বর্ষাকাল বাচ্চাদের জন্য খুব সুন্দর একটি সময় কারণ এইসময়ে তারা বন্ধুদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজে, চারিদিকে জল ছেটায়, কাগজের নৌকা নিয়ে খেলে, এবং সন্ধ্যেবেলায় গরম গরম এবং সুস্বাদু স্ন্যাক্স খেতে চায়। এবং স্কুল যদি ছুটি ঘোষণা করে, তবে তাদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। যদিও, বর্ষাকাল তার সঙ্গে স্বাস্থ্যের চিন্তাগুলিকেও নিয়ে আসে।
গর্তের নোংরা জল, অস্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার, এবং মশা ও পোকার বিস্তার জ্বরের ঝুঁকি, পাকস্থলীর সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, এবং সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। বাচ্চারা এইসময়ে ভাইরাসজনিত, ব্যাকটেরিয়াজনিত এবং ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই কারণে বাচ্চাদের সঠিক প্রকারের খাবার এবং পানীয় দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আপনাকে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু নির্দেশ এখানে দেওয়া হল।
- স্যুপের ক্ষমতা: এক বাটি ভেজিটেবিল স্যুপ আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবার প্রদান করার ক্ষেত্রে আদর্শ। এতী ঠাণ্ডা লাগা, কাশি, এবং ফ্লু-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আরাম দিতে সাহায্য করে। যতটা সম্ভব রঙিন এবং ঋতুকালীন সবজি অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। আমিষভোজী শিশুদের জন্য এক বাটি চিকেন স্যুপ একটি বিকল্প হতে পারে। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের গ্রহণকে নিশ্চিত করে এবং আপনার শিশুর বৃদ্ধির ধরণ ও ইমিউন ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামের দুধ কিংবা উষ্ণ লেবু জল এমনকি স্ট্যু ও শরবতও এই ঋতুর জন্য আদর্শ।
- প্রোটিন হল চাবিকাঠি: একইভাবে, মুসুর ডাল, শিম এবং ডালের মতো প্রোটিনের উৎসসমূহ আপনার শিশুকে সংক্রমণ এবং জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। এগুলি দিয়ে তৈরী স্যুপ এবং ডাল ভাত কিংবা রুটি সহযোগে পরিবেশন করা হলে তা পুষ্টিকর এবং পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
- হার্বগুলির ব্যাপারে ভুলে যাবেন না: বর্ষাকালে হার্বাল পানীয়গুলি কেবলমাত্র আরামদায়কই নয়, বরং অনেক সাধারণ অসুস্থতার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবেও কাজ করে। আপনার শিশুকে উষ্ণ, টোস্টি এবং সক্রিয় রাখতে হলে আদা, হলুদ, তুলসী পাতা, লবঙ্গ, অথবা দারুচিনির মতো মশলা এবং হার্বকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। এই উপাদানগুলি গলা ব্যথা এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসার জন্যও পরিচিত। এগুলি ইমিউনিটিও বাড়িয়ে তোলে।
- ফল প্রদান করুন: বর্ষাকালে মৌসুমী ফলই হল সঠিক পছন্দ। খাওয়ার জন্য আপেল, কলা, নাশপাতি, ডালিম এবং পেঁপে সবথেক ভালো বিকল্প। এর মধ্যে থাকা ফাইবার এবং ভিটামিন ডি সহজভাবে পাচন এবং ভালো ইমিউনিটির বিষয়টিকে নিশ্চিত করে।
- পুষ্টিকর বাদাম যোগ করুন: আমন্ড এবং আখরোটের মতো বাদাম তথা সিয়া এবং ফ্লেক্সের মতো বীজ নিউট্রিয়েন্টের দুর্দান্ত ভাণ্ডার। ডুমুর এবং খেজুরের মতো কিছু শুকনো ফলও এই তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মজুত করা সহজ এবং শিশুর খাদ্যাভ্যাসেও যুক্ত করা যেতে পারে।
- বেশি রসুন ব্যবহার করুন: উপরের বেশিরভাগ খাবারের মতোই, রসুনও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং মেটাবলিজমের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। স্ট্যু, কারি, ডাল, স্যুপ এবং অল্প-তেলে ভাজা খাবারগুলোকে সুস্বাদু, সুগন্ধযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর করার জন্য আপনি কুচানো কিংবা কিমা করা রসুন ব্যবহার করতে পারেন।
ওপরের পরামর্শগুলি মনে রাখা ছাড়াও, নিরাপদে মজুত করার বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য পরিষ্কার এবং নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে কাঁচামাল এবং উপাদান কেনার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করুন। যেহেতু বর্ষাকালে আর্দ্রতা একটি সাধারণ সমস্যা, তাই খাবারে জীবাণুর বৃদ্ধিকে ঠেকাতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অবশ্য প্রয়োজনীয়। তাই, খাবারকে তাজা অবস্থায় আনতে হবে এবং দ্রুত ব্যবহার করে ফেলতে হবে। খাবার তৈরির সময়ে, উপাদানগুলো ফাঙ্গাস কিংবা ছত্রাকের দ্বারা দূষিত না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। কম তাপমাত্রায় তৈরি হওয়া জীবাণুর সংক্রমণকে ঠেকাতে সবসময় গরম খাবার পরিবেশন করতে চেষ্টা করুন। মশলা হল একটি ভালো প্রিজারভাটিভ এবং সহজে নষ্ট হয় না।
বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্ক সকলকেই নিজস্ব স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিৎ। খাবার খাওয়ার আগে ও পরে এবং খেলাধুলোর পরে অবশ্যই হাত ধুতে হবে। আবার, আপনার বাচ্চার মতোই মশাও বৃষ্টি ভালোবাসে। সুতরাং, ভেক্টর-বাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধকগুলি হাতের কাছে রাখুন। আপনার শিশুটি যথেষ্ট পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন। এটি তার বিপাকের হার বৃদ্ধি করবে এবং ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক আলস্যকে কমিয়ে দেবে। অনেক গবেষণায় বলে যে শারীরিক সক্রিয়তা স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখে।
আপনার শিশুর বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনার ব্যাপারে আরও জানতে www.nangrow.in-এ দেখুন।