আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তার সুস্থ জীবন যাপনের লড়াইয়ের অন্যতম সেরা হাতিয়ার এবং এটি আপনার তরফে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যের মাধ্যমে রক্ষা করা প্রয়োজন। তাই এখানে এমন খাবারের একটি তালিকা রয়েছে যা আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে যদি তার বয়স 5 বছরের বেশি হয় বা সে তারুণ্যের চৌকাঠে থাকে।

তবে একটু অপেক্ষা করুন, সবার আগে বুঝে নেওয়া যাক কেন এই খাবারগুলি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য এত জরুরি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার কেন জরুরি?

অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যেমন ঘুমের অভাব, চাপ এবং ব্যায়ামের অভাব। তবুও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা একমত যে সঠিক ডায়েট হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে একটি যা একটি সুস্থ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং অপুষ্টিতে ভোগে তারা সংক্রমণের জন্য বেশি ঝুঁকিতে থাকে, যা পুষ্টি এবং খাদ্যের মধ্যে একটি স্পষ্ট যোগসূত্র প্রদান করে।

স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্যের অংশ হওয়া দরকার এমন কিছু অত্যাবশ্যক অনাক্রম্যতা-নির্মাণকারী মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হল জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন, কপার, ফোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন A, B6, C এবং E। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলিতে এই নিউট্রিয়েন্টগুলি রয়েছে এবং বাচ্চাদের জন্য সেরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

1. কলা

কলা শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কারণ এতে ভিটামিন B6 রয়েছে। কেন না B6.-এর মাঝারি থেকে তীব্র ঘাটতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে খর্ব করে দিতে পারে। কলা বাচ্চাদের জন্য একটি দুর্দান্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার এবং তারা এটিকে সম্পূর্ণ ফল হিসাবে গ্রহণ করতে পারে বা আপনি এটিকে কেটে সিরিয়াল বা স্মুদিতে মেশাতে পারেন।

2. রাঙা আলু

রাঙা আলুতেও ভিটামিন B6 আছে, যা ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং ভিটামিন A রয়েছে।

3. ছোলা

ছোলা ভিটামিন B6 এর পাশাপাশি জিঙ্কেরও বড় উৎস। মাঝারি বা গুরুতর জিঙ্কের ঘাটতি মানুষের মধ্যে লিম্ফোসাইট এবং ফ্যাগোসাইট উভয় কোষের কার্যকারিতাই ব্যাহত করতে পারে এবং ছোলা এটি প্রতিরোধ করার একটি দুর্দান্ত উপায়।

4. আমন্ড

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবারগুলোর মধ্যে আমন্ড অন্যতম। এগুলি আয়রন, ভিটামিন E এবং জিঙ্কের একটি দুর্দান্ত উৎস, যার সবগুলিই আরও ভাল অনাক্রম্যতার সাথে যুক্ত।

5. আখরোট

আখরোট জিঙ্কের আরেকটি বড় উৎস। আমন্ডের মতো বাদাম এবং আখরোট সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো দিকটি হল যে এগুলি সহজেই আপনার সন্তানের খাদ্যতালিকায় মিড-মিল স্ন্যাক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

6. দই

দইতে ল্যাকটোব্যাসিলাস বা বিফিডোব্যাকটেরিয়াম প্রজাতির নন-প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা সাধারণত প্রোবায়োটিক হিসাবে পরিচিত। প্রোবায়োটিকগুলি বিশেষত ডায়রিয়ার মতো ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে থাকে।

7. রাজমা (কিডনি বিনস)

রাজমা বা কিডনি বিনস জিঙ্ক এবং আয়রনের বড় উৎস। এছাড়াও, এগুলি বাচ্চাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং মোটামুটি বহুমুখী খাবার— তাই আপনি বিনস এবং নাচোস বা রাজমা-চাওয়াল যাই তৈরি করুন না কেন, আপনার বাচ্চাদের ডায়েটে এই পুষ্টি-ঘন খাবার যোগ করা উচিত।

8. গুড়

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুড় দারুণ একটি খাবার। এটি আয়রনের অন্যতম সেরা উৎস। তাছাড়া এর মিষ্টি স্বাদ বাচ্চাদের খুবই পছন্দের। ঘি, রুটি এবং গুড়ের একটি সাধারণ স্ন্যাক্স টিফিনের পক্ষে চমৎকার আইডিয়া।

9. কুমড়ো

কুমড়া ভিটামিন A-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন A সাপ্লিমেন্টগুলি ডায়রিয়া, হাম এবং অন্যান্য কিছু রোগের বিরুদ্ধে সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পরিচিত। যদিও অতিরিক্ত পরিমাণ বিষাক্ততার কারণ হতে পারে, তাই এটি একটি প্রাকৃতিক, সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে এটি গ্রহণ করা সর্বদা ভাল।

10. আমলকি

আমলকি ভিটামিন C-এর অন্যতম সেরা উৎস। এটি এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সাধারণ সর্দি-কাশির সময়কাল কমিয়ে দেয়।

11. পেয়ারা

পেয়ারা হল ভিটামিন C-র আরেকটি বড় উৎস যা আপনার বাচ্চার ডায়েটে সহজেই মিড-মিল স্ন্যাক্স হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

12. পেঁপে

পেঁপে আরেকটি দারুন ব্রেকফাস্ট ফুড বা স্ন্যাক। এটি সামগ্রিক হজমের জন্য উপকারী হওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন A-এর একটি প্রাকৃতিক উৎস।

13. মাস্ক মেলন

মাস্ক মেলন প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ভিটামিন A-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটির এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ ও স্বাদ আছে, তাই ফ্রুট স্যালাডে যোগ করা যেতে পারে।

14.সবুজ শাক-সবজি

যদিও এগুলি সবসময় বাচ্চাদের কাছে জনপ্রিয় নাও হতে পারে, তবে আপনাকে অবশ্যই তাদের ডায়েটে পালং শাক, বাঁধাকপি এবং লেটুসের মতো সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলি ভিটামিন C, ভিটামিন A, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস, যা এগুলিকে সবচেয়ে পুষ্টিকর-ঘন খাবার তৈরি করে।

15.কিসমিস

কিশমিশ আয়রনের আরেকটি বড় উৎস, অন্যদিকে এতে কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো অন্যান্য পুষ্টিও রয়েছে।

16.গাজর

গাজর ভিটামিন A-এর একটি সুপরিচিত উৎস এবং দীর্ঘদিন ধরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতির জন্য অন্যতম সেরা খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

17.কালো চানা

আয়রনের সেরা উৎসগুলির মধ্যে অন্যতম কালো চানা দিয়ে বানানো তরকারি রুটি বা ভাত সহযোগে একটি দুর্দান্ত দুপুরের খাবার তৈরি করে।

18. সাইট্রাস ফল

কমলালেবু, সুইট লাইম এবং আঙ্গুরের মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন C-এর সেরা উৎসগুলির মধ্যে একটি, যা সাধারণ সর্দি-কাশির প্রাকৃতিক প্রতিষেধক প্রদান করে।

19.রসুন

রসুন সহজেই ঘরে রান্না করা খাবারে যোগ করা যায় এবং এটি সেলেনিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, প্রদাহ কম করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

20.হলুদ

হলুদের একটি বিশিষ্ট যৌগ কারকিউমিন তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, এবং তাই এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধক। তাছাড়া, সুখবরটি হল হলুদকে সহজেই স্যুপ ও স্টুতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

এই চমৎকার অনাক্রম্যতা-বর্ধক খাবারগুলির প্রতি নজর রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলি আপনার সন্তানের দৈনন্দিন খাদ্যে যোগ করা হচ্ছে।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও জানতে www.nangrow.in -এ যান