কে না ফাস্টফুড খেতে ভালবাসে? আমাদের মধ্যে অনেকেই। ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড ব্যস্ত জীবন যাপনের সুবিধা নিশ্চিত করে; এগুলি খেতে চমৎকারভাবে সুস্বাদু এবং আপনার বাচ্চারা আরও খেতে চায়। এবং হ্যাঁ, এগুলিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অতিরিক্ত নুন এবং অ্যাডেড সুগার মেশানো থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারটেনশন ইত্যাদির মতো জীবনযাত্রা সম্পর্কিত রোগের আধিক্য সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আপনার সন্তানকে পিৎজা, বার্গার বা পেস্ট্রি সবসময় সহজে খেতে বারণ করা সম্ভব হয় না। তাই এই রকম সময়ের জন্য রইল কিছু টিপস যা ফাস্টফুডকে হালকা ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। এ ভাবে দু'পক্ষেরই জেতা সম্ভব। এই চমৎকার আইডিয়াগুলি সম্পর্কে জানা যাক।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন

  1. কম পরিমাণ তেল/বাটার দিয়ে বা এগুলি একেবারে না দিয়েই ভাজা দোসা অর্ডার করুন। দোসার সাথে ভাজা আলুর সব্জি খাওয়া এড়িয়ে চলুন, তার বদলে বেছে নিন মিক্স ভেজিটেবল কারি ও চাটনি।
  2. মশলা বাটার দোসা এড়িয়ে চলুন এবং কম পরিমাণ তেল/বাটার দিয়ে বা এগুলি একেবারে না দিয়েই ভাজা প্লেইন দোসা, স্প্রিং দোসা, রাগি দোসা, মিক্সড সিরিয়াল দোসা, বা পালক দোসা খেতে পারেন।
  3. গমের আটায় তৈরি সাধারণ পরোটা, গোবি পরোটা বা আজওয়াইন পরোটা বেছে নিন, তবে আলু বা পনির পরোটা এড়িয়ে চলুন। মাখন বা বাটারের বদলে ফ্রেশ দই অর্ডার করুন। আপনার সন্তানকে খাবারের সঙ্গে পেঁয়াজ, শসা, টমেটো বা তাজা মেথি পাতার মতো কিছু পরিমাণ সবজি খেতে উৎসাহিত করুন।

পোর্শন সাইজ কম করুন

  1. গমের আটা দিয়ে তৈরি বার্গার বেছে নিন এবং ওভারসাইজড বার্গার বা স্যান্ডউইচের বদলে বেছে নিন ছোট বা রেগুলার সাইজের বার্গার। খুব কম পরিমাণ চিজ/মেয়োনিজ দিয়ে ভেজিটেবিল টপিং সাজান।
  2. বাচ্চাদের খেতে দিন মিনি দোসা বা এক পিস পরোটা এবং তার সঙ্গে স্যালাড, দই বা বাটারমিল্ক।

ডিপ ফ্রায়েডের পরিবর্তে গ্রিলড সাইড ডিশ বেছে নিন

  1. ডিপ ফ্রায়েড কাবাব বা ক্রিস্পি চিকেন স্যান্ডউইচ খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন। এর বদলে বেছে নিন গ্রিলড চিকেন ব্রেস্ট বা লো ফ্যাট ফিশ সাইড এবং স্যান্ডউইচ।
  2. রোস্টেড মিটও ভাল বিকল্প।
  3. ডিপ ফ্রাই না করে এয়ার-ফ্রায়েড পকোড়া খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

খাবারে নুন

সমস্ত খাবারেই কমবেশি নুন দেওয়া থাকে, তবে খাবারে অতিরিক্ত নুন যোগ করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে। প্রতিদিন 5 গ্রামের কম নুন খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপ কমে এবং হৃদরোগ, করোনারি অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। তাই আপনার এবং আপনার শিশুর খাবারে নুনের পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

কার্বোনেটেড এবং অন্যান্য পানীয় খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

  1. কার্বোনেটেড বেভারেজ এবং আইসড টি-তে প্রচুর পরিমাণে চিনি/মিষ্টি দেওয়া থাকে, যার কারণে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ে। তার বদলে ন্যূনতম মিষ্টি দেওয়া বা একেবারেই মিষ্টি দেওয়া নেই এমন ফ্রেশ লাইম সোডা বেছে নিতে পারেন। ডাবের জল বা মিষ্টিহীন লস্যিও বুদ্ধিমান বিকল্প।
  2. কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কের বদলে, অ্যাডেড সুগারহীন ফ্রুট মিল্ক শেক বা রাগী মল্টও বেছে নিতে পারেন।

শেয়ার করা মানেই যত্ন নেওয়া

আপনার সন্তান যদি ফাস্টফুড খেতে আগ্রহী হয়, তাহলে তাকে পরিবারের কোনও সদস্য বা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করে খেতে উৎসাহিত করুন। এভাবে সে সামাজিক দক্ষতা শিখবে এবং পরিমিত খাবার খাবে।

বাড়িতে তৈরি স্ন্যাক্স প্যাক করুন

আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে সাথে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, তাহলে স্বাস্থ্যকর, বাড়িতে তৈরি স্ন্যাক্স যেমন হোল-হুইট স্যান্ডউইচ, প্লেইন হোল-গ্রেন ক্র্যাকার্স, বাদাম, ড্রাই ফ্রুট, গোটা ফল ইত্যাদি প্যাক করার চেষ্টা করুন। এভাবে আপনি তাকে অনেক বেশি ফাস্টফুড খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।

এমন খাবার বেছে নিন, যাতে ফ্যাট কম এবং প্রোটিন ও ফাইবার বেশি পরিমাণে থাকে

  1. প্রচুর সবজি দিয়ে তৈরি স্যালাড খেতে দিন, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার ও নিউট্রিয়েন্ট খাওয়া যায়।
  2. হানি ছাড়া ফ্রুট বোল খেতে দিন।
  3. স্যালাডে সামান্য পরিমাণ দই সহ ব্ল্যাক বা হোল গ্রেইন যোগ করুন।
  4. টপিং হিসেবে ড্রাই ফ্রুটস বেছে নিন।
  5. অন্য ডেজার্টের বদলে ফ্রুট কাস্টার্ড খেতে দিন।
  6. ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-এর বদলে বেকড সুইট পটেটো বেছে নেওয়া উচিত। রাঙা আলু বা সুইট পটেটোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ভিটামিন A থাকে এবং কম ক্যালোরি থাকে।
  7. এছাড়া গ্রাউন্ডনাট চিক্কিও স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সের বিকল্প।
  8. স্ন্যাক্স হিসাবে পপকর্ন একটি ভাল বিকল্প হতে পারে, কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে হোল গ্রেইন দিয়ে তৈরি।

ক্যান ও প্যাকেটজাত খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে নজর রাখুন

  1. ক্যান ও প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে তার উপর থাকা নিউট্রিয়েন্ট লেবেলটি পড়ে নিন।
  2. উচ্চ ক্যালোরি ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন।
  3. ফ্রেশ ফ্রুট জুস, ফ্লেভারড ওয়াটার বা ফ্রেশ লাইম সোডা চিনি ছাড়া সামান্য নুন মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন।
  4. ফুড পয়জনিং থেকে বাঁচতে প্যাকেটজাত খাবারে এক্সপায়ারি ডেট বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ও ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট বা উৎপাদনের তারিখ চেক করুন।

সব মিলিয়ে ফাস্টফুডকে স্বাস্থ্যকর করে তোলা সম্ভব, যদি আপনি খেতে দেওয়া অংশের সাইজ, উপাদান ও সংযোজন সম্পর্কে একটু সতর্ক থাকেন। নিজে সতর্ক হওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার হাঁটাচলা শুরু করা সন্তান অথবা কৈশোরে পা দিতে চলা সন্তানের মধ্যেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।