বাচ্চারা লাগামছাড়া ভোজনকারী হয়ে ওঠলে বাবা-মায়ের পক্ষে উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সমস্ত প্রধান গ্রুপের খাবারের সাথে সুষম ডায়েট মেনে চল্লা প্রয়োজন। বাচ্চার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল এবং ভিটামিন থাকা উচিত এবং যদি আপনার বাচ্চা খাদ্য সম্পর্কে আগ্রহী না হয়, তাহলে এটি সম্পন্ন করা যাবে না। সুতরাং, এখানে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো এগুলি আপনাকে আপনার বাচ্চার ঝামেলাপূর্ণ খাওয়ার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।
- আপনার সন্তানের খাওয়া দাওয়ার আচরণ খাওয়ার পরিবেশের উপরও নির্ভর করে। সুতরাং, খাবারের সময় আনন্দ মনে থাকুন এবং ইতিবাচক হবার চেষ্টা করুন এবং ছোট ছোট বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
- আপনার সন্তানের খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে আপনি যে লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকুন এবং বাচ্চারা সামান্য অগ্রগতি করলেও ওদের প্রশংসা করুন।
- আপনার শিশুকে কখনই একটি নতুন খাবার খেতে বাধ্য করবেন না, এবং বাচ্চাদের খাবার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন। আপনি যদি আপনার সন্তানের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিকে মনোযোগ দেওয়া বন্ধ করেন তবে তারা সঠিক আচরণ করবে এমনটা হবার সম্ভাবনাো রয়েছে।
- স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি পরিবেশন করার সময় পরিবেশটিকে আকর্ষণীয় এবং মজাদার করে তুলুন। আপনি স্যান্ডউইচগুলি মজার আকারে কাটতে পারেন বা অমলেট, কাটা টমেটো, গাজর ইত্যাদি দিয়ে মুখোরোচক খাবার তৈরি করতে পারেন।
- টেলিভিশন দেখার পরিবর্তে, খাওয়ার সময় একে অপরের সাথে কথা বলে বাচ্চাকে খাওয়াতে থাকুন। আপনার শিশুকে তার খাবার শেষ করার জন্য একটি সীমিত সময় দিন, এবং যদি সে এটি শেষ না করে তবে প্লেটটি সরিয়ে ফেলুন এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাকে পরবর্তী স্ন্যাক বা খাবার দেবেন না।
- যদি আপনার বাচ্চা খাবারের জন্য চুপচাপ বসে থাকতে পছন্দ না করে তবে তাদের শান্ত করার জন্য প্রতিটি খাবারের আগে তাদের কিছুটা সময় দিন এবং আপনি এই সময়টি তাদের হাত সঠিকভাবে ধোয়ার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার সন্তানকে দেওয়া বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে থেকে তাঁর পছন্দেরটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন। কিন্তু নিশ্চিত করুন যে খুব বেশি বিকল্প নেই, অন্যথায় সেগুলি অভিভূত হয়ে উঠতে পারে।
- খাবার তৈরির সময় আপনার শিশুকে তাতে সামিল করুন। উদাহরণস্বরূপ, তারা কী খাবে তা বেছে নিতে পারে, যেমন ধুয়ে রাখা ফল এবং শাকসবজি এবং সালাদ মিশ্রিত করতে পারেন।
- শান্ত থাকাটাও উচ্ছৃঙ্খল ভোজনকারীর সাথে মোকাবিলা করার মূল চাবিকাঠি। কখনও কখনও, বাচ্চাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ তাদের স্বাধীনতাকে জাহির করার এবং আপনার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার চেষ্টা করার একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
- আপনি আপনার বাচ্চাদের তাদের প্লেটে অল্প পরিমাণে নতুন খাবার যোগ করে তাদের পছন্দের খাবারের মিশ্রণ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। যেমন, ব্রোকলির একটি ছোট টুকরা তাদের ইতিমধ্যে প্রিয় আলু মাখার সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।
- তাদের নতুন খাবার স্পর্শ করতে, গন্ধ নিতে বা চাটতে উৎসাহিত করুন। বাচ্চাদের প্লেটে রঙ বেরংয়ের আকর্ষণীয় বিভিন্ন আকারর খাবার দিয়ে তারা কী খেতে চান তা বেছে নিতে বলুন।
- আপনার বাচ্চাদের এমন খাবার দিতে থাকুন যা তারা অপছন্দ করে কারণ তারা কোনও না কোন দিন তারা এটি চেষ্টা করতে পারে।
- আপনার পরিবার যেমনটা খাবার খায়, ঠিক তেমনটা উপযুক্ত অংশের আকারে খাবার বাচ্চাকে পরিবেশন করুন। বাচ্চার খাবারে লবণ যোগ করা এড়িয়ে চলুন এবং সর্বদা পুষ্টির লেবেলগুলি পরীক্ষা করুন।
- নিশ্চিত হয়ে নিন যে তারা সমস্ত প্রধান খাদ্য গ্রুপের খাবার খায়, যেমন ফল ও সবজি, আলু, রুটি, ভাত, পাস্তা এবং অন্যান্য স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট, দুধ বা এর বিকল্প, মটরশুটি, ডাল, মাছ, ডিম, মাংস এবং অন্যান্য প্রোটিন।
- যদি বাচ্চারা দই পছন্দ না করে তবে পরিমিতভাবে যেকোন রেসিপিতে পনির মেশান। খাবারকে মুখোরোচক বানাতে বিভিন্ন ভেষজ এবং মশলা মেশানোর চেষ্টা করুন।
- আপনার বাচ্চা যদি নতুন খাবার খেতে না চায়, তাহলে ওদের শাস্তি দেবেন না, কারণ আর কখনোই ওরা নতুন খাবার দেখলে খেতে চাইবে না। এছাড়াও, বাচ্চাদের ক্যান্ডি দিয়ে ঘুষ দিয়ে নতুন খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এর ফলে ওদের মনে হবে যে নতুন খাবার চেষ্টা করা একটি কঠিন কাজ এবং ওরা খাবারের প্রতি আরও আকৃষ্ট হবে।
- আপনার শিশু গোটা দিনটাতে পর্যাপ্ত খাবার খেয়েছে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে, বাচ্চারা এক সপ্তাহে কতটা খেয়েছে তার মূল্যায়ন করুন।
- আপনার শিশু যদি চটপটে এবং সুস্থ থাকে, তাহলে তার মানে সে ভালো খাচ্ছে। আপনার বাচ্চাদের খুব বেশি স্ন্যাকস খেতে দেবেন না, কারণ দিনে দুটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস ওর পক্ষে যথেষ্ট।
- আপনি যখন চান যে আপনার শিশু নতুন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে চায় তখন ওদের সত্যিকারেই খিদে পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। বাচ্চাদের খাবারে কেবল জল দিন এবং খাবারের সাথে 100% রস বা দুধ খেতে দিন। খাবারের মাঝে দুধ দিলে তাদের পেট ভরে যায়।
- আপনার শিশু যদি ওর জন্য তৈরি করা খাবার না খায়, তবে বাচ্চার জন্য আলাদা খাবার তৈরি করবেন না। বাচ্চাকে আপনার এবং আপনার পরিবারের সাথে খেতে উৎসাহিত করুন।
- এছাড়াও আপনি আপনার সন্তানের দুপুরের খাবারের বক্সে ফুলকপি এবং অন্যান্য সবজি দিয়ে দারুণভাবে পরিবেশন করতে পারেন। আপনি রাতের খাবার হিসাবে সকালের বিকল্পগুলিও বিকল্পগুলিও দিতে পারেন।
- পুরষ্কার হিসাবে বাচ্চাকে মিষ্টি দেওয়া বা বাচ্চাকে মিষ্টিজাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে না দেওয়ার ফলে ও ভাবতে পারে যে এটি একটি বিশেষ খাবার যা থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। সপ্তাহে একবার বা প্রতি দুসপ্তাহে একবার রাতের বেলায় মিষ্টি খেতে দিনবা মিষ্টির বিকল্প হিসাবে ফল বা দই দিন।
- আপনার বাচ্চা যদি কোনও নির্দিষ্ট খাবার খেতে পছন্দ করে, তাহলে ওকে আচারের স্বাদে রান্নার রেসিপিতে অনুরূপ স্বাদ বা টেক্সচারযুক্ত অন্যান্য খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। ধরুন, বাচ্চারা যদি বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসে, তাহলে পরের বারে ওদের খিচুড়ি এবং ভাজা শাকসবজি খেতে দিন।
- তাদের অপরিচিত খাবার যা টক বা তেতো হতে পারে এবং পরিচিত খাবার মিষ্টি বা নোনতা খাবার খেতে দিন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ব্রোকলি (তেতো) দিতে পারেন সঙ্গে দিন গ্রেটেড পনির (নুন) যা শিশুর স্বাদ বাড়াবে।
আপনি যদি মনে করেন যে আপনার বাচ্চার খাবার না খাওয়ার স্বভাব ওর বৃদ্ধি এবং বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাহলে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। তারা আপনার সন্তানের বৃদ্ধির চার্ট ট্র্যাক করতে পারে। এমনকি ওরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাচ্ছে কিনা তা দেখতে আপনি একটি খাবারের চার্ট বা ফুড লগ রাখতে পারেন। সর্বদা মনে রাখবেন, শিশুদের খাওয়ার অভ্যাস রাতারাতি বদলায় না, তাই স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে তাদের শেখানোর জন্য প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।