জল জীবনের সমার্থক এবং পর্যাপ্ত হাইড্রেশন ছাড়া আপনার সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, টিস্যু এবং কোষগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আর আপনি ইতিমধ্যে জানেন যে, বাচ্চারা বাইরে খেলার সময় বা গরমের কারণে বা প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে জল হারাতে থাকে। তাই, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে সে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করে, যাতে তার পরিপাকতন্ত্র মসৃণভাবে কাজ করতে পারে এবং তার শরীরের সমস্ত বিষাক্ত বর্জ্য সহজেই বের হয়ে যেতে পারে।
সাধারণ জল ছাড়াও, দুধ, নারকেলের জল এবং স্যুপের মতো স্বাস্থ্যকর এবং সতেজ পানীয়গুলিও ভালভাবে তৃষ্ণা মেটাতে পারে এবং আপনার বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল সরবরাহ করতে পারে। তাই এই নিবন্ধটিতে আপনার জন্য বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর পানীয়ের রেসিপি সম্পর্কে জানানো হল, যেগুলি প্রস্তুত করা সহজ। মনে রাখবেন, যতটা সম্ভব তাকে এয়ারেটেড বা মিষ্টি পানীয় থেকে দূরে রাখতে হবে, কারণ এগুলো সাধারণত অস্বাস্থ্যকর ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই দেয় না।
সেরা স্বাস্থ্যকর ড্রিঙ্ক বা পানীয়, যেগুলি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া আবশ্যক
1. জল ─ সাধারণ বা প্রাকৃতিকভাবে স্বাদযুক্ত
জল নিজেই কোনো প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট থেকে বঞ্চিত। যদিও এটি ইলেকট্রোলাইটের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। জল আপনার শিশুকে খাবার হজম করতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং রক্ত সঞ্চালনের জন্য আবশ্যক। এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে বর্জ্য ও টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
শিশুদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য সাধারণ পানীয় জলের মতো দারুণ আর কিছু নেই। যদি আপনার শিশু অসুস্থ বোধ করে, আপনি ফুটনো ও ঠান্ডা জল সরবরাহ করতে পারেন, যাতে ব্যাকটেরিয়া সহ সমস্ত জীবাণু মারা যায়।
যদি আপনার বাচ্চার জন্য সাধারণ পানীয় জল বিরক্তিকর হয়, তাহলে আপনি এটিকে জিরে বা আজওয়াইন দিয়ে ফ্লেভারযুক্ত করতে পারেন, যা একটি শীতল প্রভাব দেয়। গরমের সময় এটি বিশেষভাবে কার্যকর। মেথি ভাল শীতল প্রভাবের জন্য জলে যোগ করা যেতে পারে। লেবু, কমলালেবু, আপেল বা পুদিনা পাতার মতো কাটা বা টুকরো করা ফল মিশিয়েও জলে ফ্লেভার আনা যেতে পারে।
2. ডাবের জল
ডাবের জল শিশুদের উপযোগী প্রাকৃতিকভাবে উপলব্ধ একটি সতেজ পানীয়। এটি পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ, যেগুলি সরীরের আয়নিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। তীব্র শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা পুষ্টি হ্রাসের সময় ডাবের জল পর্যাপ্ত হাইড্রেশন নিশ্চিত করতে পারে। ডায়রিয়ার মতো অসুখের সময়ও ডাবের জল কার্যকর। এটি দেহ থেকে হারিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইটকে পুনরায় পূরণ করতে পারে। এটি শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়।
3. বাটারমিল্ক
বাটারমিল্ক এমন একটি দুগ্ধজাত দ্রব্য যা জল ছাড়াও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। এটি সম্পূর্ণ দুধের চেয়ে বেশি সহজে হজম হয় এবং এতে অনেক কম ফ্যাট থাকে। এ ছাড়া এটি ল্যাকটিক অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা ল্যাকটোজ হজমের জন্য এবং ত্বক ও চুলের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। বাটারমিল্ক একটি শিশুর বৃদ্ধির জন্য অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য পানীয় কারণ এটি শক্তিশালী হাড় এবং পেশীগুলির জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। এটি অ্যাসিডিটি এবং বুকে জ্বালাপোড়াভাবের প্রাকৃতিক প্রতিকারও বটে।
4. মিষ্টি ছাড়া দুধ
মিষ্টি ছাড়া দুধ ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা পেশী, হাড় ও দাঁতের সুস্থ বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও মনে রাখবেন যে দুধে্র কম ফ্যাটযুক্ত উপাদান আপনার সন্তানের জন্য আদর্শ। তাই দুধকে স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর রাখতে দুধে চিনি যোগ করবেন না বা প্রয়োজনে খুব কম চিনি যোগ করবেন। চিনি দুধের স্বাদ পরিবর্তন করার পাশাপাশি ক্যালোরি যোগ করে যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে হ্রাস করা উচিত।
যদি আপনার শিশু দুধের ব্যাপারে খুব বেশি বিরক্ত হয় বা দুধের স্বাদ অপছন্দ করে, তাহলে আপনি এটিকে আরও সুস্বাদু করতে গুঁড়ো বা পাউডার বানানো ড্রাই ফ্রুট (বিশেষ করে আমন্ড) যোগ করতে পারেন।
5. মিল্কশেক
মিল্কশেক একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং আপনার শিশু যদি খাবার খাওয়ার সময় খুব ব্যস্ত থাকে তবে দ্রুত সেবন করা যেতে পারে। তবে এটা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়। ডুমুর, কলা, আম, কাস্টার্ড অ্যাপেল এবং পেয়ারা, পাশাপাশি গাজর ও বিটরুটের মতো সবজি দিয়ে মিল্কশেক তৈরি করা যায়। এগুলো বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট, বিশেষ করে ভিটামিন C, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদিতে ভরপুর, যেগুলি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সেই অবদান রাখার পাশাপাশি তরলের পরিমাণ পূরণে সাহায্য করে। এ ছাড়া, আপনার শিশু যাতে বেশি করে গোটা ফল ও সবজি খায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন, কারণ এগুলো ফাইবারের ভালো উৎস।
6. হার্বাল টি
কয়েক ধরনের হার্বাল টি যেমন লেমনগ্রাস এবং পুদিনা শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং মিষ্টি পানীয়ের ভাল বিকল্প। এগুলির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং বিশেষ করে শিশু যদি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে এগুলি তাকে স্বস্তি দিতে পারে।
7. স্যুপ
টাটকা প্রস্তুত সবজি এবং মাংসের স্যুপ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির মতো প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। তবে যাতে কম নুন, মশলা এবং ঘন করার এজেন্ট (ক্রিম বা কর্ন-স্টার্চ) ব্যবহার করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, কারন এভাবেই স্যুপের পুষ্টিগুণের সাথে আপস করা হয় না।
শেষ কথা
আপনার শিশুকে উপরে উল্লিখিত স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলি খাওয়ানো ছাড়াও, সোডা বা মিষ্টি জাতীয় পানীয়গুলির গ্রহণ সীমিত করা নিশ্চিত করুন। এগুলো কেনার আগে সব সময় লেবেলে লেখা চিনির পরিমাণ ও ক্যালরির পরিমাণ দেখে নিন। মিষ্টি দুধ বা মিষ্টি চাও এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্কসের মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলি খাওয়াও সীমিত করা উচিত, কারণ এগুলি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে যা হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ বাড়ায়, উদ্বেগ বৃদ্ধি করে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই, আপনার সন্তানের জন্য সেরা স্বাস্থ্য পানীয় সম্পর্কে জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন এবং তারপর তাকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য একটি স্মার্ট প্ল্যান তৈরি করুন।
আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠা ও গ্রোয়িং আপ মিল্ক সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন https://www.nestle.in/brands/nestle-lactogrow
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান