একজন মা হিসেবে, আপনার শিশুটি তার সঠিকভাবে বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য যথেষ্ট পুষ্টি পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আপনার চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু, আপনার শিশুর খাদ্যাভ্যাসকে বোঝা আপনার জন্য কষ্টকর হতে পারে। সে কোনোদিন অনেকটা বেশি খেয়ে নিতে পারে, আবার অন্য কোনোদিন কিছু নাও খেতে পারে। যদিও এই আচরণটি খুবই স্বাভাবিক, তবুও আপনার বাচ্চাটি যথেষ্ট পরিমাণে খাচ্ছে কি না সেটা জানা প্রয়োজন।
আপনার সন্তানের খাবারের মূল্যায়ণ
আপনার শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাচ্ছে কিনা তা জানার জন্য বিষয়ভিত্তিক এবং উদ্দেশ্যমূলক পরিমাপ ব্যবহার করুন। বিষয়ভিত্তিক পরিমাপের মধ্যে লক্ষ্য করতে হয়:
- আপনার শিশুটি সকল ফুড গ্রুপগুলি খাচ্ছে অথবা কোনো একটি বিশেষ গ্রুপ খেতে অস্বীকার করছে কিনা
- সে নতুন খাবার খাচ্ছে নাকি পুরনো খাবারগুলিতেই আটকে আছে
- খাবার শেষ করার পরেও সে নিয়মিত ক্ষুধার্ত থাকছে কিনা
- সে ঠিকভাবে ঘুমোচ্ছে এবং মলত্যাগ করছে কিনা
- তার জামাকাপড় ছোটো হয়ে যাচ্ছে কিনা
উদ্দেশ্যমূলক পরিমাপের ক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার বৃদ্ধি, বয়সজনিত ওজন ও উচ্চতার গ্রাফ এবং বিকাশের মাইলফকগুলি পর্যালোচনা করে সাধারণত কোনো ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়।
অপর্যাপ্ত পুষ্টির প্রভাব
আপনার শিশুটি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খায়, তবে সেটি অনেকভাবে তার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। একটি শিশুর মানসিক, সামাজিক, শারীরিক, এবং আচরণগত বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত পুষ্টির খারাপ প্রভাবগুলির মধ্যে থাকে:
- স্বল্প বৃদ্ধির
- স্থূলতা
- মেজাজের পরিবর্তন
- মনঃসংযোগ কমে যাওয়া
- রাজ বেড়ে যাওয়া
- মানসিক এবং শারীরিক আলস্য
- পেশীর শক্তি কম হওয়া এবং দাঁত ও হাড়ের বৃদ্ধিতে বিলম্ব হওয়া
- প্রথম শৈশবের দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া এবং ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের কারণে পেশির ক্র্যাম্প ধরা
- মুখের ভেতরের আস্তরণে, জিভে জ্বলন হওয়া এবং মুখের আলসার হওয়া
যদি আপনি মনে করেন যে আপনার শিশুটি ঠিকভাবে খাচ্ছে না, তবে তার জন্য কিছু সাহায্যকারী পরামর্শ
- প্রয়োজনীয় অনুপাতে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রদান করা একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব এবং আপনার শিশুর ভূমিকা হচ্ছে সে কতটা খেতে পারবে সেটা নির্ধারণ করা। সর্বোপরি, আপনার বাচ্চাকে 3 টে বাঁধাধরা আহার এবং কুচানো সবজি, দই, আপেলের টুকরো অথবা বাদামের বাটারের সঙ্গে গোটা-শস্যের ক্র্যাকার সহযোগে 2টো কিংবা 3টে স্ন্যাক্স প্রদান করা প্রয়োজন।
- যদি সে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রধান আহারটি গ্রহণ না করে, তবে স্ন্যাক্সটি তার পুষ্টির যে কোনো পার্থক্যকে মিটিয়ে দিতে সাহায্য করে। যদি সে কোনো একদিন সব খাবার খেয়ে নেয় এবং পরের দিন ততটা না খায়, তাহলে চিন্তা করবেন না। দীর্ঘ সময়ে এটি সাধারণত নিজেকে পুষিয়ে নেয়।
- আপনার শিশুর আহারে সুষম ক্যালোরি বজায় রাখতে হলে, বেশী খাবার দেবেন না। তার পাত্রের অর্ধেক ফল এবং সবজি দিয়ে পূর্ণ করে দিন। আপনি ফ্যাটবিহীন অথবা স্বল্প-ফ্যাটযুক্ত দুধও বিকল্প হিসেবে নিতে পারেন।
- মিষ্টি পানীয়ের চাইতে স্যুপ, পাঁউরুটি, কম সোডিয়ামযুক্ত প্যাকেটজাত খাবারগুলি বাছাই করে আপনার শিশুকে দিন। তারা কত সংখ্যক এবং কত রকমের স্ন্যাক্স খাচ্ছে, সেটিও গুনে রাখুন। যেহেতু তাদের পাকস্থলী বড়ো নয়, তাই তারা বেশী খাবার খেতে পারে না, তাই তাদের স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স পছন্দ করতে দিন।
- আদর্শগতভাবে, আপনার বাচ্চাকে 6 বার শস্য, 3 বার সবজি, 2 বার ফল, 2 বার প্রোটিন, 6 আউন্স দুগ্ধজাত দ্রব্য অথবা অন্যান্য ক্যালসিয়ামের উৎস, এবং খুব অল্প পরিমাণে ফ্যাট এবং মিষ্টি পরিবেশন করুন।
- সাধারণত যেটা হয় তা হল, অভিভাবকেরা তাদের শিশুর খাবারে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রোটিন যুক্ত করে দেন, এবং তারপর চিন্তা করতে থাকেন যে তাদের শিশুটি খাবার শেষ করছে না। মনে রাখতে হভবে যে একটি বাচ্চার অংশ হবে একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্কের অংশের এক-চতুর্থাংশ কিংবা অর্ধেক। এটা মাথায় রেখে, তাদের প্রতিটি জন্মদিনে প্রতিটি ফুডগুপ থেকে কেবল একটি টেবিল-চামচ প্রদান করুন। যেমন, একজন 1 বছর বয়সীর জন্য 1 টেবিল-চামচ সবজি কিংবা শস্য পরিবেশন করতে হবে, এবং একজন 3 বছর বয়সী শিশুর জন্য, 3 টেবিল-চামচ সবজি এবং অন্যান্য ফুড গ্রুপ পরিবেশন করতে হবে।
- যখন আপনার বাচ্চা খেতে ইচ্ছুক নয়, তাদের পেট ভরে গেলে ভুলিয়েভালিয়ে খাওয়াবেন না। নাহলে, তারা কখনোই ক্ষিদের অনুভূতি এবং তৃপ্তির সংকেতগুলো বুঝবে না।
- যদি তারা না খায়, তাহলে তারা কতটা দুধ বা জুস খাচ্ছে, তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। অতিরিক্ত জুস তাদের পাকস্থলী ভরে দিতে পারে এবং খাওয়ার প্রবৃত্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে। সুতরাং, পানীয়তে সীমা নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন এবং দেখুন যে তাদের খাওয়ার প্রবৃত্তির কীভাবে উন্নতি ঘটছে।
- একটি বাচ্চার স্বাস্থ্যকর খাওয়ার আচরণকে প্ররোচিত করার জন্য খাবারের সঠিক পরিবেশও প্রয়োজনীয়। আহারের সময়গুলিকে আনন্দময় করে তুলুন এবং আপনার বাচ্চাকে দেখান যে আপনার রান্না করা খাবারগুলো খেতে আপনিও ভালবাসেন।
- আপনার বাচ্চা যদি নতুন খাবার খেতে না চায়, তবে তাদের শাস্তি দিয়ে ওই খাবারগুলিকে খারাপ ভাবে বর্ণনা করবেন না। আপনার শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য ঘুষ দেবেন না, কারণ তখন স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণটি একটি কাজ হিসেবে পরিগণিত হবে।
- আপনাত বাচ্চাকে খাবার নিয়ে চাটতে, খেলতে এবং ছড়াতে দিন। তাকে নিজে নিজে খেতে দিন এবং সে যখন আর চাইছে না, তখন খাবার সরিয়ে নিন। পছন্দের পরিবর্তনের কারণে যদি সে নতুন খাবার খেতে অস্বীকারও করে, তবুও তাকে নতুন খাবার দিতে থাকুন।
- কোন খাবার বানানোর সময়ে কিংবা গ্রসারির জিনিস কেনার সময়ে আপনার বাচ্চাকেও সঙ্গে রাখুন। খাবারগুলিকে বিভিন্ন আকারে কেটে সেগুলিকে একটি মজার উপায়ে উপস্থাপন করুন এবং আপনার বাচ্চাকে সেগুলোর বিশেষ নাম দিতে দিন।
- ব্রকোলি অথবা ফুলকপির মতো জিনিসগুলি তাদের পছন্দ করে নিতে দিন এবং পুরনো পরিচিত খাবারের সঙ্গে নতুন খাবার মিশিয়ে দিন। আপনি তাদেরকে দই কিংবা হামাসের মতো স্বাস্থকর ডিপ দিতে পারেন।
যদি আপনার শিশু খাবার না খায়, তাহলে আপনার হতাশা দেখাবেন না, যাতে আপনার এই অসম্মতি তাদের সেগুলো বারবার করার কারণ না হয়ে ওঠে। যদি আপনার শিশু নিয়মিতভাবে খাবার অস্বীকার করে, তবে তার পিছনে কোন শারীরিক পরিস্থিত থাকতে পারে, এবং থখন কোন ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করলে সাহায্য পাওয়া যাবে।