসাবে) পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকে। এক বারের পরিবেশনায়। পুষ্টির লেবেল সর্বদা উপাদানগুলিকে সাজানো ক্রমে তালিকাভুক্ত করে। অতএব, চিনিকে প্রথম কয়েকটি উপাদানে তালিকাভুক্ত করা হলে, খাবারটি অতিরিক্ত মিষ্টি বলে বিবেচিত হতে পারে। মিষ্টি -কে একাধিক নামে জানা যায়, তাই মিষ্টি -কে চিহ্নিত করাও বিভ্রান্তিকর। তাই সাধারণত, '-ose' দিয়ে শেষ হওয়া নামগুলি দেখলে মেশানো মিষ্টি বা শর্করা বোঝায় যেমন ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, মল্টোজ এবং ডেক্সট্রোজ। আরও কিছু মেসানো মিষ্টি বা শর্করা হল আখ থেকে তৈরী চিনি ও সিরাপ, কর্ন সুইটনার, উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ, মধু, মল্ট, গুড় ইত্যাদি।

শিশুর উপর চিনির ক্ষতিকর প্রভাব

অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এইভাবে খেলে আপনার বাচ্চা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সুযোগ হারাবে। শিশুদের মধ্যে চিনির কিছু উপকারী প্রভাব হল:

  1. মিষ্টি খাবার থেকে খালি ক্যালরি পাঅয়া যায় ফলে শরীর মোটা হয়ে যায়।
  2. শর্করা জাতীয় খাবার ট্রাইগ্লিসারাইড (রক্তে এক ধরনের চর্বি) -এর স্তর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, হৃদরোগের পথ প্রশস্ত করে।
  3. শর্করা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে এবং এই জাতীয় খাবার নিয়মিত চিবিয়ে খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
  4. মিষ্টি এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয় গ্রহণের ফলে শিশুদের মধ্যে অনিদ্রাভাব দেখা দিতে পারে।

শিশুদের মধ্যে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

আপনি কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় ব্যবহার করে আপনার শিশুর খাদ্যে মিষ্টির পরিমাণ কমাতে পারেন।

  1. কার্বোনেটেড পানীয়ের পরিবর্তে জল, দুধ, তাজা ফলের রস লস্যি, শিশুকে খাওয়ান।
  2. একটি সম্পূর্ণ ফল সর্বদা ফলের রসের চেয়ে ভাল হয় কারণ সম্পূর্ণ ফলে বেশি মাত্রায় ফাইবার থাকে। অধিকন্তু, দোকান থেকে কেনা ফলের রসে চিনি মেশানো থাকতে পারে।
  3. চিনি জাতীয় শস্যের পরিবর্তে কম চিনি বা মিষ্টিহীন জাতীয় শস্য দিন। তার বদলে স্বাদের জন্য ফ্রেশ ফ্রুটস বা ড্রাই ফ্রুটস যোগ করুন । সিরাপ, জ্যাম, জেলি এবং সংরক্ষণগুলিও কম চিনির পর্যায় পড়ে।
  4. কেক, পাই, আইসক্রিম ইত্যাদি ডিচ ডেসার্ট। আর শিশুকে টাটকা ফল খেতে উৎসাহিত করুন।
  5. আপনি যদি টিনজাত ফল কেনেন তবে নিশ্চিত করুন যে সেগুলি জল বা রসে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সিরাপ নয়।
  6. আপনার শিশুকে ক্যান্ডি, পেস্ট্রি ওকুকিজের বদলে শাকসব্জি, বিভিন্ন ফল, কম চর্বিযুক্ত পনির, গোটা শস্যের ক্র্যাকার এবং ঘরে পাতা দই খেতে উৎসাহিত করুন।
  7. আপনার শিশুটি যদি চিনি খেতে পছন্দ করে তাহলে তাকে প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত খাবার যেমন কিসমিস বা ফল ক্ষেত্রে দিন।
  8. নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু আরও ঘরে তৈরি খাবার খাচ্ছে, যেমন ঘরে তৈরি ফলের স্মুদি, পিনাট বাটার দিয়ে আপেলের টুকরো, ঘরে তৈরি গ্রানোলা, ক্ষীর বাকম মিষ্টির পায়েস ইত্যাদি।
  9. আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস হ'ল াপনাকে নিজেই এক সুন্দর স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলতে হবে, যাতে আপনার বাচ্চারা আপনাকে দেখে শেখে।

যদিও মাঝে মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে, তবে এটি যেন আপনার সন্তানের জন্য অভ্যাসে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনার বাচ্চাকে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার কুপ্রভাবগুলি বোঝান এবং আপনি নিশ্চিতভাবে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি মজুত রাখবেন।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান